দেশের নাগরিকদের জরুরি সেবা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ পুলিশের অধীনে চালু হয়েছে ৯৯৯ জরুরি সেবা। ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর এই সেবা চালু হয়। যে কোন মোবাইল নম্বর থেকে সম্পূর্ণ টোল ফ্রি কল করে বাংলাদেশের নাগরিকরা জরুরি মুহূর্তে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ বা অ্যাম্বুলেন্স সেবা পাবেন। ৯৯৯ সার্ভিসের প্রশিক্ষিত এজেন্টরা জরুরি মুহূর্তে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ বা অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদানকারীর সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেবেন। সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা চালু রয়েছে এ সেবা। ৯৯৯–এ ফোন করতে কোনো খরচও নেই, এটি টোল ফ্রি।
বিভিন্ন ধরনের কল ও জরুরি সেবা দেওয়ার জন্য ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সার্ভিস ৯৯৯ এর অপারেটরদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সঠিক ও মানসম্মত সেবা দেওয়ার জন্য এ সব এজেন্ট কিছু প্রযুক্তিগত সহায়তা পেয়ে থাকেন। তবুও যখন কোন নাগরিক ৯৯৯ এ কল করবেন তখন নিম্নোক্ত বিষয়গুলো খেয়াল রাখা জরুরি-
ঠিকানা: জরুরি সেবা পাওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য হলো সাহায্য প্রার্থীর লোকেশন বা ঠিকানা জানা। অপারেটরকে (এজেন্ট) যতটা সম্ভব আপনার সঠিক অবস্থান বলুন। এক্ষেত্রে জেলা বা উপজেলার নামও বলতে হবে। আপনার সঠিক অবস্থান জানা না থাকলে পার্শ্ববর্তী বড় রাস্তা, বাজার বা হাইওয়ের নাম উল্লেখ করতে পারেন।
সঠিক উত্তর: সঠিক সেবা দেওয়ার জন্য অপারেটর বা জরুরি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান আপনাকে কিছু প্রশ্ন করবেন, যাতে তারা যথাযথ কর্মকর্তা বা কর্তৃপক্ষের কাছে আপনার প্রয়োজন জানাতে পারেন। অথবা আপনাকে জীবন রক্ষাকারী কিছু পরামর্শ বা করণীয় সম্পর্কে জানাতে পারেন। এ ধরনের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়ে অপারেটরকে সহায়তা করুন। অবশ্য আপনার প্রয়োজনের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আপনাকে হয়তো একই প্রশ্নের উত্তর একাধিকবার দেওয়া লাগতে পারে। বিশেষ করে ৯৯৯ থেকে কল ট্রান্সফার হয়ে পুলিশ বা ফায়ার সার্ভিস বা হাসপাতালে পাঠানো হলে এমনটি হতে পারে।
ধৈর্যশীল থাকা: কলের সময় শান্ত থাকুন এবং আপনার সমস্যা বিস্তারিত তুলে ধরুন। অনেক সময় দেখা যায়, নাগরিক তার সমস্যার কথা জানাতে গিয়ে ভাবাবেগে আক্রান্ত হয়ে অপ্রয়োজনীয় কথা বলে থাকেন। এমনটি করা উচিত নয়। এর ফলে অপারেটরের মূল সমস্যাটা ধরতে ও প্রকৃত সাহায্য করতে অসুবিধা হয়। মনে রাখবেন, আপনি যত শান্ত থাকবেন, আপনি তত বিশদভাবে আপনার ঘটনার বর্ণনা দিতে পারবেন এবং অপারেটরও আপনাকে তত ভালোভাবে সেবা দিতে পারবেন।
জরুরি পরিস্থিতি ব্যাখ্যা: জরুরি পরিস্থিতি ব্যাখ্যার সময় কয়েকটি বিষয়ে সতর্কতার সাথে তথ্য দিন। আপনি নিজে নাকি আপনার কাছের কেউ সমস্যায় পড়েছেন? কিভাবে হলো? কোন ধরনের জরুরি সেবা প্রয়োজন– অ্যাম্বুলেন্স? পুলিশ? নাকি অন্য জরুরি সেবা? কেউ আহত হলে তার পরিস্থিতি পরিষ্কারভাবে বলার চেষ্টা করুন। আহত ব্যক্তির অবস্থা কি খুবই আশঙ্কাজনক? তার জ্ঞান আছে কি? তিনি কি শ্বাস নিতে পারছেন? তার শরীর থেকে কি রক্ত বের হচ্ছে? আপনার সাধ্যমত রোগীর অবস্থা বলার চেষ্টা করুন। আপনার কথা বলতে অসুবিধা হলে পাশের কাউকে দিয়ে বলাতে পারেন, কল না কেটে লাইনে থাকুন।
অ্যাম্বুলেন্স সেবা: ৯৯৯ সার্ভিসের মাধ্যমে যে অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করা হয়, তা কিন্তু বিনামূল্যে নয়। বস্তুত বাংলাদেশের কোন কর্তৃপক্ষই বিনামূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস প্রদান করে না। আর ৯৯৯ যেভাবে কাজ করে, নাগরিকের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। ফলে অ্যাম্বুলেন্সের ধরন, গন্তব্যস্থল ইত্যাদি অনুযায়ী ভাড়ার পরিমাণ নির্ধারিত হয়। তাই অ্যাম্বুলেন্স সেবা চাইতে এসব তথ্য অপারেটরকে সঠিকভাবে দিন। অপারেটর আপনার নিকটস্থ অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিবে।
ফায়ার সার্ভিস: শুধু অগ্নিকাণ্ড নয়, ফায়ার সার্ভিস আরো নানা ধরনের সেবা দিয়ে থাকে। যেমন সড়ক দুর্ঘটনা, নৌ দুর্ঘটনা, আটকে পড়া মানুষ বা পশু-পাখি উদ্ধার ইত্যাদি। ফলে এ ধরনের সেবার প্রয়োজন হলে ৯৯৯ এ ফোন করুন। ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত সাহায্য পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে অপারেটরকে সহায়তা করুন। চলন্ত অবস্থায় এমন ঘটনা দেখলে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করুন। আপনার ফোন করার আগেই ফায়ার সার্ভিস বা পুলিশের কোন ইউনিট সেখানে পৌঁছেছে কিনা।
পুলিশের সেবা: জরুরি পুলিশি সেবার ক্ষেত্রে ৯৯৯ অপারেটর আপনাকে নিকটস্থ থানার সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেবে। আপনি সেখানে আপনার অভিযোগটি জানাতে পারবেন। যেহেতু রেফারেন্সের জন্য ৯৯৯ এ কল রেকর্ড করা হয়ে থাকে, তাই পুলিশের সাথে কথা বলার জন্য সঠিক তথ্য প্রদান করুন। শত্রুতাবশত কাউকে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে ৯৯৯ এ ফোন করলে আপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশি সাহায্যের ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ই নিকটস্থ থানায় গিয়ে অভিযোগ করতে হয়। কারণ লিখিত অভিযোগ ছাড়া অনেকেক্ষেত্রে পুলিশ তদন্ত শুরু করতে পারে না। ৯৯৯ এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট থানার কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে আপনার করণীয় সম্পর্কে জেনে নিন।
অপরাধীর বর্ণনা: আপনি যদি কোন অপরাধ ঘটতে দেখেন তাহলে দ্রুত নিরাপদ স্থানে পৌঁছান। যত দ্রুত সম্ভব ৯৯৯ এ কল করুন। আপনি অপরাধীকে চিনে থাকলে তা জানান কিংবা কাউকে সন্দেহ করেন কিনা তা-ও জানান। অপরাধীর হাতে অস্ত্র ছিল কিনা জানান। অপরাধী দেখতে কেমন? তার ধর্ম? আনুমানিক বয়স, উচ্চতা, ওজন, কাপড়ের রং প্রভৃতি তথ্য দিন। অপরাধী এখন কোথায়? তারা কি পালিয়েছে? কোন দিকে গেছে? তাদের সাথে কোন গাড়ি ছিল কিনা? কি গাড়ি? গাড়ির মডেল, রং এবং গাড়ির সাইজ কতটুকু? এমনকি গাড়ির নম্বরের অংশ বিশেষ প্রভৃতি তথ্য দিন।
ফোন খোলা রাখুন: আপনি যদি কোন মোবাইল ফোন থেকে কল করে থাকেন তাহলে আপনার নম্বরটি খোলা রাখুন, যাতে অপারেটর যে কোন মুহূর্তে আপনার সাথে পুনরায় যোগাযোগ করতে পারে। এর বাইরে আপনার চাহিদা অনুযায়ী পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস বা অ্যাম্বুলেন্স কর্তৃপক্ষও আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
সচেতনতা তৈরি: ৯৯৯ ইমাজেন্সি সার্ভিসে বিনা কারণে প্রতিদিন প্রচুর শিশু ফোন করে থাকে। এর ফলে প্রকৃত বিপদগ্রস্তরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। সময় ও সুযোগ করে আপনার সন্তানদের শেখান কিভাবে এবং কখন ৯৯৯ এ ফোন করতে হবে। কখন ফোন করবে না সেটিও শেখান।
প্রতিটি কলই গুরুত্বপূর্ণ: প্রতিটি কলই গুরুত্বপূর্ণ, সেটা ফলস কলই হোক আর প্রাঙ্ক কল হোক। যদিও এসব কল প্রকৃত জরুরি সেবা প্রদানে বাধা সৃষ্টি করে। ভুয়া কলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং আপনার নম্বরটি ব্লক করে দেওয়া হবে। আপনার অসতর্কতার কারণে যাতে ৯৯৯ কল না যায় সেজন্য আপনার মোবাইলটি লক করে রাখুন।