নদীর বুকে জেগে ওঠা চর। সেই চরে যাতায়াত করাই যেখানে কষ্টসাধ্য, সেখানে বিদ্যুতের আলো পৌঁছাবে- এমনটা ভাবা ছিল অনেকের কাছে স্বপ্নের মতো। সেই স্বপ্নই বাস্তবে দেখছে পদ্মানদীবেষ্টিত নওপাড়া, চরআত্রা ও কাঁচিকাটা ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার পরিবার। সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে তারা পাচ্ছে এ বিদ্যুৎ। এজন্য শরীয়তপুরের তিন ইউনিয়নের ৭২ হাজার মানুষের মনে বইছে আনন্দের জোয়ার।
আগামী শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিদ্যুৎ সংযোগ উদ্বোধন করবেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) একেএম এনামুল হক শামীম। এখন চলছে সেই প্রস্তুতি।
চরআত্রা ও নওপাড়া ইউনিয়ন পড়েছে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায়। আর কাঁচিকাটা ইউনিয়নের অবস্থান ভেদরগঞ্জ উপজেলায়। এ তিন চর ইউনিয়নে প্রায় ৭২ হাজার মানুষের বসবাস। ইউনিয়ন তিনটি শরীয়তপুর-২ সংসদীয় আসনের অন্তর্গত।
গত সংসদ নির্বাচনে একেএম এনামুল হক শামীম ওই চরগুলোতে নির্বাচনী গণসংযোগে গেলে স্থানীয়রা তার কাছে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার দাবি তোলেন। তখন শামীম নির্বাচিত হতে পারলে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দেন। পরে সংসদ নির্বাচনের পর এনামুল হক শামীম ওই তিন ইউনিয়নে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার বিষয়ে শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করেন। এ সময় সিদ্ধান্ত হয় মুন্সিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হবে। পরে শরীয়তপুর ও মুন্সিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সঙ্গে এনামুল হক শামীম সভা করেন। সভায় সিদ্ধান্ত হয় সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে নদী দিয়ে বিদ্যুতের লাইন নেয়া হবে দুর্গম চরে। পরে শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ওই তিনটি ইউনিয়নের কার্যক্রম মুন্সিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে হস্তান্তর করা হয়। সে অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়। ২০১৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড থেকে এ বিষয়ে প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়া হয়। অনুমোদনের ভিত্তিতে কাজ শুরু করে মুন্সিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।
সেই কাজের ফল পেতে চলছে নওপাড়া, চরআত্রা ও কাঁচিকাটা ইউনিয়নের পরিবারগুলো। তাই তিনটি ইউনিয়নের প্রায় ৭২ হাজার মানুষ ভাসছে আনন্দের জোয়ারে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চারদিক দিয়ে পদ্মা ও মেঘনা নদী। মাঝে ছোট-বড় অসংখ্য চর। ৭০ বছর আগে থেকে ওই চরে মানুষ বসবাস শুরু করেছে। চরগুলোর অবস্থান ওই তিনটি ইউনিয়নের মধ্যে। চরের মানুষ হারিকেন ও প্রদীপের আলো ছাড়া কখনো বিদ্যুতের আলো পায়নি। কিন্তু এবার পদ্মানদীর তলদেশ দিয়ে সেই চরে পৌঁছেছে বিদ্যুৎ।
নওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ আজগর সোহেল মুন্সী জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের ইউনিয়নটি একটি দুর্গম চর। পদ্মানদী পাড়ি দিয়ে এখানে বিদ্যুৎ দেয়া হবে, তা কখনো ভাবিনি। এলাকায় বিদ্যুৎ এসেছে এমন খবরে আমরা আনন্দিত।
শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক জুলফিকার রহমান বলেন, পদ্মানদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে শরীয়তপুরের তিনটি চরে বিদ্যুৎ দেয়া হচ্ছে । চর তিনটি আমাদের এরিয়ায় পড়েছে। তবে মুন্সিগঞ্জ জেলা কাছে এবং সেখান থেকে সুবিধা বেশি হওয়ায় ওই জেলা থেকে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ দেয়া হচ্ছে তাদের। ওই চরে একটি সাবস্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে।
মুন্সিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক এএইচএম মোবারক উল্লাহ বলেন, মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার ছিপাইপাড়া থেকে শরীয়তপুরের নওপাড়ার দূরত্ব প্রায় ২৪ কিলোমিটার। সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে তিনটি ইউনিয়নে (৩৩কেবি) বিদ্যুৎ দেয়া হচ্ছে। যা ২০ হাজার পরিবার ভোগ করতে পারবেন। শনিবার আপাতত এক হাজার পরিবারকে বিদ্যুতের সংযোগ দেয়া হচ্ছে। আর নওপাড়া ইউনিয়নে একটি পল্লী বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রও হচ্ছে।
এ বিষয়ে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী ও শরীয়তপুর-২ আসনের এমপি একেএম এনামুল হক শামীম জাগো নিউজকে বলেন, বাংলাদেশের প্রত্যেকটি গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা তার ঘোষণা বাস্তবায়ন করছি। নির্বাচনের সময় প্রতিশ্রুতি ছিল দ্রুত সময়ের মধ্যে চরবাসীকে বিদ্যুৎ দেয়া হবে। পদ্মার দুর্গম চর হওয়ায় সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দেয়া হচ্ছে সেখানে।
উপমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মুজিববর্ষের বিশেষ উপহার হিসেবে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে দুর্গম চরের মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। তাছাড়া পদ্মা বহুমুখী সেতু দৃশ্যমান এখন। বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্ন দেখান এবং স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেন। এটাই তার বড় প্রমাণ।