নিজস্ব প্রতিবেদক, গুরুদাসপুরঃ
কৃষকদের বাধা উপেক্ষা করে নাটোরের গুরুদাসপুরে কৃষি জমিতে নতুন করে ইটভাটা নির্মানের অভিযোগ উঠেছে জাকির হোসেন সোনার নামে এক ইট ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। উপজেলার ধারাবারিষা ও মশিন্দা ইউনিয়নের চরকাদহ মৌজায় ওই ইটভাটা নির্মানের কর্মযজ্ঞ চলছে। তার অদুরে পৌরসভার মধ্যমপাড়ায় এসআরবি ব্রিকস নামে জাকির হোসেনের আরো একটি ইটভাটা রয়েছে।
এদিকে চার ফসলি জমি নষ্ট করে ইটভাটা নির্মান কাজ বন্ধ ও পরিবেশ রক্ষার দাবী জানিয়েছেন এলাকার কৃষকরা। কৃষকদের পক্ষে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগও দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের সাথে শতাধিক কৃষক ও গ্রামবাসীর গনস্বাক্ষর সংযুক্তি করা হয়েছে। কৃষকদের পক্ষে শাহিন কাওসার নামে একজন কৃষক ওই অভিযোগটিদেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভ’মি) ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে অভিযোগের অনুলিপি দেওয়া হয়েছে। তার পরও ইটভাটা নির্মানের তৎপরতা বন্ধ হয়নি।
উপরন্ত কৃষি জমিতে ইটভাটা বন্ধের সাথে জড়িত কৃষকদের তৎপরতা বন্ধ করতে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে পুলিশি হয়রানীসহ নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ উঠেছে ইটভাটার মালিক জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে।
হয়রানীর শিকার বরেন্দ্র সেচ প্রকল্পের ম্যানেজার স্থানীয় কৃষক আলিমুদ্দিন ও ইটভাটা বন্ধের অভিযোগকারী শাহিন কাওসার অভিযোগ করেন,-গত বুধবার থেকে ইটভাটা নির্মানের প্রস্তুতি হিসেবে কৃষিজমিতে মাটি ফেলা, ইট রাখাসহ শ্রমিকদের থাকার জন্য একটি ছাপড়াঘর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সেখানে ইটভাটার মালিক জাকির হোসেন ও তাঁর লোকজন উপস্থিত ছিলেন।এসময় গ্রামের কৃষকরা সেখানে গিয়ে ইটভাটা বন্ধের দাবী জানান ভাটার মালিকের কাছে।
কৃষকদের দাবী অগ্রাহ্য করে জাকির হোসেন কৃষকদের অকথ্যভাষায় গালমন্দসহ আষ্ফালন শুরু করেন। নিরুপায় কৃষকরা ফিরে যেতে বাধ্য হন। ওই ঘটনার পর কৃষক আলিমুদ্দিন ও ইটভাটা বন্ধের অভিযোগকারী শাহিন কাওসারের বিরুদ্ধে ইটভাটার মালিক জাকির হোসেনের শরীরে হাত ও সাড়ে চার লাখ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ আনা হয়। এঘটনায় সন্ধ্যায় তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
বুধবার রাতেই ধারাবারিষা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মতিন ও ছাত্রলীগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি আহম্মদ আলীসহ নেতৃস্থানীয়দের মধ্যস্থতায় থানায় বসেই সমঝোতায় রক্ষা পান তাঁরা। তবে শর্ত জুড়ে দেওয়া হয় ইটভাটা নিয়ে প্রতিবাদ করতে পারবেনা তাঁরা। গুরুদাসপুর থানার ওসি মোজাহারুল ইসলাম সত্যতা নিশ্চিত করে জানান,- জাকির হোসেনের মৌখিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে আলিমুদ্দিন ও শাহিন কাওছারকে আটক করা হয়েছিল। সমঝোতার পর ছেড়ে দেওয়া হয় তাদের।
শনিবার দুপুরে গিয়ে দেখাগেছে,- বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের হাজিরহাট সংলগ্ন পশ্চিম পাশের বিশাল কৃষি মাঠ। ধান,গম রসুন, ভুট্রা, তরমুজ, বাঙ্গির আবাদ করেছে কৃষক। মাঠের পশ্চিম পাশে সেচের জন্য রয়েছে বরেন্দ্র প্রকল্পের অগভীর নলকুপ। ওই মাঠেই ইটভাটার কর্মযজ্ঞ শুরু করেছেন জাকির হোসেন।
বরেন্দ্র সেচ প্রকল্পের ম্যানেজার আলিমুদ্দিন জানান, নিজের দুই বিঘাসহ প্রায় ৮০ বিঘা কৃষি জমি রয়েছে ওই প্রকল্পের আওতায়। কষ্টের আবাদে সংসার চলে এসব কৃষকের। এই মাঠে ইটভাটা বাস্তবায়ন হলে ফসল ফলবেনা। ক্ষতিগ্রস্থ হবেন কৃষক। একারনে ইটভাটা বন্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন এলাকার কৃষকরা। এই প্রতিবাদ করতে গিয়ে হয়রানীর শিকারও হচ্ছেন তাঁরা।
আরেক কৃষক রমজান প্রামানিক জানান, তার তিন বিঘা জমি রয়েছে। বছরে চারটি ফসল ফলে। এতে সংসার চলে যায় তাঁর। সেই জমিটি ইটভাটার নামে লিজ (বছর চুক্তিতে ভাড়া) দেওয়ার জন্য নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে তাঁকে। একই রকম অভিযোগ করেন কৃষক ছাবেদ আলী, আবুল হোসেনসহ কমপক্ষে ১৫জন কৃষক।
এলাকার কৃষকরা আরো অভিযোগ করেন,- পৌরসভাসহ উপজেলা জুড়ে ১৩টি ইটভাটার কারনে কৃষি জমি কমে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। নতুন করে কৃষি জমিতে ইটভাটা নির্মিত হলে কৃষি জমি অপূরনীয় ক্ষতির মুখে পড়বে। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ প্রতিবেশ বিষিয়ে উঠবে। কৃষি ও কৃষকের স্বার্থে ইটভাটা বন্ধের আবেদন জানিয়েছেন এলাকার কৃষকরা। কিন্তু ইটভাটার মালিক কৃষকদের হয়রানী ও বিপাকে ফেলে আবাদী জমিগুলো ইটভাটার অনুকুলেও নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
এসব অভিযোগ সম্পর্কে মো. জাকির হোসেন সোনার দাবী করেন,- সমঝোতায় বেশ কয়েকজন কৃষকের কাছ থেকে বছর চুক্তিতে জমি ভাড়ায় নিয়ে ইটভাটা নির্মান করা হচ্ছে। অনেক কৃষককে অনুরোধ করা হয়েছে। কেউ জমি না দিলে জোর নেই। তবে কৃষকদের হয়রানী বা ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগটি সত্য নয়। তবে দুইজন কৃষক বাড়াবাড়ি করায় তাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করা হয়েছিল। পরে সমঝোতা হয়েছে।
নীড় পাতা / জেলা জুড়ে / গুরুদাসপুর / গুরুদাসপুরের ভয়ভীতি দেখিয়ে কৃষি জমিতে নতুন ইটভাটা স্থাপনের অভিযোগ
আরও দেখুন
নাটোরে যাত্রীবাহী বাস থেকে ৯ লাখ ৪৩ হাজার জাল টাকা সহ ৫ জন গ্রেফতার
নিজস্ব প্রতিবেদক,,,,,,,,,,নাটোরে যাত্রীবাহী বাস থেকে ৯ লাখ ৪৩ হাজার জাল টাকা সহ ৫ জনকে গ্রেফতার …