নারদ বার্তা ডেস্কঃ
সংযমের মাস রমজান। আজ দ্বিতীয় রমজান, ১৪৪১ হিজরী। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এই মাসে সারাদিন রোজা রেখে সংযম পালন করেন। রোজার সময় অন্যতম আকর্ষণ হলো সারাদিন রোজা রেখে দিনশেষে ইফতার করা। বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সময়সূচি অনুযায়ী আজ ঢাকায় ইফতার সন্ধ্যা ৬.২৯মিনিটে। ঢাকার সময়ের সাথে ৫মিনিট যোগ করে নাটোরে ইফতারের সময় সন্ধ্যা ৬টা ৩৪ মিনিটে।
ইফতারের পর সুস্থ থাকতে যা একদম করবেন না!
ইফতারের পর শরীরে শক্তি ও কর্ম চঞ্চলতা বাড়ে। তবে ইফতার, ইফতার পরবর্তী খাবার এবং কিছু অভ্যাস অনেক ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর না হওয়ার কারণে বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়। তাই এ সময় কিছু কাজ থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন।
বেশি খাবার খাবেন নাঃ ইফতারের সময় এবং ইফতারের পর অনেক বেশি খাবার একসঙ্গে খাবেন না। এতে ক্লান্তিবোধ, বদহজম, গ্যাস, পেটে ব্যথাসহ নানা সমস্যা হতে পারে। গোসল করবেন নাঃ ইফতারের পর পরই গোসল করলে শরীরের রক্ত সঞ্চালনের মাত্রা বেড়ে যায়। এতে পাকস্থলীর সরবরাহকৃত রক্তের পরিমাণ কমে যায়; হজমে সমস্যা হয়। চা পান করবেন নাঃ চায়ের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ টনিক এসিড থাকে। এটি খাদ্য নালীর স্বাভাবিক পিএইচকে পরিবর্তন ঘটিয়ে হজমে সমস্যা করে।
ঠান্ডা পানি পান নয়ঃ ঠান্ডা পানির তাপমাত্রা, আর শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকে। তাই পানির তাপমাত্রাকে স্বাভাবিক রাখতে শরীরের অতিরিক্ত শক্তি ব্যয় করতে হয়। এতে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এ ছাড়া এতে অ্যাজমা, টনসিলাইটিস কিংবা ঠান্ডাজনিত সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
শোবেন নাঃ ইফতারের পর পরই শুয়ে পড়লে খাবার ঠিকঠাক হজম হয় না। পরিপাকে ব্যাঘাত ঘটে এবং শরীরে ক্লান্তভাব তৈরি হয়। রোগীরা বেশি পরিশ্রমের ব্যায়াম করবেন নাঃ ইফতারের পর হালকা ব্যায়াম করা যেতে পারেন। তবে জিমের বেশি পরিশ্রমের ব্যায়াম আপনাকে আরো ক্লান্ত করে দেবে।
ধূমপান নয়ঃ ইফতারের পর ধূমপানের কারণে ধমনীতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে। এতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পরিবহনে বাধার সৃষ্টি হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার খাবেন নাঃ বাইরের খাবার বেশির ভাগ সময় অস্বাস্থ্যকর হয়। বেশি ভাজা, বেশি ট্রান্সফ্যাট, বেশি লবণের ব্যবহার থাকে এতে; সঙ্গে থাকে কৃত্রিম রং। এতে শরীরে নানা রোগ বাসা বাঁধতে পারে।
সুস্থ থাকতে ইফতারিতে রাখুন স্বাস্থ্য সম্মত খাবারঃ
রমজানে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনির সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ওষুধ খানিকটা সমন্বয় করতে হতে পারে। ইফতার ও সেহেরির সময় প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করতে পারেন। তবে রোজাদারগণের খাবার হতে হবে পুষ্টিকর। যে সব খাবার দীর্ঘ সময় লাগে হজম হতে যেমন: আঁশ জাতীয় খাবার খেতে হবে বেশি। পাশাপাশি সেহেরির সময় থাকতে হবে মাছ-মাংসসহ খানিকটা প্রোটিন বা আমিষ। মনে রাখতে হবে যাদের সুগার সমস্যা আছে অথবা ডায়াবেটিসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বা ব্লাড সুগার বর্ডার লাইনে তাদের অবশ্যই চিনিযুক্ত খাবার পরিহার করা উচিত।
বিশেষ করে নানা ধরনের প্রচারণায় আকৃষ্ট হয়ে অনেকে ইফতারিতে অধিক চিনিযুক্ত শরবত ও ভিটামিন সি জাতীয় পানীয় পান করে থাকেন। সুগার সমস্যা আছে অথবা যারা রমজানে ইফতারিতে সুগার পরিহার করতে চান তাদের জন্য একাধিক ওষুধ কোম্পানির সুগার ফ্রি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ শরবত পাওয়া যায়। এটা ট্যাবলেট ও পাউডার আকারে পাওয়া যায়। যেমন: একটা সুগার ফ্রি ক্যাভিক সি ট্যাবলেট এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে শরবত তৈরি করতে পারেন। এধরনের শরবত উপাদেয় ও পুষ্টিকর। তবে যাদের সুগার সমস্যা নেই তারা যদি বাজারে পাওয়া শরবত দিয়ে ইফতারি করতে চান তবে অবশ্যই দেখে নেবেন উৎপাদক কোম্পানিটি ভালো মানের কিনা।
বিশেষ করে রমজান আসলে বিভিন্ন নিম্নমানের কোম্পানি নানা চটকদার নাম দিয়ে শরবত তৈরি করে বাজারে ছাড়ছে। মাত্র ২/১টি কোম্পানি ছাড়া এসব শরবতে ফলের রসের কোনো নাম-গন্ধও থাকে না। চিনি ও নানা ধরনের ক্ষতিকর রং মিশিয়ে তৈরি করা হয় এসব শরবত। এতে পেটের পীড়াসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ইফতারিতে কি ধরনের শরবত পান করবেন তা অবশ্যই বিবেচনায় আনতে হবে। তবে ঘরে বসেই লেবুর রসের শরবতও তৈরি করতে পারেন। এছাড়া ইফতারিতে বাইরের খাবার পরিহার করার চেষ্টা করা ভালো।
ইফতারিতে অধিক ভাজা-পোড়া খাবার আহার করা উচিত নয়। পাশাপাশি যারা হালকা ইফতারির পর রাতের খাবার বা ডিনার করতে চান তাদের তারাবির পর ডিনার করা উচিত। কারণ অধিক আহারের পর তারাবির নামাজ আদায় করা অনেকের ক্ষেত্রে কষ্টকর। তবে যারা ইফতার ও ডিনার এক সঙ্গে সেরে ফেলেন তাদের উচিত হালকা ইফতার শেষে মাগরিবের নামাজ আদায় করা এবং নামাজ শেষে ডিনার করা। তাহলে ডিনার ও তারাবির মাঝে খানিকটা বিরতি পাওয়া যাবে। এটা স্বাস্থ্যের জন্যও হিতকর।