নিজস্ব প্রতিবেদক, হিলি
গত দুইদিন ধরে চুলায় ভাতের হাড়ি চড়েনি দিনাজপুরের হিলির দক্ষিণ বাসুদেবপুরের (মহিলা কলেজপাড়া) হতদরিদ্র দিনমজুর ভ্যান চালক রাব্বানীর স্ত্রী বেলী বেগমের। করোনা ভাইরাসের সতর্কতা জারির পর ঘর বন্দি পরিবারের সবাই। ঘর থেকে প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাহিরে না যাওয়ার নির্দেশ সরকারের ।
সরকারসহ ইউএনও, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র বার বার বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করছে আপনারা ঘর থেকে বাহির হবেন না। অসহায়,দিনমজুর যারা দিন আনে দিন খায় তারা বাড়িতে অবস্থান করুন, সময় মতো খাদ্য সামগ্রী আপনাদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হবে।
আজ ক’দিন ধরে বাড়িতে অবস্থান করছি এখনও কেউ এসে কোন সাহায্য বা খাদ্য সামগ্রী আমার ঘরে পৌঁছে দেয়নি, ক্ষুধার জ্বালা আর সহ্য করতে পারছি না এমনটিই বলছে অসহায় বেলী বেগম।
সরেজমিনে বেলী বেগমের বাসায় গিয়ে দেখা গেছে, সামান্য একটু জমিতে পুরনো টিনের তৈরি একটি কুঁড়ে ঘর থেকে বের হচ্ছে একজন মধ্য বয়সী নারী বেলী বেগম। চোখে মুখে ক্ষুধার ছাপ। নড়বড়ে কুঁড়ে ঘরটি নড়ছে হালকা বাতাসে। একটু ঝড় এলে মনে হয় ভেংগে পড়বে। ঘরে থাকে মেয়েরা আর বারান্দায় ঘুমায় অসহায় বেলী আর তার স্বামী রাব্বানী। ঘরের সাথেই রান্নার স্থান, চুলো আছে,হাড়িও আছে। কিন্তু হাড়িতে ভাত রান্নার চাল নেই।
অসহায় বেলী বেলী বেগম বলেন, আমার তিন মেয়ে, স্বামী ভ্যান চালায়। এক মেয়ে লেখাপড়া করে। সামান্য একটু জায়গায় পুরনো টিন দিয়ে কোন রকম ঘর করে বসবাস করছি। করোনা নামের নাকি রোগ দেশে আসছে। সরকার আর মেম্বার চেয়ারম্যানরা বার বার মাইকে বলছে ঘর থেকে বাহির হওয়া নিষেধ। খাবার বাড়ি বাড়ি পৌছে দিবে। কয়েকদিন যাবত ঘর বন্দি আছি কেউ তো এখনও কোন খাদ্যসামগ্রী এনে দিলো না।
তিনি আরও জানান, শুধু হাকিমপুর ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠন থেকে কয়েকদিন আগে দুই কেজি চাল আর কিছু আলু, ডাল দিয়েছিলো। যেটুকু গরীব মানুষ হিসেবে জমা ছিলো ক’দিন ধরে খেয়েছি। গত দু’দিন ধরে ঘরে কোন খাবার নাই। রান্না করতে পারছি না সন্তান স্বামী নিয়ে অনাহারে আছি।
বেলীর স্বামী হতদরিদ্র ভ্যান চালক রাব্বানী বলেন, ভ্যান নিয়ে বাহির হতে পারছিনা। দ্ইুনি ধরে ঘরে কোন খাবার নাই। স্ত্রী সন্তানদের মুখের দিকে আর তাকাতে পারছি না। নিরুপায় হয়ে গতকাল ভ্যান নিয়ে রাস্তায় বের হয়েছিলাম। কিন্তু ইউএনও, পুলিশ আর সেনাবাহিনীর নিষেধের কারণে বাড়িতে খালি হতে ফিরে আসি। এক কেজি চালের টাকাও কামায় করতে পারিনি।
এলাকাবাসী আঙ্গুর জানান, আমাদের গ্রামে এই পরিবারটি সবচেয়ে অসহায়। তিন মেয়েকে নিয়ে তারা বড় কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। ভ্যান চালক রাব্বানীর কোন কাজকাম নেই এবং এখন পর্যন্ত কোন অনুদান পাইনি তারা।
এবিষয়ে হাকিমপুর পৌর মেয়রের নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি আমার পৌর এলাকা সকল অসহায় হতদরিদ্র মানুষের পাশে আছি। আমি নিজে গিয়ে ঘরে ঘরে খাদ্যসামগ্রী পৌছে দিচ্ছি। অনেকেই হয়তো ছাড়া পাড়ছে, তাদেরও খাদ্যসামগ্রী পৌছে দেবার প্রস্তুতি চলছে। আমি ফেসবুকে আমার নাম্বার দিয়েছি। যারা এখনও কোন সাহায্য পাইনি তারা আমার নাম্বারে নাম ঠিকানা দিলে সঙ্গে সঙ্গে তার বাড়িতে খাদ্যসামগ্রী পৌছে দিবো।