জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীর হয়ে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যে ভূমিকা রাখছেন, তার ভূয়সী প্রশংসা রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের কাছ থেকেই আসছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা যেন বিশ্বের যে কোনো দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারেন, সেই সক্ষমতা তৈরিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলেছেন তিনি।
রোববার রাজধানীর মিরপুর সেনানিবাসে শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে ডিএসসিএসসি কোর্সে অংশ নেওয়া দেশি-বিদেশি সামরিক কর্মকর্তাদের সনদ প্রদান অনুষ্ঠানে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের সশস্ত্র বাহিনী এখন জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অবদান রাখছে। তাদেরকে আমরা আধুনিকভাবে গড়ে তুলতে চাই, যে কোনো দেশের সঙ্গে যেন তাল মিলিয়ে চলতে পারে।”
সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, “আমাদের সবচেয়ে বড় একটা সৌভাগ্য হল, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী যেখানেই কাজ করছে সেখানে তারা সুনাম অর্জন করছে। তাদের একটা ভালো জিনিস যেটা শুধু একজন সামরিক কর্মকর্তা হিসেবেই না, তাদের মধ্যে যে মানবিক গুণাবলী রয়েছে সেই মানবিক গুণাবলীর মাধ্যমে তারা জনগণের হৃদয়ে একটা স্থান করে নিয়েছে।
“আমি যখন বিদেশে যাই বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধান তাদের সঙ্গে যখন দেখা হয়, যারা আপনাদের সঙ্গে কাজ করেছে, তারা যখন প্রশংসা করে গর্বে আমার বুক ভরে যায়।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের সশস্ত্র বাহিনী আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার সুমহান দায়িত্ব যেমন পালন করছে, আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও যথেষ্ট অবদান রেখে যাচ্ছে। কিন্তু একটি বিষয় বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য আমি অনুরোধ করব, সেটা হচ্ছে সমাজে যখন ‘ব্যাধি’ দেখা যায় সেটা নিয়ে।”
মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির হাত থেকে সমাজকে রক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এগুলোর বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “কাজেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান বা মাদক-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
“আমরা চাই আমাদের প্রতিটি ছেলে-মেয়ের মেধা, শক্তি, মনন দেশের কাজে লাগবে, উন্নয়নের কাজে লাগবে। তারা বিপথে চলে যাক, নিজেদের জীবনটা ধ্বংস করুক- সেটা আমরা কখনও চাই না।”
গত এক দশক দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনীকে আরও উন্নত করতে কাজ করার কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতিমালার আলোকে ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়নের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এই ১১ বছর আমি মনে করি, আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে সর্বক্ষেত্রে আমরা আধুনিক সাজ সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি সাধন করতে পেরেছি।”
সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি সব সময় এটা মনে করি, আমাদের প্রশিক্ষণটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কিন্তু সবাই পারে আরও দক্ষতার সাথে কীভাবে দেশের স্বাধীনতা-সর্বভৌমত্ব রক্ষা।”
দেশের আর্থ-সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকারও প্রশংসা করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “যার ফলে সারা বিশ্বব্যাপী আজকে আমাদের দেশের একটা সুনাম অর্জিত হয়েছে, ছড়িয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এবং সশস্ত্র বাহিনীর উপর একটা আস্থা, বিশ্বাস জনগণের সৃষ্টি হয়েছে।”
বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এক সময় বিদেশে আমরা যখন ছিলাম বা যেতাম তখন বাংলাদেশ নিয়ে অনেক ধরনের কথা বলা হত, যে বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড়ের দেশ, বাংলাদেশ মানে দুর্যোগের দেশ। কিন্তু আজকে কেউ এই কথা বলে না। গত এক দশকে আজকে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে নিজের একটা স্থান করে নিতে পেরেছে।”
দেশের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
“ইনশাল্লাহ, আমরা খুব শিগগিরই প্রতিটি ঘরে আলো জ্বালাতে সক্ষম হব,” বলেন তিনি।
গ্রামপর্যায়ে উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “কোনো গ্রাম আর অবহেলিত থাকবে না। গ্রামের মানুষ যারা বসবাস করে তারা সকল প্রকার নাগরিক সুবিধা পাবে। সেইভাবেই আমরা আমাদের প্রতিটি গ্রামকে সাজাতে চাই, গড়ে তুলতে চাই এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও আমরা করে দিতে চাই।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না, বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে না, শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হবে না। সেই নীতিমালা নিয়েই আমরা রাষ্ট্রপরিচালনা করছি। সে ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি আমরা লাভ করেছি।”
শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে তার ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।