বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে ডিজিটালাইজেশনের দিকে। আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে আমাদের অনেক কিছুই পরিবর্তন করতে হবে। সঠিক ও দ্রুত উন্নয়নের মুল চাবিকাঠি হলো শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালের পর থেকে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার। ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী পরিকল্পনায় অনেক দূর এগিয়েছে বাংলাদেশ।
এরই ধারাবাহিকতায় আমূল পরিবর্তন আনা হবে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকে। ইতোমধ্যে সারাদেশের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কারিকুলাম বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে সমন্বয় ও নতুন কারিকুলাম বা পাঠ্যক্রম প্রণয়নের কাজ।
এর পাশাপাশি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা আধুনিকায়নে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত বড় ধরণের পরিবর্তন আনা হচ্ছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে বিভাগ তুলে দিয়ে তা উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে নির্বাচন করতে হবে। পাবলিক পরীক্ষায় নম্বর কমিয়ে তা বাড়ানো হবে ক্লাস পরীক্ষার মূল্যায়নে। শিক্ষার মানোন্নয়নে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের নিয়ে গঠিত কমিটির সুপারিশের আলোকে এসব সিদ্ধান্ত ২০২৪ সাল থেকে বাস্তবায়ন হবে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এইসব কথা বলা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা জানান, ‘কারিকুলাম পরিবর্তনের কাজ ২০১৭ সাল থেকে শুরু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এটি বাস্তবায়ন করা হবে। ২০২৩ সালে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন সম্পন্ন করার টার্গেট রয়েছে। সে লক্ষ্যে কর্মযজ্ঞ চলছে। এবিষয়ে কারিকুলাম বিশেষজ্ঞরা কয়েক বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছেন।’ এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়িত হলে ২০২৩ সাল থেকে নবম শ্রেণির বিজ্ঞান,ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগ উঠিয়ে দেয়া হবে এরপর থেকে শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে নতুন কারিকুলামের বই।
এনসিটিবির একটি সূত্র জানায়, কারিকুলাম পরিবর্তনের পাশাপাশি পাঠ্যবইও বদলে যাবে। এবারই প্রথমবারের মতো প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের কারিকুলাম একসঙ্গে পরিবর্তন ও সমন্বয় করা হচ্ছে। পরিবর্তিত কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়ক বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হবে। পাঠ্যবইয়ে দুর্যোগব্যবস্থাপনা, জঙ্গিবাদ, নিরাপত্তার বিষয়গুলো যুক্ত করা হবে। শ্রেণীকক্ষে পাঠদানের পাশাপাশি হাতে-কলমে দেখানোর বিষয়ও গুরুত্ব দেয়া হবে। যুক্ত থাকবে খেলাধুলাও।
তবে বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ মতে, ২০১৮ সাল থেকে চতুর্থ বিষয়ের পরীক্ষা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিকভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। এ মূল্যায়নের নম্বর সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবোর্ডে পাঠানো হচ্ছে প্রতিষ্ঠান থেকে। মূল মার্কশিটে উল্লেখ থাকছে এসব বিষয়ের প্রাপ্ত নম্বর। তবে পরীক্ষার ফলে শিক্ষার্থীদের উপর কোনো প্রভাব পড়ছে না বলে জানানো হয়।
মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবি সূত্র জানায়, মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের নিয়ে ২০১৬ সালে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যদের নিয়ে একই বছরের (২০১৯) ২৫ ও ২৬ নভেম্বর কক্সবাজারে দুদিনের আবাসিক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে শিক্ষাবিদরা যে সুপারিশ করেন তারই আলোকে কয়েকটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়। শিক্ষাক্রম পর্যালোচনা উপ-কমিটিগুলো ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর ৮ দফা প্রস্তাব প্রদান করে। প্রস্তাবে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষাক্রম বিষয়বস্তুর গুরুত্ব অনুসারে তিন গুচ্ছে ভাগ করার জন্য সরকারকে পরামর্শ দেয়া তারা। ‘ক’ গুচ্ছে বাংলা, ইংরেজি ও গণিত। ‘খ’ গুচ্ছে বিজ্ঞান, সমাজ পাঠ (ইতিহাস, পৌরনীতি ও ভূগোল)। ‘ক’ ও ‘খ’ গুচ্ছ বাধ্যতামূলক। আর ‘গ’ গুচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি, চারুকারুকলা, শরীরচর্চা ও খেলাধুলা, ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, কৃষি ও গার্হস্থ্য, নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি। এছাড়া এর বাইরে ‘ঘ’ গুচ্ছে প্রকৌশল প্রযুক্তি (বিদ্যুৎ, যন্ত্র, কাঠ, ধাতু ইত্যাদির ব্যবহারিক জ্ঞান ও প্রয়োগ) যুক্ত করার মতো দেন শিক্ষাবিদরা। শিক্ষাবিদরা ‘গ’ গুচ্ছের বিষয়গুলোর জন্য কোনো পাবলিক পরীক্ষা না নিয়ে বিদ্যালয়েই ধারাবাহিক মূল্যায়ন করার পরামর্শ দেয়। শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতের কর্ম ও পেশা নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে নবম ও দশম শ্রেণিতে আগের শ্রেণির গুচ্ছের সঙ্গে ‘ঘ’ গুচ্ছ যুক্ত করার কথা বলেন। এই গুচ্ছে রয়েছে পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, উচ্চতর গণিত, হিসাব, বিপণন, ব্যবস্থাপনা ও অর্থনীতি। ‘ঘ’ গুচ্ছ থেকে যে কোনো দুটি বিষয় শিক্ষার্থীরা পছন্দ করে নিতে পারবে। শিক্ষার্থীরা ইচ্ছা করলে ‘ঘ’ গুচ্ছ থেকে ঐচ্ছিকভাবে আরও একটি বিষয় নিতে পারবে। তবে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। নবম-দশম শ্রেণিতে পাঁচটি বাধ্যতামূলক বিষয় ছাড়া ‘গ’ গুচ্ছ থেকে দুটি ও ‘ঘ’ গুচ্ছ থেকে দুটি বা তিনটি বিষয় নিতে হবে। ফলে এসএসসি পরীক্ষায় ১৪টি থেকে চারটি বিষয় কমে বিষয় সংখ্যা দাঁড়াবে ১০টিতে। অর্থাৎ ঐচ্ছিক বিষয়সহ মোট ১০টি বিষয়ের পাবলিক পরীক্ষা হবে।