নিজস্ব প্রতিবেদক, রাণীনগর: নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায়
পশুরহাটগুলোতে অতিরিক্ত টোল আদায় করার অভিযোগ উঠেছে। টোল
আদায়কারীরা ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত টোলের
চাইতে অতিরিক্ত টোল আদায় করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। আর
রহস্যজনক কারণে উপজেলা প্রশাসন নীরব রয়েছে।
রাণীনগর উপজেলার সবচেয়ে বড় দুইটি পশুরহাট হলো আবাদপুকুরহাট ও
ত্রিমোহনীহাট। এবছর আবাদপুকুরহাট উপজেলা প্রশাসনের আওতায় খাস
আদায় করা হচ্ছে। আর ত্রিমোহনী হাটটি টেন্ডারের মাধ্যমে হিটলার নামে
এক ইজারাদার ইজারা নিয়েছেন। সপ্তাহের রবিবার ও বুধবার দিন
আবাদপুকুর হাট বসে। আর সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার দিন বসে
ত্রিমোহনী হাট। আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহা ঈদ উপলক্ষে রাণীনগর উপজেলা
ও আশেপাশের উপজেলা সহ বিভিন্ন জেলা থেকে এই দুই হাটে গরু,
মহিষ, ছাগল ভেড়া বেচা-কেনার জন্য নিয়ে আসেন হাজার হাজার ক্রেতা-
বিক্রেতারা।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী- গরু-মহিষ থেকে ৫০০ টাকা ও ছাগল-ভেড়া
থেকে ২০০ টাকা খাজনা (টোল আদায়) করা যাবে। কিন্তু আবাদপুকুর ও
ত্রিমোহনী হাটের উল্টো চিত্র। টোল আদায়কারীরা গরু, মহিষের জন্য ৬০০
থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত টোল আদায় করছে। আর ছাগল-ভেড়া থেকে ৩০০
থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা পর্যন্ত টোল আদায় করা হচ্ছে। আবার খাজনার
টাকা নিলেও রাশিদে লেখা হচ্ছে না টাকার পরিমান। এতে করে চড়ম ক্ষোভ
প্রকাশ করেছেন হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতারা।
বুধবার আবাদপুকুর হাট থেকে গরু কিনেছেন ঘাটাগন-দিঘিরপাড়
গ্রামের এমদাদুল হক। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি হাট থেকে
৮২ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কিনেছি। সেই গরুর জন্য লেখনি
বাবদ ১০০ টাকা ও খাজনা (ছাপ) বাবদ ৬০০ টাকা আমার কাছ থেকে
নিয়েছে টোল আদায়কারীরা। কিন্তু ৭০০ টাকা নিলেও রশিদে একটি
টাকাও লিখে দেননি।
ছাগল ক্রেতা মো. বছির আকন্দ জানান, কোরবানির জন্য আবাদপুকুর
হাট থেকে একটি ছাগল কিনেছি। ওই ছাগলের খাজনা বাবদ আমার কাছ
থেকে ৩০০ টাকা নিয়েছে।
গরু ক্রেতা একরামুল হোসেন বলেন, মঙ্গলবার ত্রিমোহনী পশুরহাট থেকে
একটি লাল ষাঁড় কয়েকজন মিলে দেড় লক্ষাধিক টাকা দিয়ে কিনেছি।
গরুটির খাজনা জন্য আমাদের কাছ থেকে ৭০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। এই
হাটে ছাগল ক্রেতার কাছ থেকেও সরকারি নির্ধারিত রেটের চাইতে
অতিরিক্ত খাজনা আদায় করা হয়েছে বলেও অভিযোগ বেশ কয়েকজন ক্রেতার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন ক্রেতা বলেন, উপজেলা প্রশাসন
হাটের এসব বিষয়ে সব কিছু জানার পরেও তারা কোন পদক্ষেপ নেয় না।হাটে অতিরিক্ত টোল আদায় বন্ধ করতে আইনি পদক্ষেপ নিলে ক্রেতা-
বিক্রেতারা ইজারাদার ও টোল আদায়কারীদের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আবাদপুকুর হাটের টোল আদায়কারীর
মধ্যে একজন হেলু মন্ডল সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, হাটে অতিরিক্ত
কোন টোল আদায় করা হচ্ছে না। সরকারি রেটেই খাজনা আদায় করা
হচ্ছে।
অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্যের জন্য ত্রিমোহনী হাটের
ইজারাদার হিটলারকে একাধিকবার মুঠোফোনে ফোন দিলেও তিনি ফোন
রিসিভ না করায় তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে তাবাসসুম
বলেন, অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়ে কোন ক্রেতা-বিক্রেতার কাছ থেকে
লিখিত কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া
হবে।