নিউজ ডেস্ক
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং পঁচাত্তর পরবর্তী আওয়ামী লীগকে সংগঠিত রাখার ক্ষেত্রে কত মানুষের যে ভূমিকা ছিলো তা বলে শেষ করা যাবে না। রুশেমা বেগম ছিলেন তাদের অন্যতম। এই নির্যাতিত নেতাকর্মীরা যাতে মূল্যায়িত হয়, একটু স্বস্তি পায় আমি সে চেষ্টা-ই করি।
সদ্য প্রয়াত সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) রুশেমা বেগমের শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে বুধবার (১০ জুলাই) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে অধিবেশনের সভাপতি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রয়াত এমপি রুশেমা বেগমের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। পরে সর্বস্মতিক্রমে শোক প্রস্তাবটি সংসদে গৃহীত হয়।
সংসদের অধিবেশন বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। সংসদের রীতি অনুযায়ী, চলমান সংসদের কোনো সদস্যের মৃত্যু হলে তার উপর আলোচনার পর ওই দিনের জন্য অধিবেশন মুলতবি করা হয়ে থাকে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের জন্য রুশেমা বেগম ছিলেন অত্যন্ত নিবেদিত প্রাণ। একটা যুগে মেয়েদের লেখাপড়া করা কঠিন ছিলো, তিনি সেই সময় লেখাপড়া করেছেন। তিনি শিক্ষিকা ছিলেন। আমি বাবা-মা, ভাইসহ স্বজনদের হারিয়ে যখন দেশে ফিরি তখন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক ও তার সহচর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে আমি অনুপ্রেরণা পেয়েছি। রুশেমা বেগম এবং তার স্বামী ইমামউদ্দিন ছিলেন তাদের অন্যতম।
তিনি বলেন, রুশেমা বেগম কখনও আমায় বলেননি- আমার জন্য কিছু করো। উনি কখনও কিছু চাননি। নির্বাচনের আগে একদিন তিনি আমার সঙ্গে নির্বাচন বিষয়ে কিছু কথা বলতে এসেছিলেন। তখন আমার বোন রেহানা বললো- উনাকে সংরক্ষিত আসনের এমপি করতে হবে। আমি বলেছিলাম করা হবে।
‘নির্বাচনের পর উনাকে বলেছিলাম একটা ফরম নিয়ে পূরণ করে দেন। এতে তিনি খুব খুশি হয়েছিলেন। বাজেট অধিবেশনে তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে যে বক্তব্য দিলেন সেটা ঐতিহাসিক তথ্য। যারা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিভ্রান্ত ছড়ায় তাদের জন্য একটা সঠিক জবাব দিয়েছিলেন তিনি। এটা ইতিহাস হিসেবেও সংসদে সংরক্ষিত থাকলো।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন নেমে আসে। ইমামউদ্দিন ও রুশেমা বেগমের পরিবারের ওপরও সেই অত্যাচর চলে। এর মধ্যে থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধরে রেখে রুশেমা বেগম ও তার স্বামী ইমামউদ্দিন কাজ করে গেছেন।
‘মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাদের হাতে নির্যাতিত মা-বোনদের স্বাধীনতার পর তিনি খুঁজে বের করে পুনর্বাসন কেন্দ্রে এনে আশ্রয় দেওয়ার কাজ করেছেন। তিনি যে অবদান রেখে গেছেন তা ভোলার নয়। আমি চেষ্টা করি আওয়ামী লীগের নির্যাতিত নেতাকর্মী যারা যেখানে আছেন তাদের মূল্যায়ন করার, তারা যাতে একটু স্বস্তি পান, সেই চেষ্টা করি।’
আলোচনায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, স্বাধীনতার পর দুঃস্থ নারীদের পুনর্বাসনের জন্য তার (রুশেমা) যে উদ্যোগ এটা ঐতিহাসিক ঘটনা। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি এই কাজ করেছেন। আমরা যখনই ফরিদপুর যেতাম তখনই ইমাম ভাইয়ের বাড়িতে উঠতাম। তিনি আওয়ামী লীগের জন্য ভূমিকা রেখে গেছেন।
এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের নেতারা ফরিদপুর গেলে ইমাম ভাইয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিতাম এবং ইমাম ভাইয়ের স্ত্রী রুশেমা ভাবি আমাদের দেখাশোনা করতেন। রুশেমা বেগম রাজনীতি করেছেন আবার শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন।
‘তিনি যে সময় শিক্ষকতা করেছেন এবং রাজনীতি করেছেন সেই সময়টার কুসুমাস্তীর্ণ ছিলো না। প্রধানমন্ত্রী তাকে সংসদ সদস্য করে মূল্যায়ন করেছেন এ জন্য তাকেও ধন্যবাদ জানাই,’ বলেন তিনি।