নিজস্ব প্রতিবেদক:
নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপে আগামী ২১ মে হতে যাচ্ছে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে গত ২ মে (বৃহস্পতিবার) প্রতীক বরাদ্দের পরপরই নির্বাচনী প্রচারে নেমে পড়েছেন প্রার্থীরা। শুরু করেছেন জনসংযোগ। নিজ নিজ প্রতীকের পোস্টার টানানোর পাশাপাশি মাইকেও চলছে প্রচার-প্রচারণা। প্রার্থীরা ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণে নিচ্ছেন নানামুখী পদক্ষেপ। গ্রাম থেকে হাট-বাজার এমনকি পাড়া মহল্লার হোটেল রেস্তোরায় চলছে প্রার্থীদেও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা। প্রার্থীদের অতীত-বর্তমান নিয়ে করে যাচ্ছেন চুলচেরা বিশ্লেষণ।
এ বছর পুঠিয়া উপজেলা নির্বাচনে হেভিওয়েটের ৩ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে তিনজনই আওয়ামী লীগ নেতা। যেহেতু দল থেকে কাউকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি তাই সকলেই স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
প্রতীক পাওয়ার পর থেকেই নির্বাচনী মাঠে সরব সবাই। প্রতীক পেয়েই বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জি এম হিরা বাচ্চু (মোটরসাইকেল) নিজেকে আবারো উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে তার কর্তৃত্ব ধরে রাখতে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে নির্বাচনী জনসভা ও মতবিনিময় সভা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
আগামী নির্বাচনে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সামাদ মোল্লা (আনারস) প্রতিক পেয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠ-ময়দানে চষে বেড়াচ্ছেন। দিনরাত ভোটারদের কাছে গিয়ে নিজের জন্য ভোট চাচ্ছেন। মাঠে রয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতা ও জেলা আওয়াম লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান উল হক মাসুদও (ঘোড়া।
এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কোন প্রতীক অথবা নির্দিষ্ট কোন প্রার্থীকে সমর্থন দিচ্ছে না। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রার্থীরা তাদের মতো করে নিজেদের জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আসতে হবে এমনটাই মনে করছেন ভোটাররা।
তফসিল ঘোষণার পর থেকে উপজেলাজুড়ে বিরাজ করছে ভোটের আমেজ। উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে প্রচারণা। জাতীয় নির্বাচন-উৎসবে যেমন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ একযোগে অংশ নেয় তেমনই ভোটের মাঠেও যোগ দিয়েছে সব বয়সের সব শ্রেণির পেশার মানুষ। প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন। গণসংযোগ থেকে শুরু করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাচ্ছেন তারা। পথসভা-উঠান বৈঠক করে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতিও। স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা খেলার মাঠে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে দিয়ে যাচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। শুধু মাঠে ময়দানেই নয় প্রযুক্তির কল্যাণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে ভোটের প্রচারণা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলার একাধিক ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান চেয়ারম্যান অনেক শক্তিশালী প্রার্থী। তবে যেহেতু এবার দলীয় কোন নির্বাচন বা প্রতীকের নির্বাচন হচ্ছে না তাই তার জন্য একটু কঠিন হয়ে যাবে বেরিয়ে আসাটা। তারপরও তিনি রানিং চেয়ারম্যান হিসেবে তার গ্রহণযোগ্যতা আছে।
তারা আরও জানান, অপরদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সামাদ মোল্লার জেলা ও উপজেলাজুড়ে তার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকাকে বিজয়ী করতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বিগত দিনের কর্মকান্ড মূল্যায়ন করলে এই নির্বাচনে তার বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি বলে জানিয়েছে ভোটাররা।
তাছাড়া সাবেক ছাত্রনেতা ও জেলা আওয়ামলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান উল হক মাসুদ পুরো উপজেলাজুড়ে তিনিও চষে বেড়াচ্ছেন। দলীয় কিছু নেতাকর্মীরা তার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। একজন ত্যাগী ছাত্রলীগ থেকে ওঠে আসা আ.লীগ নেতা হিসেবে তাকে এবার শেষমেশ সুযোগটা দেয়াটা দরকার বলে মত প্রকাশ করেন তারা।
অন্যদিকে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতীক পেয়ে নির্বাচনী মাঠে রয়েছে। তারা হলেন-আব্দুল মতিন মুকুল (চশমা), ফজলে রাব্বি মুরাদ (টিউবওয়েল), জামাল উদ্দিন (তালা) ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তারা হলেন মৌসুমি রহমান (বৈদ্যুতিক পাখা), পরিজান বেগম (ফুটবল), শাবনাজ আক্তার (হাস)।
আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কঠোর অবস্থানে রয়েছে উপজেলা নির্বাচন অফিস। কোথাও কোন ধরনের নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করা হলে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন পুঠিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার সুস্মিতা রায়।
এদিকে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম নূর হোসেন (নির্ঝর) বলেন, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং আনন্দঘন পরিবেশে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোটারগণ যেন তাদের নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন সেই পরিবেশ বজায় রাখবে প্রশাসন।
প্রসঙ্গত, আগামী ২১ মে (মঙ্গলবার) ভোট হবে পুঠিয়া উপজেলায়। এই উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৮২ হাজার ১ জন। এর মধ্যে মহিলা ভোটার ৯০ হাজার ১শ ৩৬ জন ও পুরুষ ভোটার ৯১ হাজার ৮শ ৬২ জন, হিজরা ৩ জন এবং ভোট কেন্দ্র রয়েছে ৭৮টি।