বাজারের যে কোনো স্যানিটাইজারের চেয়ে অর্ধেকেরও কম দামে এটি পাওয়া যাচ্ছে
করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ ঠেকাতে কদর বেড়েছে জীবাণুনাশক হ্যান্ড স্যানিটাইজারের। তাই সাধারণ মানুষের চাহিদা মেটাতে এবার বাজারে এসেছে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ডিস্টিলারি কেরু অ্যান্ড কোং (বাংলাদেশ) লিমিটেডের উৎপাদিত হ্যান্ড স্যানিটাইজার।
এর নাম দেওয়া হয়েছে “কেরুজ হ্যান্ড স্যানিটাইজার”।
সোমবার (২৩ মার্চ) থেকে পরীক্ষামূলকভাবে বাজারে আসলেও, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে স্বল্প মূল্যে সকলের হাতে পৌঁছে যাবে এই হ্যান্ড স্যানিটাইজার।
কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহিদ আলী আনছারী জানান, করোনার ভয়াবহ প্রভাবে দেশে এক সংকটময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে করোনা প্রতিরোধে সব ধরনের প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হলেও দেশে সংকট তৈরি হয়েছে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের। সুযোগ বুঝে বেশ কিছু কোম্পানিও দাম হাঁকিয়ে বসেছে কয়েকগুণ।
“এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের স্বার্থ ও সামাজিক দ্বায়বদ্ধতা থেকে আমরা হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি। গত কয়েকদিন আমাদের রসায়ন বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীরা অক্লান্ত পরিশ্রম ও গবেষণা করে হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদনে সক্ষম হয়েছে,” যোগ করেন তিনি।
প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) শেখ শাহাবুদ্দিন জানান, সোমবার থেকে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে উৎপাদনে যাওয়ার খবরে কেরুর হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিয়ে সারা দেশে রীতিমত হইচই পড়ে গেছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার বোতলের অর্ডারের ফোন পাচ্ছি। প্রথম দিনে ৩ হাজার বোতল হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদন হয়েছে। সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা প্রথম অবস্থায় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ করছি। আমাদের পর্যাপ্ত জনবল রয়েছে।
তিনি জানান, এখন সুগার মিল চালু নেই এবং কেরুর বড় সমস্যা হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বোতল। পর্যাপ্ত বোতল সরবরাহ পেলে প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রস্তুত করতে সক্ষম কেরু অ্যান্ড কোং।
কেরু অ্যান্ড কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক (ডিস্টিলারি বিভাগ) ফিদা হাসান বাদশা জানান, ১৯৩৮ সাল থেকে চিনির পাশাপাশি বিশ্বখ্যাত ও উন্নতমানের এলকোহল তৈরি করে আসছে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি। সেই বহরে এবার যুক্ত হলো হ্যান্ড স্যানিটাইজার। কেরুর ১০০ মিলি লিটারের একটি বোতলের সর্বোচ্চ বিক্রয় মূল্য হবে ৬০ টাকা। যা বাজারের যেকোনো স্যানিটাইজারের চেয়ে অনেক কম।
এ হ্যান্ড স্যানিটাইজারে ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ জীবাণু নষ্ট হবে বলে দাবি করেছেন কেরুর রসায়নবিদরা।
কেরুর উৎপাদন বিভাগের ডেপুটি ম্যানেজার আল আমীন জানান, বাজারে অন্যান্য জীবাণুনাশকের তুলনায় কেরুজ হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ক্রয়মূল্য তুলনামূলক কম। তাছাড়া পরিমাণেও বেশি। এ কারণে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সাধারণ মানুষের নাগালে পৌঁছাতে সক্ষম হবে তারা। এতে বাজারে সংকটও কমবে অনেকাংশে।
মরণব্যাধি করোনারভাইরাসের (কোভিড-১৯) হাত থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা করতে কেরু কোম্পানির এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু বলেন, দেশের সংকটময় মুহূর্তে কেরুর এমন উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে।
প্রাথমিক অবস্থায় কেরু অ্যান্ড কোং তাদের অনুমোদিত ১৬টি বিপণন কেন্দ্রের মাধ্যমে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিক্রি করবে। পর্যায়ক্রমে চাহিদামতো দেশের সব ফার্মেসিতে বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে চিনি, স্পিরিট, অ্যালকোহল, জৈবসারসহ পাঁচটি পণ্য উৎপাদন করছে।
প্রসঙ্গত, বাজারে বহুল প্রচলিত স্কয়ারের ৪০ এমএল সেফনিল হ্যান্ড স্যানিটাইজার ৮০ টাকা এবং ডেটল ৫০ এমএল হ্যান্ড স্যানিটাইজার ১৩৫ টাকায় বিক্রি হয়।