প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারে থেকে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করতে পারার চেয়ে সৌভাগ্যের আর কিছু হতে পারে না। বাংলাদেশের জনগণই এ সুযোগ দিয়েছে। এটা তার নিজের ও তার ছোট বোন শেখ রেহানার জন্য খুবই সৌভাগ্যের বিষয়। এটা যে কত বড় পাওয়া তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
গতকাল বুধবার সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বে সংসদ নেতা এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে প্রধানমন্ত্রীর অনুভূতি জানতে চেয়েছিলেন সাবেক হুইপ শহীদুজ্জামান সরকার।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুজিববর্ষ উদযাপনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বঙ্গবন্ধুর কর্মময় জীবন আরও ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। এর ফলে বিশ্ববাসী নতুন করে বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগ ও বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন সম্পর্কে জানার সুযোগ পাবে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, পঁচাত্তরের পর এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল যে, জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন তো দূরের কথা, আওয়ামী লীগ বোধ হয় জীবনেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। বঙ্গবন্ধুর নামটিও আসবে না। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আর আল্লাহ আমাদের শক্তিটা দিয়েছেন, সুযোগটা দিয়েছেন এ জন্য শুকরিয়া আদায় করি। ছয় বছর বিদেশে উদ্বাস্তু হিসেবে থাকার পর স্বজনহারা বুকভরা বেদনা নিয়ে আপনাদের কাছে ফিরে এসেছিলাম। আমার একটাই লক্ষ্য- জনগণকে সুন্দর জীবন দেওয়া। আর সে জন্য কাজ করতে গিয়ে জনগণের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করেছি। সরকার গঠন করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২০-২১ সালের জন্য ইউনেস্কোর গ্রহণ করা ৫৯টি বার্ষিকী উদযাপনের প্রস্তাবের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন। একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে নয়, বরং বঙ্গবন্ধুকে সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের প্রতীক হিসেবে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণে ইউনেস্কো উদ্যোগী হয়। ইউনেস্কোর ম্যান্ডেটভুক্ত বিভিন্ন বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর অনন্যসাধারণ অবদান এ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর অবিচল সংগ্রাম ও ত্যাগের বিষয়সমূহ ইউনেস্কো বিশেষভাবে বিবেচনা করেছে।
তিনি বলেন, ইউনেস্কো জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এই আয়োজন আন্তর্জাতিক রূপ লাভ করল এবং অনন্য মাত্রায় উন্নীত হলো। ইউনেস্কোর তত্ত্বাবধায়নে এখন সারাবিশ্ব নানা আয়োজনে জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করবে। এর ফলে বঙ্গবন্ধুর সুদীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস এবং বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশের জনগণের জন্য তার আত্মত্যাগ বিশ্ববাসীর কাছে আরও বড় পরিসরে প্রকাশিত হবে।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক তরীকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান- ‘মুজিববর্ষ সমগ্র দেশবাসী পালন করলেও বিএনপি-জামায়াত পালন না করে উল্টো জন্মদিন পালন করছে। তারা পালন না করুক অন্তত যাতে নিবৃত্ত থাকে, সেজন্য কোনো আইন প্রণয়ন করা যায় কিনা?’ জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আইন করে সবকিছু হয় না। মুছে ফেলা ইতিহাস আজ উদ্ভাসিত হয়েছে। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী জাতিসংঘভুক্ত বিশ্বের সকল দেশ উদযাপন করছে। কাজেই কে মানল আর কে মানল না তার জন্য বাঙালি জাতি বসে থাকেনি।
সরকারি দলের আব্দুস সালাম মুর্শেদীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, ব্যক্তি পর্যায়সহ সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান থেকে মুজিববর্ষে অসংখ্য প্রস্তাব পাওয়া গেলেও বাস্তবায়নের সুবিধার্থে কর্মসূচি সীমিত রাখা হয়েছে। তবে এই কর্মপরিকল্পনায় ঠাঁই না পাওয়া কোনো কর্মসূচি প্রস্তাবকারীরা নিজ উদ্যোগে বাস্তবায়ন করতে পারবেন।
চার কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার শঙ্কা :নওগাঁ-২ আসনের শহীদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মানুষের জীবন-জীবিকা বিপন্ন হচ্ছে। দেশজ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছে। জলবায়ু পরিবর্তনে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা মে মাসে ১ ডিগ্রি ও নভেম্বর মাসে শূন্য ৫ ডিগ্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রীষ্ফ্মকালে সমুদ্রের লোনা পানি দেশের অভ্যন্তরে প্রায় ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত নদীতে প্রবেশ করছে। গড় বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বল্প সময়ে বেশি বৃষ্টিপাত শহরাঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে। বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ বেড়েছে।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ায় এখন আগের মতো বিভিন্ন ঋতুতে তেমন তারতম্য পরিলক্ষিত হয় না। ফলে জীববৈচিত্র্যের ওপর প্রভাব পড়ছে। খাদ্য নিরাপত্তার জন্য এটি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ১৯ জেলার ৭০ উপজেলার প্রায় চার কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশ সঠিক পথে :বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশ এখন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের পথে রয়েছে। মঙ্গলবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে আবুধাবি ন্যাশনাল এক্সিবিশন সেন্টারে ‘ফিউচার সাসটেইনেবলিটি সামিট’-এ সাক্ষাৎকার অধিবেশনে প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন যদি দৃশ্যমান না হয়, তাহলে বৈষম্য সৃষ্টি হবে এবং অসমতা দেখা দেবে। এতে প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হবে। প্রধানমন্ত্রী এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘এসডিজির অনেক আগেই আমরা রূপকল্প-২০২১ ও রূপকল্প-২০৪১ ঘোষণা করেছি। এতে টেকসই হওয়ার বিষয়টি আমরা অন্তর্ভুক্ত করেছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা জানি উন্নয়নের পথে সবসময় সম্পদের স্বল্পতাই মূল কারণ নয়, সম্পদের সমবণ্টনের সমস্যাও আরেকটি কারণ।’ রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের খাদ্য, আবাসন, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য জরুরি সেবাসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের পরিষেবা প্রদান করে আসছে।