নিজস্ব প্রতিবেদক, গোদাগাড়ীঃ
বরেন্দ্র অঞ্চলের জনগষ্ঠি প্রায় কৃষির উপর নির্ভরশীল। কৃষি কাজ করেই চলে তাদের জীবন যাত্রা। আর আবাদী জমি না থাকলে কিকরে চলবে তাদের জীবন। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলাধীন গোগ্রাম ইউনিয়ন ও দেওপাড়া ইউনিয়নের
ফরাদপুর,বিয়ানাবোনা রাজাবাড়ী গ্রামের বিলে প্রায় এক থেকে দেড়শত বিঘা আবাদী জমি নষ্ট করে অবৈধ ভাবে পুকুর খননের সময় হঠাৎ পুলিশ সদস্যদের সাথে নিয়ে উপস্থিত হলেন নির্বাহী মাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)। সেখানে ৫ টি (ইস্কেবেটর) ভেকু মেশিন দিয়ে সরকারী আদেশ অমান্য করে অবৈধ ভাবে পুকুর খনন করার অপরাধে ভ্রাম্যমান আদালতে এক জনকে ১ বছর, ছয়জনকে ৩ মাস ও ৬ মাসের বিভিন্ন মেয়াদে বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং একজনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী মাজিস্ট্রেট । এসি ল্যান্ড এর জন্য আবাদী জমি রক্ষা পাওয়ায় এলাকাবাসী খুব খুশি।
রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) উপজেলার গোগ্রাম ইউনিয়নের ফরাদপুর মাঠে ৪০ বিঘা ধানী জমি,এবং দেওপাড়া ইউনিয়নের বিয়ানাবোনা রাজাবাড়ী মাঠে অবৈধ ভাবে কয়েকটি পুকুর খনন করার সময় হাতেনাতে ধরে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ ইমরানুল হক ভ্রাম্যমান আদালতে এসব সাজা প্রদান করেন। এবং৪টি ইস্কেবেটর (ভেকু) মেশিন অকেজো করার জন্য প্রয়োজনীয় মালামাল জব্দ করা হয়।
এক বছর সাজা প্রাপ্ত হলেন দূর্গাপুর উপজেলার ঝালুক গ্রামের নূর মোহাম্মদের ছেলে ইয়াসিন আলী(৩৫), বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রাপ্তরা হলেন পাবনা জেলার সদুপুর গ্রামের বাবর আলী খানের ছেলে কামাল আলী খান (৩৮),নওগাঁ জেলার কদিলপুর গ্রামের গফুর মন্ডলের ছেলে আব্দুর রফ (২০),রাজশাহী পবা উপজেলার হরিপুর গ্রামের হাইদার আলীর ছেলে টুটুল আহাম্মেদ (২২),পবা উপজেলার পারিলা উপজেলার মুখলেসুর রহমানের ছেলে মিঠু (৩৫),ও হায়দার আলীর ছেলে মোস্তফা কামাল (৩২),উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের চাপাল গ্রামের সানারুল হোসেনের ছেলে সাগর হোসেন(২২), এবং পবা উপজেলার টারোমারি গ্রামের তৌহিদুল ইসলামের ছেলে রিফাত রাইহানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যা থেকে গোগ্রাম ইউনিয়ন ও দেওপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে ৪০ থেকে ৫০ বিঘা করে মোট ১৫০ বিঘা ধানী জমিতে অবৈধ ভাবে পুকুর খনন করছিলেন একটি চক্র। এমন সময় খবর পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পুলিশ ফোর্স সঙ্গে নিয়ে ঘটনা স্থলে উপস্থিত হয়ে ৯ জনকে আটক করে জনসম্মুখে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ ইমরানুল হক ভ্রাম্যমাণ আদালত বালু মহল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর ৪ ধারা লঙ্ঘনের অপরাধে তাদের ১ বছর ৩ মাস ও ৬ মাসের বিভিন্ন মেয়াদে বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেন। এবং একজনকে ৫০ হাজার জরিমানা করা করেন।
এই গ্রামের সাধারণ কৃষকরা বলছেন, ইউএনও অবৈধ পুকুর খননের ছাড় না দিলে রক্ষা পাবে কয়েক হাজার কৃষকের হাজার হাজার বিঘা ফসলি কৃষি জমি। এলাকার কৃষকগণ জানান, প্রায় কয়েক বছর থেকে তিন থেকে চার ফসলি জমির শ্রেণি বদল করে এক শ্রেণির মানুষ সাধারণ কৃষকদের ভুলভাল বুঝিয়ে মাছ চাষের জন্য পুকুর খনন করে আসছিলো। গত ৩ বছর থেকে পুকুর খনন মহামারি আকার ধারন করেছে। উপজেলা প্রশাসন থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি করেও পুকুর খনন রোধ করা সম্ভব হয়নি। তারা উচ্চ আদালত থেকে পুকুর খননের অনুমতি না নিয়ে নেমে পড়ছিলো পুকুর খননে। তবে এবার এখন পর্যন্ত উচ্চ আদালত জমির শ্রেনি পরিবর্তন করে ফসলি জমিতে পুকুর খননের আর্দেশ দেননি। কিন্তু অর্থের প্রভাব দেখিয়ে ওই চক্রটি রাতের আধারে উচ্চ আদালতের আর্দেশ অমান্য করে অবৈধ্যভাবে পুকুর খননের কাজ করছে।
এসব অবৈধ পুকুর খনন করা হলে মাঠে জলাবদ্ধতার কারণে শত শত বিঘা ফসলী জমির অনাবাদী হবার আশঙ্কা রয়েছে, এবং পুরো গ্রামটি পানি বন্ধি হয়ে পড়বে। পানি নিষ্কাশনের রাস্তাটি বন্ধ হয়ে পড়তো। পুকুর খনন বন্ধ হওয়ায় আমরা অনেক খুশি।
বর্তমানে পাল্লা দিয়ে চলছে পুকুর খনন। গত কয়েক সপ্তাহব্যাপী উপজেলা জুড়ে পুকুর খনন বন্ধে গণবিজ্ঞপ্তি জারি জরি করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার( ইউএনও) নাজমুল ইসলাম সরকার। এর পরেও পুকুর খনন বন্ধ না হওয়ায় তিনি কৃষি জমি রক্ষার্থে পুকুর খনন বন্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেন। উল্লেখ্য, এর আগে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এক্সেভেটর গাড়ীর প্রায় ৩০টি ব্যাটারী জব্দ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তিন জনকে ছয় মাসের জেল দুজনকে জরিমানা করা হয়।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ ইমরানুল হক বলেন, সরকারী নির্দেশ ছাড়া অবৈধ ভাবে পুকুর খনন করে আবাদী জমি নষ্ট করার দায়ে তাদের কারাদন্ড দেওয়া হয়। এরপর আর কোন দিন কেও অবৈধ ভাবে পুকুর খনন করলে আরও কঠিন শাস্তি প্রদান করা হবে। এবং এই ধরনের অভিযান অব্যহত থাকবে।