নিউজ ডেস্ক:
করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৮৬ বছর বয়সে মারা যান তিনি। ভাষাসৈনিক, সাংবাদিক, সংস্কৃতিজন কামাল লোহানী। বর্ণাঢ্য জীবনে অনেক পরিচয় তাঁর৷ দেশের শিল্পসংস্কৃতি অঙ্গনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব এই মানুষটি ভূষিত হয়েছেন একুশে পদকসহ নানা সম্মানে। তাঁর প্রয়াণে শূন্যতা তৈরি হয়েছে জাতির সংস্কৃতির দিগন্তে।
কামাল লোহানীর জন্ম সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার সনতলা গ্রামে। বাবা আবু ইউসুফ মোহাম্মদ মুসা খান লোহানী। মা রোকেয়া খান লোহানী।
কামাল লোহানী প্রথমে কলকাতার শিশু বিদ্যাপীঠে পড়াশোনা শুরু করেন। সাতচল্লিশে দেশভাগের পর ১৯৪৮ সালে পাবনা চলে আসে তার পরিবার। কামাল লোহানী ভর্তি হন পাবনা জিলা স্কুলে। ১৯৫২ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে। সেখান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন তিনি। এরপর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ইতি ঘটে তার।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে যোগ দেয়ার মাধ্যমে ছাত্রাবস্থায় কামাল লোহানীর রাজনীতিতে হাতেখড়ি। ১৯৫৩ সালে নুরুল আমিনসহ মুসলিম লীগ নেতাদের পাবনা আগমন প্রতিরোধে আন্দোলন গড়ে তোলায় পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষসহ অন্যদের সঙ্গে গ্রেপ্তার হন কামাল লোহানীও। ১৯ বছর বয়সে প্রথম কারাগারে যান তিনি। ‘৫৪ সালে আবারো গ্রেপ্তার হন। কারাবাসের সময় তিনি কমিউনিস্ট ভাবাদর্শে দীক্ষিত হন এবং আজীবন সেই আদর্শে অবিচল ছিলেন।
১৯৫৫ সালে গ্রেপ্তার হলে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে একই কারাকক্ষে বন্দিজীবন কাটান। সেই বন্দি দিনগুলোতে তিনি সান্নিধ্যে আসেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর।
কামাল লোহানী দৈনিক আজাদ, সংবাদ’, পূর্বদেশ’, দৈনিক বার্তা’সহ বিভিন্ন পত্রিকার কর্মরত ছিলেন। তিনি সাংবাদিক ইউনিয়নে দু দফায় যুগ্ম-সম্পাদক এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি হন। ছিলেন গণশিল্পী সংস্থার সভাপতি। ১৯৬২ সালে কামাল লোহানী সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ছায়ানট’-এর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে সাড়ে চার বছর এই পদে ছিলেন। এরপর মার্কসবাদী আদর্শে ১৯৬৭ সালে গড়ে তোলেন ‘ক্রান্তি’। ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পযর্ন্ত তিনি বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী’র সভাপতি ছিলেন।
১৯৬০ সালে দীপ্তি লোহানীকে বিয়ে করেন তিনি। তাদের দুই মেয়ে এক ছেলে। তারা হলেন, সাগর লোহানী, বন্যা লোহানী ও ঊর্মি লোহানী।। বেশ কয়েক বছর আগে প্রয়াত হন স্ত্রী দীপ্তি লোহানী ।
২০১৫ সালে কামাল লোহানী সাংবাদিকতায় একুশে পদক লাভ করেন।