নিজস্ব প্রতিবেদক গুরুদাসপুর,,,,,,,,,,, নাটোর চলনবিল’ দেশের সবচেয়ে বড় বিল। মিঠাপানির ২৬০ প্রজাতির মাছের মধ্যে
চলনবিলেই পাওয়া যেত ১৩০ প্রজাতি। বর্ষা মওসুমে বিলে দেখা যেত দেশীয়
প্রজাতির এ মাছগুলো। মাছের অভয়াশ্রম খ্যাত চলনবিল থেকে হারিয়ে গেছে অনেক
প্রজাতির মাছ। সেটা কমে ৭৯ প্রজাতিতে নেমে এসেছে। স্থায়ীভাবে বিলুপ্ত
হয়েছে ধোঁদা, গুড়পুঁই, বাছা, ব্যাইটকা, চিংড়ি,গজার, শিলং, ভেদা, শংকর,
ফাঁদা, দুই প্রজাতির ট্যাংড়া,পানি রুইয়ের মতো ১১ প্রজাতির মাছ। মাছ ভান্ডার
খ্যাত চলনবিল যেন কল্পকথায় পরিণত হয়েছে।
একসময়ে নাটোরের সিংড়া-গুরুদাসপুর-নলডাঙ্গা অংশের চলনবিল ছিল দেশীয়
মাছের উৎপাদন কেন্দ্র।বর্ষা মওসুমে নানা প্রকার মাছ বংশ বিস্তার করত। এমাছ গুলো
পরে ছড়িয়ে পড়ত নদীনালা ও খালবিলে। সেই বিলে এখন মাছের দুর্দিন চলছে।
অল্পসংখ্যক দেখা গেলেও,হদিস নেই অনেক প্রজাতির মাছের। ফলে বিস্তীর্ণ চলনবিল
অঞ্চলের নদীনালা, খালবিল বর্তমানে মাছশূন্য হয়ে পড়ছে। দেশীয় প্রজাতির বিলপ্ত
মাছগুলো এখন চাষ হচ্ছে পুকুরে।
চলনবিল সংশ্লিষ্ট মৎস্য অফিসগুলোর দেওয়া তথ্যমতে, চলনবিল অঞ্চলে ১৭৫৭ হেক্টর
আয়তনের ৩৯টি বিল, ৪২৮৬ হেক্টর আয়তন বিশিষ্ট ১৬টি নদী এবং ১২০ বর্গ
কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট ২২টি খালের মিঠাপানিতে ১৩০ প্রজাতির মাছের
বংশবিস্তার ছিল। নদীনালা, খালবিল দখল-দূষণ করায় মাছ কমছে আশংকাজনক হারে।
বিশেষ করে বর্ষা মওসুমে প্রজনন বাধাগ্রস্ত করে নিষিদ্ধ পন্থায় মা মাছ শিকার
এবং পোনা নিধন অব্যহত রাখায় ৯০ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তপ্রায়। খুব কম দেখা
মিলছে মেনি, পুঁইয়া, চিতল, ফোলি, চিংড়ি, ভেদা, বেলে, পাবদা, কাঁচকি,
চাঁদা, মলা-ঢেলা, দাঁড়কিনা, বৌমা, ঘাড়ুয়া, ভাঙ্গন, কালিবাউশ, বাঁশপাতা,
পাঙাসসহ অন্তত ৪০ প্রজাতির মাছের।
চলনবিলের বাসিন্দারা কালবেলাকে জানান, এক সময়ে বিলে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত।
বর্ষা মওসুমে বিলের মাছ শিকার এখানকার জেলেদের সারা বছরের জীবিকা
নির্বাহ হতো। পর্যাপ্ত মাছ না পাওয়া, বিলুপ্ত মাছের সাথে এখনকার জেলেরা পেশা
বদল করে অন্য পেশা বেঁচে নিয়েছে। পানি এলেই শুরু হয় নিষিদ্ধ সব উপকরণ দিয়ে
মাছ শিকার। মাছের পোনা থেকে শুরু করে কাকড়া, শামুক-ঝিনুক পর্যন্ত নিধন
করা হয়। অথচ স্থানীয় প্রশাসন মাছ রক্ষায় কার্যত তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়না।
এভাবে চলতে চলতে চলনবিল এখন মাছ শূণ্যের পথে।
তাঁরা আরও জানান, শুকনা মওসুমে বিল ও বিল অঞ্চলের নদীগুলোতে পানি কমলে প্রায়ই
পলো বাওয়া উৎসব হতো। দেশের বিভিন্ন জেলা শহর থেকে নানা শ্রেণিপেশার
মানুষ এই পলো বাওয়া উৎসবে অংশ নিত। শত শত মানুষের কোলোহোলের ধ্বনিতে
উৎসবে মেতে উঠত বিল। দিন শেষে দেশীয় নানা প্রজাতির মাছ নিয়ে ফিরত অংশ
নেওয়া অধিকাংশই মানুষ। এখনও মাঝে মাঝে পলো বাওয়া উৎসব হয়। মাছ না
পাওয়ায় এতে আগ্রহ হারাচ্ছে অংশ নেওয়া মানুষ।
বাংলাদেশ সরকারের চলনবিল মৎস্য প্রকল্প থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ীÑ এক সমীক্ষায়
দেখা যায় ১৯৮২ সালে মোট ১ লাখ ৭৭হাজার ৬১ জেলে চলনবিলের বুক চিরে বয়ে
যাওয়া নদ-নদী ও খাল জলাশয়ে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। মাছ কমায়
পর্যায়ক্রমে জেলের সংখ্যা কমতে কমতে ২০০৬ সালে ৭৫ হাজারে দাঁড়ায়।
গুরুদাসপুর উপজেলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রতন কুমার কালবেলাকে জানান, সময়মত
বানের পানি না আসা,পানি প্রবেশে বাঁধা,অপরিকল্পিত পুকুর খনন, প্রজনন
বাধাগ্রস্ত করে মাছ শিকার, খালবিল দখল-দূষণ, ভরাট, অতিরিক্ত রাসায়নিক প্রয়োগ
নানা কারণে চলনবিল থেকে দেশীয় প্রজাতির বহু মাছ বিলুপ্ত হওয়ার পথে। চলনবিলে
বিদ্যমান দেশীয় মাছগুলো রক্ষার্থে কাজ করে যাচ্ছে মৎস্যবিভাগ ও উপজেলা
প্রশাসন। বর্ষা মওসুমে বিলে দেশীয় মা মাছ,পোনা মাছ নিধন রোধে তাদের
অভিযান চলমান থাকবে।