রবিবার , ডিসেম্বর ২২ ২০২৪
নীড় পাতা / মুক্ত মত / করোনাকালের ক্ষুধা, লকডাউন ও সতর্কতা -রফিকুল কাদির

করোনাকালের ক্ষুধা, লকডাউন ও সতর্কতা -রফিকুল কাদির

অনেক কথা, অনেক কাজ, অনেক অনেক সতর্কতা, লক ডাউন ইত্যাদি ইত্যাদি। সুখে মানছে না অনেকেই। কিন্তু অসুখে তারও বেশি। মনে রাখতে হবে, সবচেয়ে ভয়ংকর ও ভাইটাল রোগ #ক্ষুধা। >সবাই আমার কমবেশি জানি, ক’জনের সংসারে কত কেজি চাল দরকার। এবং ঐকিক নিয়মে বের করা সহজ ত্রানের চালে কতদিন চলবে। যাঁরা দিচ্ছেন তাদের সামর্থ্যও মাথায় রাখতে হবে। আবার আছে #ক্লাসিক_গম_তথা_চাল চুরির ঘটনা। আসলে খসলত যায়না ম’লে।(এটা তো অধিকারের পর্যায়ে চলে গেছে; আপনেরা চ্যাতেন ক্যারে!)

লক ডাউন নিয়ে একজন বিশেষজ্ঞ- COVID-19 বিশ্বমহামারী আটকাতে WHO যে ক’জন বিজ্ঞানীর সঙ্গে কথা বলেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন এন্ড রিসার্চে (IISER, kolkata) কর্মরত- এসোসিয়েট প্রফেসর ডক্টর পার্থসারথী রায় বলছেন, ” কোনো একটি অসুখের মারণক্ষমতা এবং সংক্রামক ক্ষমতা দুটো আলাদা জিনিস। সাধারণত যে ভাইরাসের মারণক্ষমতা অত্যন্ত বেশি সেই ভাইরাস বিরাট একটা সংক্রামক হয় না, অপরপক্ষে যে ভাইরাস অতিরিক্ত সংক্রামক তাতে আবার খুব বেশি মানুষ মারা যায় না। যেমন ২০০৩-এর সার্স ভাইরাসে মৃত্যুর হার অনেক বেশি ছিল। বেশি মানুষ সংক্রামিত হননি। উল্টোদিকে এই ভাইরাস বিশ্বব্যাপী সকলকে সংক্রামিত করার ক্ষমতা রাখে। ”

আরও প্রশ্নের জবাবে উনি বলছেন-
প্র: তাহলে আপনি বলতে চাইছেন, করোনা (কোভিড ১৯) মারন ভাইরাস নয়?
উ: একদমই না। কেবলমাত্র বয়স্ক মানুষ এবং আগে থেকে অন্য গুরুতর অসুখে ভোগা মানুষের জন্যই মৃত্যু ডেকে আনতে পারে।
প্র: WHO তো বলেছে আমাদের এই ভাইরাসকে সঙ্গে নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে।
উ: একদমই তাই। আমরা কি আমাদের চারপাশে টিবি বা ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ে বেঁচে নেই? এ হল Attenuation প্রসেস। হীনবল হতে হতে টিকে যাওয়া। যেসব মানুষ সংক্রামিত তাদের মারা যাবার সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাসটাও মারা যায়। ফলে অন্যদের সংক্রামিত করার ক্ষমতাও আর থাকে না। তাই ভাইরাসও সময় ও পরিস্থিতির সঙ্গে নিজের পরিবর্তন (মিউটেশন) করে টিকে থাকে কিছু কেমন জায়গায়। একে Endemic* বলে। মাঝে মাঝে এটি আবার ফেটে পড়ার মতো বেশ খানিকটা ছড়ায়। তখন কম ইমিউন, খেতে না পাওয়া, অসুস্থ, অপুষ্টিতে ভোগা মানুষদেরই কেবল মারা পড়ার সম্ভাবনা থাকে। এই ভাইরাসগুলোর মারণক্ষমতা কম কিন্তু ফিরে আসার ক্ষমতা প্রবল।

আমার প্রশ্ন হল, মানুষ কেন আজও না খেতে পেয়ে অপুষ্টির জন্য মরবে? সরকারগুলি অপুষ্টি আটকাতে কী ব্যবস্থা নিচ্ছে?
প্র: তাহলে কী মলিকিউলার বায়োলজিস্টরা এই লকডাউনকে সাপোর্ট করেন না?
উ: আমি শুধু আমার কথাটাই বলতে পারি। আমার মতে এই লকডাউন পিরিয়ডকে কাজে লাগিয়ে যদি সংক্রমণ খুঁজে পাওয়ার কোনো চেষ্টাই না করা হয়, যদি সম্ভাব্য আক্রান্তদের পরীক্ষাই না করা হয় তাহলে কোনো লাভ নেই। আমরা কি করছি? না, আক্রান্তদের বাড়িতেই আটকে রেখে দিচ্ছি, তাতে তাদের বাড়ির লোক আক্রান্ত হচ্ছেন। যদি অসুস্থতার লক্ষ্মণগুলো দেখা যায় তবেই হাসপাতালে যাচ্ছেন। কিন্তু 65% লোকের তো কোনো রোগলক্ষণই দেখা দেবে না। লকডাউন শেষ হলে এই লোকগুলোই বয়স্ক এবং অন্যান্য রোগে ধুঁকতে থাকা মানুষদের সংক্রামিত করবে আর ভাইরাসটি আবার মাথা চাড়া দেবে। ১৯১৮ সালে স্প্যানিশ ফ্লু মহামারিতে ঠিক এইভাবে দ্বিতীয় বারের সংক্রমণে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায়।

ল্যাও ঠ্যালা। অতিরিক্ত মেজার নিতে নিতে মানুষের আত্মবিশ্বাস শূন্যে চলে এসেছে। এখন যে কোন রোগেই মরবে। আজ যমুনা টিভিতে এক ডাক্তার বলছিলেন, পৃথিবীর ১% রুগী মারা যায় ফ্লুতে। তাঁর বক্তব্যে এটি স্পষ্ট যে, প্রয়োজনীয় ও সরকার ঘোষিত সেফটি মেজারস ও সতর্কতা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করা যেতেই পারে। এখন ফসল তোলার সময়, কৃষক নাকে পট্টি বেঁধে বসে থাকবে ঘরের মধ্যে? না, মাস্ক পড়ে কাজ করবে।

গ্রামের হাট নিয়ে কথা হচ্ছে, অনেকে অনেক কিছু বলছেন। কেন হাট বসছে? কেন হাট বসবে? আরে ভাই, না বেচলে ওরা খাবে কী? আপনিও তো খাবার কিছু পাবেন না তাহলে। যা করা যেতে পারে তা হলো, #নিরাপদ_দূরত্বের_হাট। তাছাড়া বাঁচার তাগিদে কৃষককে রাতে হাট বসাতেই হবে। ওদের কেনার চেয়ে বেচার দায়ই এখন বেশি, কারণ ফসল উঠছে আর পাওনাদার/মহাজন তাড়া দিচ্ছে। সুদের টাকা বাড়ছে। যা হোক, এই গরীবের দেশে এতো সামর্থ্য কী সরকার সহ কারও আছে যে বা যারা বা যিনি অসংখ্য মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের খাবারের জোগান দেবেন ৬০/৭০ দিন।

আমি তো দেখছি, এতো এতো চোরের মধ্যেও অনেক ভালো মানুষ। ভালোর সংখ্যাই বেশি। কিন্তু কী করবে তারা। আমি নিজেই খাবার সময় ভাত গিলতে পারছিনা, ভণ্ডামির কষ্ট পাচ্ছি কিন্তু সাকলতপাতা যা হোক গিলছি তো। মানুষগুলোকে বাঁচান। তাদের কাজ দেন। ১০টাকা না থাকলে ১০টাকা কেজি চাল কিনবে কি করে! যরা পালাচ্ছে তারা পেটের দায়ে পালাচ্ছে আর আপনি আমি কন্টামিনেশনের ভয়ে বলছি, সালাদের আটকা। আটকাতে হলে যে যেখানে আছে সেখানেই তার বাঁচার ব্যবস্থা করুন। নইলে পালাবে, আমি-আপনিও ওই অবস্থায় তা-ই করতাম। সব ছবি কেন দিতে হবে! করণীয় করেন দেখবেন ছবি নাই বা কমে আসবে। সবাই ঈদের আমাজে পিত্রালয়ে ফিরছেনা দাদা, যদিও অনেকেই- যাদের তেল আছে- তারা অকারণে এবং সুখে শান্তিতে ট্রেনে বাসে ফিরেছেন। যা হোক, কাপুরুষের মতো কেবল নিজের চিন্তা না করে, বীরের মতো সচেতন ও সতর্ক থাকুন, করণীয়গুলো করুন। মানবতা কাজ করবে। আপনি আতংক না মানুষ এবং অমানুষ দেখতে পাবেন। আসহায় আপনাকে কাঁদাবে কিছু না বলেই।

কৃতজ্ঞ থাকুন #কৃষক, #ডাক্তার, #নার্স, #প্রশাসনের_কর্মকর্তা, কর্মচারী, #পুলিশ, #নিরাপত্তা_বাহিনীর_সদস্য, #ঔষধ_ও_অন্যান্য_ব্যবসায়ী সহ #সকলের প্রতি, যারা আপনাকে বাঁচতে সাহায্য করছে। যাদের কারণে আপনার কোয়ারান্টাইন হ্যাপি কোয়ারান্টাইন হচ্ছে আজও। সবাই ভালো থাকুন। নিরাপদে থাকুন।

লেখক: শিক্ষক, কবি, সাংস্কৃতিক কর্মী

আরও দেখুন

বর্ষাকালে চলনবিলের প্রকৃতি

আবু জাফর সিদ্দিকী:বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিলের নাম চলনবিল। ৩টি জেলাজুড়ে এর বিস্তৃতি। নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও …