নিজস্ব প্রতিবেদক, হিলিঃ
নারী হয়ে জন্ম নিয়ে সমাজের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছেন এসিড দগ্ধ জলি আক্তার তুলি। সমাজের আর দশজন নারীর মত বাঁচতে চায় সে। নানা প্রতিকূলতার মাঝেও লেখা পড়া থেকে পিছুপা হয়নি তুলি। সর্বউচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত না হতে পারলেও বিএ পাশ করেছে সে। এখন এসিডদগ্ধ অভিশাপ জীবন থেকে মুক্তি পেতে চায় তুলি। সমাজের অন্য নারীর মত প্রতিষ্ঠিত হয়ে ঘর বেঁধে সংসার গড়তে চায় সে। কিন্তু এসিড দগ্ধ অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে পারছেনা জলি আক্তার তুলি। এসিডদগ্ধ অভিশপ্ত জীবনে পাচ্ছে না তারা মাথা গোজার একটু ঠাই। মাথা উঁচু করে বাঁচার তাগিদে একটি চাকরীর জন্য তুলি ধর্না ধরে ঘুরছে বিভিন্ন মহলে। কিন্তু কেও শুনছেনা তার আকুতি।
এসিড দগ্ধ জলি আক্তার তুলি বলেন, গরীব ঘরের সন্তান, এক ভাই এক বোন তারা। ছোট বেলা থেকে হিলি’র হাকিমপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মোড়ে চন্ডিপুর গ্রামে নানার বাড়িতে থাকে সে। নানা মৃত ইদ্রিস আলী ও মামা সাইদুল ইসলাম। সবে মাত্র এইসএসসি পরীক্ষা দেবে তুলি। কিন্তু গত ২০১৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি কালো রাতে জীবন যুদ্ধে বয়ে গেলো কালবৈশাখী ঝড়। অসহায় গরীব নানার বাড়ির একটি ঘরে শুয়ে ছিলো তুলি। এমনি এক সময়ে সকলের অজান্তে ঘড়ের ছাপড়ায় উঠে টিনের ফাঁক দিয়ে তুলি’র শরীরে এসিড নিক্ষেপ করে পালিয়ে যায় একজন বখাটে যুবক।
এসিডে পুড়ে ঝলসে যায় তার গলা থেকে কোমড় পর্যন্ত। বিদেশী একটি সংস্থার খরচে চিকিৎসা শুরু হয় তুলির। পরে এসিড নিক্ষেপকারী আটকও হয়। এখনও মামলা রয়েছে চলমান। এদিকে আসামী জামিনে বেরিয়ে ঘুরছে। দীর্ঘদিন এসিডে পোড়া শরীরের জ্বালা নিয়ে অতিবাহিত করেছে হাসপাতালে। যন্ত্রনা আর ঘাতপ্রতিঘাতকে কাছে নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে লেখাপড়া বাদ দেইনি সে। ১৫ সালে এইসএসসি পাস করে ১৮ সালে বি,এ পাশ করেছে তুলি।
তার কষ্টের কথাগুলো বলতে বলতে অঝরে কেঁদে উঠলো সে। তার আক্ষেপের যেনো শেষ নেই, এসিড দগ্ধ নারী হওয়ায় সে মুল্যায়ন পাচ্ছেনা সমাজ সংসারে, মুল্যায়িত হচ্ছেনা কোন চাকুরী স্থলে। এছাড়াও এখন তার বিয়ের বয়স হয়েছে, বাবা-মার মাথায় বোঝা হয়ে আর কত দিনই বা থাকবে সে। একের পর এক বিয়ের কথা এলেও এসিড দগ্ধতার বড় জালা, কিন্তু বিয়ের ঘর ভেংগে যায়। তার দুঃখ ভরা কথা গুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে তুলি।
তুলির কন্ঠে এখন বিদ্রোহের সুর, সে কারও বোঝা হয়ে থাকতে চায়না। সে এসিডদগ্ধ শরীর নিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। তাই সে একটি চাকরীর জন্য বিভিন্ন দপ্তরে মানবতার ধন্না দিয়ে বেড়াচ্ছে। জানেনা সে, তার এই পথ চলা শেষ হবে কবে ??
তুলির মামা সাইদুল ইসলাম জানান, তুলি তার আদরের এক মাত্র ভাগ্নি। ছোট বেলা থেকে সে মামার বাড়ী থেকেই বড় হয়েছে। এক বখাটের বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তার এই পরিনাম। টানা তিন মাস তাকে ঢাকায় বিদেশী (এএফএফ) একটি সংস্থার সাহায্যে এসিড সার্ভায় হাসপাতালে তার চিকিৎসা করা হয়। সে সুস্থ্য হলেও, পিছু ছাড়েনি ডাক্তারের ঔষধ।
এদিকে হাকিমপুর সরকারী মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন্নাহার রোজি জানান, তুলি তার বাড়ির পাশে নানার বাড়িতে থাকে। সে জয়পুরহাট জেলার সদর থানার চিরলা গ্রামের জহির উদ্দিনের ছোট মেয়ে। খুব ন¤্র ভদ্র ও অমায়িক প্রকৃতির মেয়ে সে। তার কষ্টগুলো আমাকে অসহনীয় করে তুলে। অনেক কষ্ট করে সমাজের সাথে লড়াই করে নিজেকে শিক্ষিত করে তুলেছে তুলি।
আমাদের সবার উচিৎ এই অবহেলিত মেয়েটার পাশে দাঁড়ানো। এসিডদগ্ধ তুলির দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে সমাজের বৃত্তবান ও সরকারের দৃষ্টিগোচরে আনতে আহবান জানিয়েছেন তিনি।