বর্তমানে প্রতি পাঁচজনে একজন দরিদ্র মানুষ রয়েছে। সেটা প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজনে নামিয়ে আনা হবে। তবে আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হলো দারিদ্র্য কমিয়ে আনা। আগামী পাঁচ-সাত বছরের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে।
রবিবার ( ২৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ-চায়না সিল্করোড ফোরাম আয়োজিত ‘সরকারের সক্ষমতা এবং ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন-চীনের অভিজ্ঞতা’শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এসব কথা বলেন। এসময় বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ। বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ-চীন সিল্করোড ফোরামের প্রেসিডেন্ট দিলীপ বড়ুয়ার সভাপতিত্বে সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) নেতা হাসানুল হক ইনু ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন শাসিত ও শোষিত অবস্থায় ছিল। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কল্যাণবাদে বিশ্বাস করেন। আর গ্রাম ও শহরের বৈষম্য চিরায়ত। তবে গ্রামের উন্নয়নের দিকে সরকারের নজর আছে, এজন্য বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। আমাদের প্রধান সমস্যা দারিদ্র্য। তাই সেটা মোকাবেলা করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
চীন থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারে উল্লেখ করে এমএ মান্নান বলেন, আমরা চীনকে নকল করে নয়, বরং তাদের থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারি। চীন তাদের অবকাঠামোগত উন্নয়ন দিয়ে অর্থনীতির মেরুদণ্ড গড়েছে। আমরা আমাদের অর্থনীতিকে সেদিকে নিচ্ছি। তাদের থেকে শিখে বিভিন্ন সুদূরপ্রসারী উন্নয়ন করছি। এজন্য কিছুটা হলেও আমাদের দারিদ্র্য কমেছে।
জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে কিছু রাজনৈতিক বিভ্রান্তে ভুগছি। একটু গণতন্ত্র, একটু সামরিকতন্ত্র, একটু ধর্মতন্ত্র—এই তিনে মিলে একটা খিচুড়িতন্ত্র। সেই রাজনৈতিক বিভ্রান্তিতে চায়না ভোগেনি বলেই দেশটির এ বিস্ময়কর উন্নয়ন।
তিনি বলেন, সংবিধানে আমাদের চারটি নীতি আছে, এর গুরুত্বপূর্ণ নীতি হচ্ছে সমাজতন্ত্র। সেই নীতির কারণে বাংলাদেশের সম্পত্তির ওপর তিন ধরণের মালিকানা আমাদের আছে। ব্যক্তি, সমব্যয় ও রাষ্ট্রীয় মালিকানা। তিনি আরো বলেন, আমরা পশ্চিমা রাজনৈতিক মডেল বাংলাদেশে চালানোর চেষ্টা করছি। মুক্তবাজার অর্থনীতির কাছে বাংলাদেশের অর্থনীতিটা বন্ধক দিয়েছি। সেই যে বিপর্যয়, সেই বিপর্যয়ের ফলে দীর্ঘদিন আমরা পিছিয়ে পড়েছি।
চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, আপনারা যদি চীনের উন্নয়নের দিকে লক্ষ্য করেন, তাহলে চারটি দিক পাবেন। প্রথমত, লিডারশিপ বা নেতৃত্ব। কমিউনিস্ট পার্টি চীনের (সিপিসি) নেতৃত্বে তাই আজ আমরা এ অবস্থানে এসেছি। দ্বিতীয়ত, জনগণের প্রতি সরকারের গুরুত্ব। জনগণ একটি জাতির মেরুদণ্ড। তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা আমাদের সর্বোচ্চ এজেন্ডা, যা আমরা করে আসছি। তৃতীয়ত, প্রশাসনে দুর্নীতি বা স্বচ্ছতার অভাব। চতুর্থ দিক হচ্ছে, একে অপরের প্রতি সহযোগিতা। আমরা নিজেরা নিজেদের প্রতি যেমন সহায়ক, তেমনই বহির্বিশ্বের প্রতিও আমরা আমাদের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। বাংলাদেশের উন্নয়নে আমরা দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে কাজ করছি। এ বন্ধন ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে আশা করি।