সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস। এর মধ্যেই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে মারা গেছেন মোট পাঁচ জন। দেশের এমন দুঃসময়ে এগিয়ে এসেছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা ১৭ ক্রিকেটারের সঙ্গে কিছু দিন আগে শেষ হওয়া জিম্বাবুয়ে সিরিজে খেলা আরও ১০ ক্রিকেটারসহ মোট ২৭ জন উদ্যোগ নিয়েছেন তহবিল গঠনের। খেলোয়াড়দের প্রত্যেকে দান করছেন তাদের এক মাসের বেতনের অর্ধেক।
বুধবার মুঠোফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে একাধিক ক্রিকেটার এই মহতী উদ্যোগের কথা নিশ্চিত করেছেন। বিসিবির চুক্তিভুক্ত ও গেল তিন মাসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা বিভিন্ন গ্রেডের ২৭ ক্রিকেটার মিলে তহবিলে জমা করেছেন ৩০ লাখ টাকারও বেশি। তবে কর কাটার পর ২৬ লাখ টাকার মতো থাকবে বলে মনে করছেন তারা। সংকটকালে এই অর্থ ক্রিকেটাররা পোঁছে দিতে চান করোনাভাইরাস প্রতিরোধের কাজে।
উদ্যোক্তাদের অন্যতম বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল ফেসবুকে নিজের স্বীকৃত পেজে লিখেছেন, ‘বেতনের ৫০ শতাংশ দিয়ে আমরা সহায়তা করছি। কর কেটে রাখার পর মোট থাকবে ২৫ লাখ টাকার কিছু বেশি। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই যতটা ব্যাপক, এই অর্থ হয়তো খুব বড় অঙ্ক নয়।তবে বিন্দু বিন্দু জল মিলেই হয়ে ওঠে মহাসাগর।’
ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে নিজেদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মুশফিকুর রহিমও। সাবেক এই অধিনায়ক সমাজের বাকি পেশাজীবিদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন, ‘করোনার বিরুদ্ধে জিততে হলে আমাদের এই উদ্যোগ হয়তো যথেষ্ট নয়। কিন্তু যাদের সামর্থ্য আছে সবাই যদি এক সঙ্গে এগিয়ে আসেন তাহলে প্রতিরোধ সম্ভব।’
উভয় বলের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা লিটন দাস মাসে পান ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। করোনাভাইরাস নামক বিপদ মোকাবিলায় তার সাহায্যের পরিমাণ তাই ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা। ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে সবাইকেই এক হওয়ার আহ্বান তার, ‘আসুন পুরো দেশকে আমরা একটা পরিবার ভেবে চিন্তা করি এবং এই বিপদে সবাই সবাইকে সহায়তা করি।’
বিসিবির চুক্তিতে থাকা ১৭ ক্রিকেটার হলেন- তামিম ইকবাল, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ মিঠুন, তাইজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ, মুমিনুল হক, নাঈম হাসান, আবু জায়েদ রাহি, ইবাদত হোসেন, মাহমুদউল্লাহ, সৌম্য সরকার, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, মোস্তাফিজুর রহমান, আফিফ হোসেন,মোহাম্মদ নাঈম শেখ।
এছাড়া জিম্বাবুয়ে সিরিজের স্কোয়াডে থাকা ক্রিকেটাররা হলেন- মাশরাফি বিন মর্তুজা, ইয়াসির আলি চৌধুরী, মেহেদী হাসান, আমিনুল ইসলাম বিপ্লব, শফিউল ইসলাম, আল-আমিন হোসেন, হাসান মাহমুদ, রুবেল হোসেন, নাসুম আহমেদ ও সাইফ হাসান।
গ্রেড অনুযায়ী একেক ক্রিকেটারের বেতন একেকরকম। যেমন- ওয়ানডে দলের নতুন অধিনায়ক তামিম আছেন উভয় বলের চুক্তিতে। অধিনায়কত্বের ভাতাসহ তার মাসিক বেতন ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তিনি তাই দেবেন ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া লাল, সাদা উভয় বলের চুক্তিতে থাকা মুশফিক বেশি ম্যাচ খেলার ভিত্তিতে বেতন পান সর্বোচ্চ ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা। তিনি দেবেন ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা।
ওয়ানডে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়া মাশরাফি বিসিবির নতুন কেন্দ্রীয় চুক্তিতে নেই। চুক্তির বাইরে থাকা একজন ক্রিকেটার কোনো সিরিজে খেললে তিনি নিজের গ্রেড অনুযায়ী ওই মাসের পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন। তাই সবশেষ জিম্বাবুয়ে সিরিজে ওয়ানডে খেলায় গ্রেড অনুযায়ী মাশরাফি মাসিক বেতন হিসেবে পাবেন ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তাই করোনাভাইরাস প্রতিরোধ তহবিলে তার আর্থিক সহায়তার পরিমাণ ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
এভাবে বৈশ্বিক মহামারির বিরুদ্ধে বেশ বড় একটা অঙ্কের তহবিল গঠন করতে যাচ্ছেন ক্রিকেটাররা। তবে সরকারের ঠিক কোন কর্তৃপক্ষের কাছে এই টাকা তারা পৌঁছে দেবেন, তা এখনও নিশ্চিত হয়নি।