করোনাভাইরাস প্রতিরোধে তৎপর হয়ে উঠেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) প্রথম থেকে তৎপর হলেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কার্যক্রম ছিল শুরুতে ঢিলেঢালা। তবে তারাও শুরু করেছে বিভিন্ন কার্যক্রম। আটটি গাড়ির মাধ্যমে রাস্তাঘাট ও জনসমাগমস্থলে জীবাণুনাশক তরল স্প্রে করার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আর গত ২২ মার্চ থেকে পাঁচটি ওয়াটার বাউজারের মাধ্যমে প্রতিদিন ৮০ হাজার লিটার তরল জীবাণুনাশক স্প্রে করছে ডিএনসিসি। পাশাপাশি হ্যান্ড শাওয়ার দিয়েও অলিগলিতে জীবাণুনাশক স্প্রে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছে পাঁচ সদস্যের। ওই কমিটি প্রতিটি ওয়ার্ডে অবস্থান করা বিদেশি নাগরিকদের হোম কোয়ারেন্টাইন সম্পর্কে খবরাখবর নিশ্চিত করবে। এছাড়া যাতে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকে সে জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযানও অব্যাহত রেখেছে তারা।
ডিএনসিসির ভারপ্রাপ্ত মেয়র জামাল মোস্তফা বলেন, নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলামের নির্দেশনায় কাজ করছি আমি। এ জন্য যা যা ডিএনসিসির পক্ষে করা সম্ভব, তা করা হচ্ছে। প্রতিদিনই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে তরল জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। কাউন্সিলরদের প্রতিটি ওয়ার্ডের কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। তারা বিদেশফেরত নাগরিকদের সম্পর্কেও তথ্য দেবেন। ডিএনসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। তারা সর্বক্ষণ করোনা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, ‘করোনায় যাতে সাধারণ মানুষ কষ্টে না পড়ে এ জন্য ডিএসসিসির পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। পরিচ্ছন্নতা অভিযান জোরদার করা হয়েছে। প্রতিদিনই নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে খাবারসহ আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। ৫০ হাজার নিম্ন আয়ের মানুষের এক মাসের খাবার দেওয়া হবে। চাল, ডাল, তেল, আলু, লবণসহ শুকনো খাবারের প্যাকেট বিতরণ করা হবে।’
গত ২২ মার্চ থেকে ডিএনসিসি পাঁচটি ওয়াটার বাউজারের মাধ্যমে প্রধান সড়ক, জনসমাগমস্থল, বহুতল ভবনের সামনে, মার্কেটের সামনে, বাজারসহ যেসব স্থানে মানুষের চলাচল বেশি, সেসব স্থানে জীবাণুনাশক স্প্রে করার কাজ শুরু করেছে।
প্রথম দিনে উত্তরার ১১, ১২, ১৩ ও ১৪ নম্বর সেক্টর, মিরপুর এলাকার ২, ১০, ১৩ ও ১৪ নম্বর সেকশন, মগবাজার, বাংলামটর, গুলশান, বসুন্ধরা, আমিনবাজার, গাবতলী, আগারগাঁও এলাকায় তরল জীবাণুনাশক ছিটানো হয়। যেখানে ওয়াটার বাউজার দিয়ে ছিটানো যায় না, সেখানে হ্যান্ড স্প্রে এবং হুইলব্যারো মেশিনের সাহায্যে জীবাণুনাশক ছিটানো হচ্ছে। সড়কে থাকা বিভিন্ন যানবাহন, গণপরিবহন, বাস টার্মিনালগুলোতেও জীবাণুনাশক স্প্রে করা হচ্ছে।
২৩ মার্চ নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলামের নির্দেশে কাউন্সিলরদের দিয়ে প্রতিটি ওয়ার্ডে কমিটি করে দেওয়া হয়। ওই কমিটি বিদেশফেরত নাগরিকদের সম্পর্কে ডিএনসিসিকে তথ্য দেবে। পাশাপাশি ওইসব নাগরিকের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করবে কমিটি। প্রতিদিন তারা এ সম্পর্কিত প্রতিবেদন ডিএনসিসির কাছে জমা দেবে। পাশাপাশি ওয়ার্ডের কোনো ব্যক্তির মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার প্রভাব পরিলক্ষিত হলে তাদের আইইডিসিআরের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিশ্চিত করবে।
ডিএনসিসি জানায়, গতকাল শনিবারও আটটি পানির গাড়িতে করে ব্লিচিং পাউডার মিশ্রিত জীবাণুনাশক তরল ডিএনসিসির বিভিন্ন এলাকায় ছিটানো হয়। এছাড়া উত্তরার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর সেক্টর, নিকুঞ্জ, ডুমনি, মিরপুর ১০, ১৩ ও ১৪, ভাসানটেক, মাটিকাটা, টোলারবাগ, মডেল একাডেমি, কল্যাণপুর, মোহাম্মদপুর টাউন হল, শিয়া মসজিদ, ফার্মগেট, খিলগাঁও, নাখালপাড়া, নাবিস্কো, বাড্ডা ও সংলগ্ন এলাকায় এক লাখ ৩০ হাজার লিটার তরল জীবাণুনাশক ১৯ লাখ ৫০ হাজার বর্গফুট এলাকায় ছিটানো হয়। করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ডিএনসিসির ফেসবুক পেজেও প্রচার অব্যাহত আছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে সচেতনতামূলক স্টিকার, প্রতিটি ওয়ার্ডে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা, জনসচেতনতামূলক মাইকিং, অসহায়, ছিন্নমূল ও দুস্থদের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য বিতরণ কার্যক্রমও চলমান আছে। গতকাল ডিএনসিসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ২৮ হাজার ৮০০টি অসহায় পরিবারের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য বিতরণ করবে। সাধারণ ওয়ার্ডের একেকজন কাউন্সিলর ৫০০টি পরিবারের মধ্যে, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর ১০০টি পরিবারের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য বিতরণ করবেন। এ খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে থাকবে ৫ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি পেঁয়াজ, ২ কেজি আলু ও ১ লিটার তেল। এ জন্য ১ কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার টাকার খাদ্যদ্রব্য বিতরণ করা হবে।
এছাড়া পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও মশক নিধনকর্মীদের মধ্যে দুটি করে সাবান দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ডিএনসিসির আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ডিএনসিসি ও সেনাবাহিনীর যৌথ টহল দিচ্ছে রাজধানীতে। যাতে বিনা প্রয়োজনে নগরবাসী জমায়েত হতে না পারেন।