সোমবার , ডিসেম্বর ২৩ ২০২৪
নীড় পাতা / সাহিত্য ও সংস্কৃতি / কবিতা / কবি শাহিনা রঞ্জু’র কবিতা ‘কালিচরনের চা’

কবি শাহিনা রঞ্জু’র কবিতা ‘কালিচরনের চা’

শাহিনা রঞ্জু

কালিচরনের চা

অফিসের করিডোর ছোট্ট বাগান
জব্বার মালেক নজরুল কনিকা
এমনই বেশকিছু মুখ
প্রত্যহ দেখা প্রত্যহ কুশল বিনিময়
আর সেই সাথে আছে
কালিচরনের হাতের মজার চা
এ মিটিং সে মিটিং অফিসের রোজনামচা
আপ্যায়নের তালিকায় থাকে কালিচরনের চা।
গ্রামে গঞ্জে ঘুরেফিরে অবশেষে বহুকাল পরে
বড় অফিসের কর্মচারী হয়েই
নাম জানা হল,
স্যার চা’টা মিস করবেননা কিন্তু
কালিচরনের চা।
ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে উঠি
উচিৎ অনুচিৎ হওয়ার গল্প
চিঠিতে অনেক বানান ভুলের গল্প
আরও কত কী।
এখনও মূর্ধন্য-ণ দন্ত-ন এর ভুলেই আছে সে এখনও
এই পরিবেশ এত কাজ
এটাও সম্ভব নাকি!
অমুকে তমুকের লোক
আর ঐ যিনি নতুন যোগদান করেছেন
তিনি হচ্ছেন খুব ফাঁকিবাজ
আর যাকে আজ রিলিজ করা হলো
তিনি ছিলেন অমুকের লোক
আর একজন বলে ফেললেন
আরে ভাই আপনিতো কিচ্ছুই জানেননা
আমার কাছে শোনেন লেটেস্ট খবর
তিনি হচ্ছেন সেরা পল্টিবাজ
আগের বসের সাথেও একই রকম
বুঝলেননা দহরম মহরম
সব সুযোগ সুবিধা সময়মত
বাগিয়ে নিয়েছিলেন।
এর মধ্যেই এস ডি জি
এর মধ্যেই মনিটরিং
এর মধ্যেই দিনরাত কাজের গল্পও আছে
দুর্যোগে রাতদিন একাকার হয়ে যাওয়া আছে
অসুখে বিসুখে চাঁদা তুলে চিকিৎসার গল্পও আছে।
ভালবাসা অভিমান অবহেলা
মান অপমান ঢের বেশী আছে
এ যেন এক বহু পুরাতন সংসার।
নুন নেই তেল নেই মাংশ নেই
আবার ডাল আছে রুটি আছে
মজাদার রান্না করা রাঁধুনিও আছে
সুখ দুঃখ সবই আছে
পুরাতন অফিসের সংসার।
তড়িঘড়ি করে চিঠি লেখা ফোন করা
মেইল করা কথা বলা
অবিন্যস্ত হয়ে আছে বেশকিছু নথিপত্র
এর মধ্যেই আছে ই-ফাইলিং।
স্যার আব্দুর রহিম কম্পিউটারের সব কাজ জানে
ফাঁকি দেবে বলে নির্দ্বিধায়
লুকিয়ে গিয়েছে সব এতদিন
এর একটা বিহিত হওয়া অত্যন্ত জরুরী।
ঠিক আছে সব দেখে নেব আস্তে আস্তে
হাতের কাজটা শেষ হোক।
সভাকক্ষ শেষ করে রুমে ঢুকতেই বলি
মাথাটা ধরেছে খুব এককাপ চা হবে?
চিরপরিচিত মুখ কাকলি এসে সামনে দাঁড়ায়
চোখ তার জ্বলে ভরে আছে
জানেন স্যার কালিচরন নেই
বিচলিত হয়ে বলি নেই মানে?
নেই মানে নেই
একটু আগেও বারান্দা দিয়ে হাঁটছিল
বলেছিলাম গত মাসের চায়ের টাকাটা কিন্তু
এখনও বাকি রয়ে গেছে
দাদা বললেন ঠিক আছে পরে দিওক্ষণ
একটু পরেই শুনি কালিচরন নেই
বারান্দায় পড়েই শেষ।
চাকরি তার শেষ হয়েছিল
পিআরএলও শেষ
তবুও নিত্যকার মত
অফিসের কাজ করে যেত।
কেউ যদি খোঁজ নিত
স্বলাজে হেসে বলতো
তোমাদের চা খাওয়াই, ভাললাগে
ভাল আছি এই আর কি।
অফিসের বারান্দায় হাঁটতেই
ভাল লাগতো তার
অফিসের বারান্দা দিয়ে হাঁটতে
আর আসবেনা সে কোনদিন।

আরও দেখুন

কবি নাজনীন নাহার এর কবিতা “আমি মানুষ’’

আমি মানুষ! নাজনীন নাহারআমি মানুষ!হ্যাঁ আমি মানুষ।আমি অমানুষের করি নাশ,মানচিত্র থেকে মুছে দেবো আমি অমানুষদের …