নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগাতিপাড়া :নাটোর চিনিকলের আওতাভুক্ত আখ চাষীদের সাথে আখ পরিমাপের ক্ষেত্রে কারচুপির অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতি ১২শ কেজিতে ৪০ কেজি আখ চুরি করানো হচ্ছে মওসুমী ক্রয় করণিকের মাধ্যমে। এমন প্রতরণার শিকার হয়ে চাষীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
আখের ওজনে কারচুপির শিকার হয়ে নাটোর চিনিকলের বাগাতিপাড়া (নওশেরা) ইক্ষু ক্রয় কেন্দ্রের মওসুমি ক্রয়করণিক এএসএম আল-আফতাব খান সুইটের বিরুদ্ধে চিনিকলের ব্যবস্থাপকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন আজিজুর রহমান নামের এক আখ চাষী।
আখ চাষী আজিজুর রহমান জানান, ট্রাকভর্তি আখগুলো বড় কাটায় পরিমাপ করা হয়। সেখানে সুক্ষ কারচুপির মাধ্যমে প্রতি ৩০ মণ আখ ওজনে ২৭ মণ দেখানো হয়েছে। এই কেন্দ্রের ক্রয়করণিক সুইটের মাধ্যমে কেন্দ্রের সিইসি দীর্ঘদিন ধরে এভাবে ওজনে কারচুপি করে চাষীদের সাথে প্রতারণা করেছেন। তিনি নিজেও বহুবার প্রতরণার শিকার হয়েছেন। হয়েছেন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। প্রতারণার হাত থেকে বাঁচতে তিনি চিনিকলের জেনারেল ম্যানেজার বরাবর লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।
নাটোর চিনিকলের বাগাতিপাড়া (নওশেরা) ইক্ষু ক্রয় কেন্দ্রের তথ্যমতেÑ চলতি মওসুমে নাটোর চিনিকলের জন্য বাগাতিপাড়া (নওশেরা) ইক্ষু ক্রয় কেন্দ্রের আওতায় প্রায় শতাধিক চাষী ৮০ একর জমিতে আখ চাষ করেছিলেন। এই জমিতে ১ হাজার ১৫০ টন আখ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এবছর উৎপাদন বেশি হয়েছে। এরমধ্যে ৬৫ একর জমিতে আখ চাষ করেছিলেন চিনিকলের সাথে চুক্তিবদ্ধ ৪২জন চাষী। সরকারি মূল্য অনুযায়ী প্রতি ১ হাজার ২০০ কেজি আখ বিক্রি করে চাষীদের পাওয়ার কথা ৬ হাজার ৪৬১ টাকা করে।
এই কেন্দ্রের অন্তত ১০-১৫জন চাষী জানিয়েছেনÑ ১ হাজার ২০০ কেজি আখের দাম ৬ হাজার ৪৬১ টাকা হলেও চাষীদের দেওয়া হয়েছে ৬ হাজার টাকা করে। এছাড়া আখ মাপের ক্ষেত্রেও করা হয়েছে সুক্ষ কারচুপি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইক্ষু ক্রয় কেন্দ্রের সিইসি আব্দুল খালেক। তিনি বলেন, ‘সুইট চুক্তিভিত্তিক মওসুমি ক্রয়করণি হিসেবে কাজ করেন। আখ পরিমাপের ক্ষেত্রে কোনো ধরণের অনিয়ম করা হয়নি।’
এদিকে আখের মাপে প্রতরণার শিকার হয়ে বাগাতিপাড়া পৌর মেয়রের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন উপজেলার নড়ইগাছা গ্রামের আখচাষী ইউনুস আলীও। তিনি বলেন, বাগাতিপাড়া (নওশেরা) ইক্ষু ক্রয় কেন্দ্রেটি উপজেলার আরাজীমাড়িয়া এলাকায়। একই এলাকায় বাড়ি মওসুমি ক্রয়করণি আল আফতাব খানের। ক্রয়করণি স্থানীয় হওয়ায় চাষীরা ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারেন না।
তিনি বলেন, আখ পরিমাপের সময় প্রভাবখাটিয়ে চাষীদের প্রকৃত মাপ দেখতে দেওয়া হয়না। ক্রয়করণি চাষীদের কাছে ৩০ মণের মাপ ২৭ মণ ধরিয়ে দেন। তিনি নিজেও অনেকবার এমন প্রতরণার শিকার হয়েছেন। পরিমাপে কারচুপির পাশাপাশি ১ হাজার ২০০ কেজি আখের দাম ৬ হাজার ৪৬১ টাকা হলেও তারা পেয়েছেন ৬ হাজার টাকা করে।
গত বুধবার আখ পরিমাপে কারচুপির বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ে গিয়ে ক্রয়করণি আল আফতাবের কাছে লাঞ্ছিত হন স্থানীয় সংবাদকর্মীরা।
মওসুমি ক্রয়করণি আল আফতাব খান সুইট বলেন, অফিসের বিভিন্ন দিক ম্যানেজ করতে হয়। অফিসারের আনুষঙ্গিক কিছু খরচ আছে। সেসব খরচ স্থানীয়ভাবে ব্যবস্থা করতে হয়। তাই প্রসেস লসের কথা বলে কিছু ব্যবস্থা করা হয়। এটা মেনে নিতে হবে।
নাটোর সুগার মিলের জেনারেল ম্যানেজার ফেরদৌসুল আলম ক্রয়করণির বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ভুক্তভোগী আখ চাষীর লিখিত এবং মৌখিক অভিযোগ পেয়েছেন তিনি। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।
আরও দেখুন
নন্দীগ্রামে অবৈধভাবে পুকুর খনন করার অপরাধে একজনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা
নিজস্ব প্রতিবেদক নন্দীগ্রাম,,,,,,,,,,,,, বগুড়ার নন্দীগ্রামে অবৈধভাবে পুকুর খনন করার অপরাধে একজনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা …