খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। ১০-১২ বছর আগেও খোদ রাজধানীতে রাত-দিনে অসংখ্যবার বিদ্যুৎ চলে যেত। ঘণ্টার পর ঘণ্টা থাকতে হতো অন্ধকারে। দুর্ভোগের অপর নাম ছিল লোডশেডিং। কিন্তু দিন পাল্টে গেছে। এখন প্রচণ্ড গরমের দিনেও আগের মতো বিদ্যুৎ যায় না। খুব বেশি হলে ঘণ্টাখানেকের বিদ্যুৎ বিভ্রাট বা লোডশেড করা হয়। তাও প্রতিদিন হয় না। এতেই বোঝা যায়, পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। এভাবেই নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন কারওয়ান বাজারের বাসিন্দা খুরশিদ জাহান। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিটি বিশেষ করে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে অনেক খুশি।
শুধু খুরশিদ জাহান নন, পরিসংখ্যানও বলছে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থায় বড় ধরনের সাফল্য এসেছে গত ১০ বছরে। বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যমতে, গত নয় বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা তিন গুণের বেশি বেড়েছে। বর্তমানে উৎপাদন ক্ষমতা ২১ হাজার মেগাওয়াট এর বেশি। যদিও প্রতিদিন ব্যবহার করা হয় কমবেশি ১০ হাজার মেগাওয়াট। আরও নতুন নতুন কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। নতুন চুক্তি হচ্ছে। অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। আসছে বিদেশি বিনিয়োগ।
বর্তমান সরকারের টানা দুই মেয়াদের শাসনামলে বিদ্যুৎ খাতে এই ব্যাপক সাফল্য এসেছে। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে সবার ঘরে বিদ্যুৎ দিতে চায়। বিগত পাঁচ বছরে ১ কোটি ৯০ লাখ গ্রাহককে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎ খাতে নানামুখী পদক্ষেপের ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের অনুপস্থিতিতে সংসদে তার পক্ষে সম্পূরক প্রশ্নের উত্তর দেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক।
মন্ত্রী জানান, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারে নানামুখী পদক্ষেপে ২০০৯ সালের ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট ক্ষমতা হতে প্রায় ৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ ২১ হাজার ৬২৯ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর হতে ২০১৯ সালের মে পর্যন্ত মোট ১৩ হাজার ৫৩৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১১৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হয়েছে। তাছাড়া আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ভারত হতে বিদ্যুৎ আমদানির মাধ্যমে আরও ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে সরকার তাৎক্ষণিক, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে নিবিড় তদারকির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। ফলে বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনসংখ্যা ৪৭ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৯৩ শতাংশে পৌঁছেছে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সমস্যার সমাধানে তিন ধরনের উদ্যোগ নেয়। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করে সরকার। ব্যয়বহুল হলেও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য বিশেষ বিধান পাস করা হয়। সরকারের এসব উদ্যোগের ফলে পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়তে থাকে। ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্রগুলো অধিকাংশ তেলভিত্তিক। এ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। ফলে বিদ্যুতের দাম বেড়ে যায়। দাম বৃদ্ধি পেলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়ায় জনমনে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হয়নি। বিশেষ করে শিল্প খাতে বিদ্যুতের ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। বাড়তি উৎপাদন ব্যয়ের পুরোটা জনগণের ওপর না চাপিয়ে সরকার ভর্তুকি দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। ফলে দেশের বিদ্যুৎ খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে।