নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগাতিপাড়াঃ
নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার লক্ষণহাটি গ্রামের আব্দুস সামাদ (৫০)। তিনি এখনো জীবিত। কাজ করছেন বহাল তবিয়তেই। তবে ‘জীবিত’ থেকেও পাঁচ বছর ধরে সরকারী কাগজে তিনি ‘মৃত’ হিসেবে লিপিবদ্ধ রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সরকারী দপ্তরে আব্দুস সামাদ সশরীরে হাজির হয়ে বিষয়টির সমাধান চেয়ে দীর্ঘ বছর ঘুরলেও এখন পর্যন্ত তার জীবিত থাকার বিষয়টির কোন সুরাহা হয়নি।
সর্বশেষ গত শুক্রবার এলাকার স্মার্টকার্ড পেয়েছেন অনেকে। তবে আব্দুস সামাদকে দেয়া হয়নি। ফলে ভোটাধিকারসহ সব ধরনের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তিনি। আব্দুস সামাদ লক্ষণহাটি গ্রামের এলবাস আলী ও আয়েশা বেগমের ছেলে।
আব্দুস সামাদ বলেন, ‘সরকারি কাগজে ‘মৃত’ থাকায় জাতীয় নাগরিক সনদের সব ধরনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। ভেবেছিলাম এবার স্মার্টকার্ড পাবো। এতে হয়তো মৃত বদনাম ঘুচাতে পারব। কিন্তু বছরের পর বছর এ অপবাদ বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। হয়তো সত্যি মরে গেলে কাগজপত্র ঠিক হবে।’
১৯৭০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন আব্দুস সামাদ। ২০০৮ সালে পান জাতীয় পরিচয়পত্র। তার নাগরিক পরিচিতি নম্বর ছিল ৬৯২০৯০৬৬৯১০৯০। তবে ২০১৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাচনে ভোট দিতে গেলে জানাতে পারেন, তিনি ভোট দিতে পারবেন না। কারণ কাগজপত্রে তিনি মৃত হিসেবে লিপিবদ্ধ আছেন।
পরে আব্দুস সামাদ উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে গিয়ে তাঁকে জীবিত হিসেবে দেখানোর আবেদন করেন। খুব শিগগিরই তা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। কিন্তু তিনি সরকারি কাগজে জীবিত হতে পারেননি। ফলে উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ এবং জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি।
বিষয়টির সমাধানে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর, মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান ও নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে দিনের পর দিন ঘুরছেন।গত বছরের অক্টোবরে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে ফের সরকারি কাগজে জীবিত দেখানোর জন্য আবেদন করেন। আবারও আশ্বাস দেয়া হয়।
গত শুক্রবার উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হয়। সেখানে আব্দুস সামাদ কার্ড পাওয়ার আশায় লাইনে দাঁড়ান। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি খালি হাতে ফেরেন তিনি।
বাগাতিপাড়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র ইউসুফ আলী বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার পরও আব্দুস সামাদ কীভাবে মৃত হয়ে গেলেন, তা ভেবে আমিও অবাক হয়েছি। বিষয়টি জানার পর নির্বাচন অফিসে সুপারিশ করেছি কাগজপত্র সংশোধন করার জন্য, কিন্তু সংশোধন হয়নি।’
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আগে কে কী করেছেন বলতে পারব না। প্রায় তিন মাস আগে আব্দুস সামাদের ‘মৃত’ সংশোধনের দরখাস্ত এসেছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তা ঢাকায় জাতীয় নির্বাচন অফিসে পাঠিয়েছি। তবে এখনো সংশোধন না হওয়ায় তিনি স্মার্টকার্ড পাননি।’