নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
নাটোর সুগার মিলে আখ বিক্রি করে টাকা পাচ্ছেন না চাষিরা। চলতি মওসুমে এই চিনিকলে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার চষীর আখ বিক্রির বকেয়া রয়েছে প্রায় ২৬ কোটি টাকা বলে জানা গেছে।
নাটোর সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএফএম জিয়াউল হক ফারুক কৃষকের বকেয়া থাকার বিষয়টি স্বীকার করলেও পরিষোধের সুনির্দ্দিষ্ট দিনক্ষণ জানাতে পারেননি।
জানা গেছে, নাটোরে দুটি মিলের অধীনে এ অঞ্চলের আখ চাষিদের আখ ক্রয় করা হয়। নাটোর সুগার মিলের ৮টি সাবজোনের মোট ৪৭টি কেন্দ্রে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার আখচাষি তাদের আখ বিক্রি করেন। কিন্তু গত ২৬ জানুয়ারী নাটোর সুগার মিল সবশেষ আখ বিক্রির টাকা দিলেও এরপর আর কোন টাকা পাননি চাষিরা। জেলার দুটি চিনিকলের উপর নির্ভর করে এখানকার প্রধান ফসল হয়ে উঠেছে আখ। আখ বিক্রি করেই চাষীরা তাদের সকল প্রয়োজন মেটান। আজ এই আখই কৃষকের গলার কাটা হয়ে বিধেছে। তাছাড়া করোনা ভাইরাস সংক্রমন রোধে বাড়িতে অবস্থান করতে গিয়ে আয় রোজগার বন্ধ হয়ে পড়া এবং আখ বিক্রির টাকা না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন এসব চাষীরা।
উপজেলার ক্ষিদ্রালঞ্চি গ্রামের হাসান আলী, বাজিতপুর গ্রামের হাবিবুল্লা, ফাগুয়াড় দিয়াড় মোশাররোফ হোসেন প্রতিবেদককে জানান, বাগাতিপাড়া উপজেলার কৃষকদের একটি বড় অংশ নাটোর সুগার মিলে আখ বিক্রি করে থাকেন। এই বছরও তারা আখ বিক্রি করেছেন। কিন্তু আড়াই মাস হলো প্রায় দুই তৃতীয়াংশ টাকা বকেয়া রয়েছে। যা দিয়েছে তার আবার সিংহভাগই লোন বাবদ কেটে নিয়েছে। এখন বাঁকি টাকা না পাওয়ায় ঋণ করে শ্রমিকের মুজুরির টাকা, পরিবহনের ভাড়া পরিশোধ করলেও জমির পরিচর্যা, ছেলে-মেয়েদের লেখা পড়ার খরচ ও সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এর ওপরে করোনা দূর্যোগে ঘরে বসে অন্যান্য আয়ও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। ফলে পাওনা টাকার অভাবে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আখ ক্রয় কেন্দ্রের এক কর্মকর্তা জানান, আখ ক্রয় কেন্দ্রের পূঞ্জি অনুযায়ী সিআইসি আখ ক্রয় করেছেন। সে মোতাবেক বিলও দিয়েছেন। টাকা পরিশোধ করবে চিনিকল কর্তৃপক্ষ।
ক্ষিদ্রমালঞ্চি গ্রামের সাইফুল ইসলাম জানান, এই মৌসুমে প্রায় চার লাখ টাকার আখ বিক্রি করে মাত্র ৮০ হাজার টাকা পেয়েছেন। বাঁকি টাকা না পাওয়ায় টাকার অভাবে চৈতালী আবাদ করতে পারছেন না। সংসার চালাতে গিয়ে বিভিন্ন দোকানদারদের নিকট অনেক টাকা বাঁকি হয়েছে। তাদের হালখাতায় টাকা পরিশোধ করতে না পারায় নতুন বাঁকিও দিচ্ছেনা বরং অপমানজনক কথা বলছে। ফলে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
সাইলকোনা গ্রামের গোলাম রসুল বলেন, আখ বিক্রির টাকা না পাওয়ায় জমির লিজের টাকা ও বিভিন্ন ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারছেন না। ফলে তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
উপজেলা জাতীয় কৃষক সমিতির সভাপতি ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আঃ হাদী বলেন, সুগার মিলে আখ বিক্রি করেও টাকা না পেয়ে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব আখচাষীদের বকেয়া টাকা পরিশোধের দাবি জানান তিনি।
এ ব্যপারে নাটোর সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএফএম জিয়াউল হক ফারুক বলেন, এ সুগার মিলে সাড়ে ১৩ হাজার আখচাষীর মধ্যে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার চাষীর প্রায় ২৬ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। ছুটি শেষে মন্ত্রণালয়ের সাথে বৈঠক শেষে টাকা দেওয়ার বিষয়ে কিছু বলা যাবে। তবে মুঠোফোনে মন্ত্রণাালয়ে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।