প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণকে দক্ষ মানব সম্পদে পরিণত করতে
তাঁর সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে, যাতে তারা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে
(আইআর) যোগ দিতে পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে মানিয়ে চলার সক্ষমতা অর্জন করতে
পারে।
তিনি বলেন,‘কারিগরি ভিত্তিতে বিশ্ব দ্রুত এগিয়ে চলছে। বিশ্বে খুব শিগগির
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ঘটবে। এ জন্য এই বিপ্লবের সঙ্গে মানিয়ে চলতে আমাদের
দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন করা দরকার।এ লক্ষে ইতোমধ্যেই সরকার কাজ শুরু
করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি)
২৩ তম আইডিইবি জাতীয় সম্মেলন এবং ‘স্কিলস রেডিনেস ফর এচিভিং এসডিজি এন্ড
এডপটিং আইআর ৪.০’ বিষয়ক তিনদিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন উদ্বোধনকালে এ
কথা বলেন।
অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসর দেশ গঠনে দক্ষ মানব সম্পদ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এ
কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণকে দক্ষ কর্মশক্তিতে রূপান্তরিত করতে
বিজ্ঞান,প্রযুক্তি এবং কারিগরি শিক্ষার প্রতি সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার
দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘আমরা দেশের মানুষকে শিক্ষা সর্বশেষ কারিগরি
ও প্রযুক্তি ভিত্তিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে দক্ষ করে তুলতে চাই। যাতে তারা
পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে সমান তালে চলতে পারে।’
শেখ হাসিনা বলেন,‘দক্ষ জনশক্তি আমাদের দেশের উন্নয়ন খাতে অবদান রাখতে পারবে
। পাশাপাশি তাদের বিদেশের শ্রমবাজারে পাঠাতে পারি,বিশ্বের বিভিন্ন দেশে
বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী কর্মীরা কাজ করছেন।’
তিনি বলেন,‘আমরা বিদেশের শ্রমবাজারে দক্ষ জনশক্তি পাঠাতে চাই।’
শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সহযোগিতায় ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারর্স ,বাংলাদেশ (আইডিইবি) এই সম্মেলনের আয়োজন করে।
শিক্ষামন্ত্রী ডা.দীপু মনি এমপি এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এমপি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারর্স ,বাংলাদেশ (আইডিইবি) সভাপতি একেএমএ
হামিদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক
ইঞ্জিনিয়ার শামসুর রহমান।
কার্যক্রমের শুরুতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে হত্যাকান্ডের শিকার
জাতির পিতা এবং তাঁর পরিবারের নিহত সদস্য ,শহীদ চার নেতা,১৯৭১ সালে
স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ এবং ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা
জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
জনসংখ্যাকে দক্ষ জনসম্পদে পরিণত করতে তাঁর সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের
প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা গত ১১ বছরে সরকারি ও বেসরকারি
উদ্যোগে ৫শ’ পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছি। সরকারি
পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের ধারণক্ষমতা ২৫ হাজার থেকে ১ লাখে উন্নীত হয়েছে।
তিনি বলেন, ভারতীয় ঋণে ২৬শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০-তলা ভবন, ওমেন ডরমেটরী,
ওয়ার্কশপ ও ল্যাব নির্মাণের মাধ্যমে ৪৯টি টেকনিকের সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রকল্প
গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রত্যেক উপজেলায় কারিগরি স্কুল ও কলেজ
প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যে ১শ’ উপজেলায় কারিগরি স্কুল ও কলেজ
প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এতে ৬ হাজার ৪শ’ শিক্ষক ও কর্মচারীর কর্মসংস্থান
হয়েছে।
তিনি আরো বলেন,অবশিষ্ট ৩২৯ উপজেলায় কারিগরি স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠায় ইতোমধ্যে ২০ হাজার ৫২৫ কোটি টাকার প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট (সাবেক পূর্ব
পাকিস্তান পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের
উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়।
গত ৫ অক্টোবর নয়াদিল্লী থেকে তিনি নিজে ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র
মোদীর সঙ্গে যৌথভাবে খুলনায় বাংলাদেশ-ভারত প্রফেশনাল স্কীল ডেভেলপমেন্ট
ইনস্টিটিউট উদ্বোধনের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই প্রকল্প
বাস্তবায়নে সরকারের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
মুজিববর্ষ
উদযাপনের সময়ে দেশের প্রত্যেক মানুষের কর্মসংস্থানে তাঁর লক্ষ্যের কথা
উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর সরকার প্রজন্মের পর প্রজন্মের কর্মসংস্থান
সৃষ্টিতে দূরদর্শী অনেক উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর সরকার মুজিববর্ষ পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের উদ্দেশ্যে বলেন, মুজিববর্ষ পালনে আপনারা
দেশব্যাপী কাজ করছেন। আমরা চাই আপনারা পরিবেশ, প্রতিবেশ, চাষযোগ্য জমি ও
জলাধার রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অপরিকল্পিত শিল্পায়নের জন্য যাতে কোন আবাদী জমি
নষ্ট না হয় সে জন্য তাঁর সরকার সারা দেশে ১শ’টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল
প্রতিষ্ঠা করছে । এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিপুল সংখ্যক কর্মসংস্থান সৃষ্টি
হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার গবেষণা কার্যক্রমের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন
বৃদ্ধি করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে এবং বর্তমানে তিনি সকলের জন্য
বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে চান।
তিনি বলেন, ‘আমি চাই না বাংলাদেশের একটি লোকও গৃহহীন থাকুক । প্রতিটি লোক
যাতে থাকার ঘর পায় তার জন্য জাতির পিতার পদাংক অনুসরণ করে আমরা অনেকগুলো
গৃহায়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করছি।’
প্রধানমন্ত্রী ভবিষ্যতে টেকসই হবে এমন একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ জীবন জনগণকে
উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রতি ব্যক্ত করে বলেন,এ লক্ষ্যে তাঁর সরকার শিক্ষা ও
স্বাস্থ্য খাতসহ সকল ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
তিনি আরো বলেন, ‘এ সব পদক্ষেপ গ্রহনের ফলে আমরা দারিদ্র্যের হার ২০ শতাংশে
কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। আমরা ‘মুজিববর্ষ’-এর মধ্যেই দারিদ্র্যের হার আরো
এক-দুই শতাংশ কমিয়ে আনতে পরবো।’
তিনি বলেন, সারা দেশে তার সরকারের গৃহীত ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রমের ফলে বাংলাদেশ ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ –এ পরিণত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিডিপি প্রবৃদ্ধি বর্তমানে ৮.১৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
এখন আমরা নিজস্ব অর্থায়নে ৯০ শতাংশ উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার স্বপ্ন ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত অনুযায়ী
২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বাপেক্ষা উন্নত সমৃদ্ধ
দেশে পরিণত হবে। এই লক্ষ্যে তাঁর সরকার ‘ভিশন-২০২১’ বাস্তবায়ন করছে এবং
দ্ধিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা হচ্ছে ২০২১-২০৪১ এবং প্রণয়ন করা হচ্ছে ৮ম
পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা।
তিনি বলেন, এক’শ বছর পরে বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে দেখার জন্য তাঁর সরকার ‘ডেল্টা প্লান-২১০০’ প্রনয়ণ করেছে।