রবিবার , এপ্রিল ২৮ ২০২৪
নীড় পাতা / উপ-সম্পাদকীয় / নাটোরে কামাল লোহানীর একদিন

নাটোরে কামাল লোহানীর একদিন

রেজাউল করিম খান:

আবু নঈম মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল খান লোহানী, সংক্ষেপে কামাল লোহানী। তাঁর বর্ণাঢ্য জীবনকাহিনী ইতিমধ্যেই আপনারা শুনেছেন। আমি শুধু নাটোরে সাংবাদিকদের এক অনুষ্ঠানে তাঁর আগমন উপলক্ষে কয়েকটি কথা উল্লেখ করতে চাই। তার পূর্বে জেনে নিই তাঁর রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে এক ঝলক।

কামাল লোহানী ছাত্রজীবনে রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। ১৯৫২ সালে বাংলা ভাষা আন্দোলনে জড়িত হন। ১৯৫৩ সালে এডওয়ার্ড কলেজে নুরুল আমিন ও অন্যান্য মুসলিম লীগ নেতাদের আগমনের বিরোদ্ধে শিক্ষার্থীদের এক প্রতিবাদী বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার কারণে গ্রেফতার হন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের রাজনৈতিক মঞ্চের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং অনেকের সাথে পুনরায় গ্রেফতার হন। তিনি শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দীন আহমদসহ তৎকালীন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে কারাবাস করেন। ১৯৫৫ সালের জুলাইতে জেল থেকে মুক্তি লাভ করে ঢাকা চলে আসেন এবং মার্ক্সবাদের সাথে জড়িত হন। এ সময় তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির রাজনীতি করতেন। ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসনের সময় অনেকর সাথে আত্মগোপন করেন। ১৯৬২ সালেও কারাবরণ করেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি তিনি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সদস্য ছিলেন।

ছবি : বাংলাদেশ সাংবাদিক সংগঠন, রাজশাহী বিভাগীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথি: কামাল লোহানী, সভাপতি: রেজাউল করিম খান

কামাল লোহানী নাটোরে আসেন ১৯৯৪ সালে। বাংলাদেশ সাংবাদিক সংগঠনের বিভাগীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথি হয়ে। জেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সভাপতিত্ব করি আমি। আয়োজকদের মধ্যে ছিলেন পাবনার শ্রদ্ধেয় রনেশ মৈত্র, আব্দুল মতীন খান, রবিউল ইসলাম রবি, হাবিবুর রহমান স্বপন, জয়পুরহাটের এডভোকেট নৃপেন্দ্রনাথ মন্ডল, তেজেশ চৌধুরী, রাজশাহীর শাহ আনিসুর রহমান, অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, দিনাজপুরের মতিউর রহমান, অধ্যাপিকা শাহানারা বেগম, ঈশ্বরদীর কামাল আহমেদ সিদ্দিকী, মোস্তাক আহমেদ কিরণ, স্থানীয়দের মধ্যে ছিলেন একেএম নজরুল ইসলাম, জুলফিকার হায়দার জোসেফ, নবীর উদ্দিন সরকার, নবীউর রহমান পিপলু, স্বপন দাস, আমিনুর রহমান টিপু, গোলাম মোস্তফা, শারফুল ইসলাম খোকন আরও অনেকে। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ছিলাম আমি রেজাউল করিম খান।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় কামাল লোহানী বলেন, “ছোট্ট এই বাংলাদেশে বর্তমানে সহস্রাধিক পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে। অথচ শতকরা দুইজনও নিয়মিত সংবাদপত্র পড়েন না। এদেশে এই অস্বাভাবিক কর্মটি কেন ও কিভাবে সংঘটিত হচ্ছে তা সংশ্লিষ্ট পন্ডিতদের গবেষণার বিষয়। জানা গেছে অনেকে আইনের হাত থেকে বাঁচার জন্য পত্রিকার মালিক হয়েছেন। সংবাদপত্র প্রকাশনার সাথে জড়িত হয়ে নাকি কালো টাকা সাদা করা যায়।
আমি বলেছিলাম, যেকোনও নির্যাতন-নিপীড়ন ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ও প্রতিরোধ মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। সাংগঠনিক দৃঢ়তা ও যোগ্য নেতৃত্বের কারণে কখনও কখনও এই প্রতিবাদ বিক্ষোভ দাবি আদায়ের অপ্রতিরোধ্য আন্দোলন-সংগ্রামে রূপান্তরিত হয়। বাংলাদেশ সাংবাদিক সমাজ বিভিন্ন লক্ষ্যে আন্দোলন করছে। অনেকাংশে সফলও হয়েছে। কিন্তু ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা ও থানায় কর্মরত সংবাদদাতারা আজও দেখেনি তেমন সাফল্যের মুখ।”

কামাল লোহানী গত ২০ জুন ৮৭ বছর বয়সে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মহাখালীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। শ্রদ্ধাবনত চিত্তে আমরা তাঁকে স্মরণ করি।

লেখক: সিনিয়ির সাংবাদিক ও কলামিস্ট

আরও দেখুন

নন্দীগ্রামে পুরোদমে চলছে বোরো ধান কাটা-মাড়াই

নিজস্ব প্রতিবেদক: বগুড়া জেলার শস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত নন্দীগ্রাম উপজেলা। এখন এই উপজেলায় পুরোদমে চলছে …