নিউজ ডেস্ক:
চীনের পররাষ্ট্র ওয়াং ই আগামী কাল ঢাকা সফরে আসছেন। চীনের মন্ত্রীর আসন্ন ঢাকা সফরকালে ৮টি চুক্তি ও সমঝোতা সইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও এই সফরে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় ছাড়াও আন্তর্জাতিক ও বহুপক্ষীয় বিষয়েও আলোচনা হতে পারে।
জানা গেছে, আগামী ৬ আগস্ট সকাল সাড়ে ১১ টায় চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াং ই দুই দিনের ঢাকা সফরে আসছেন। এই সফরে ৮টি চুক্তি ও সমঝোতার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত এসব সমঝোতা ও চুক্তির প্রস্তুতি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কাজ করছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত কয়টি চুক্তি ও সমঝোতা সই হবে সেটা এখনো চ‚ড়ান্ত হয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে ৫ থেকে ৬টি চুক্তি ও সমঝোতা সইয়ের আভাস পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, দুই দেশের মধ্যে যেসব চুক্তি ও সমঝোতা সইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে এর মধ্যে রয়েছে সংস্কৃতি বিষয়ক সহযোগিতা, দুর্যোগ প্রতিরোধ বিষয়ক সহযোগিতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চীনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম সহযোগিতা ও দুই দেশের মধ্যে টেলিভিশন প্রোগ্রাম বিনিময় বিষয়ক সহযোগিতা।
এর আগে ২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং ঢাকা সফরে আসেন। সে সময় দুই দেশের মধ্যে ২৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রীর ঢাকা সফরকালে এসবের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হবে। তবে সে সময়ের মতো এত বেশিসংখ্যক চুক্তি ও সমঝোতা সই হবে না। এছাড়া এখন কোনো ধরনের ঋণ চুক্তি করতেও আগ্রহী নয় ঢাকা। সে কারণে এবারের সফরে চীনের সঙ্গে কোনো ঋণ সহযোগিতা নিয়েও চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রীর ঢাকা সফরকালে আগামী ৭ আগস্ট সকাল সাড়ে ৯টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক হবে। এর আগে সকাল ৮ টায় পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে। এসব বৈঠকে ঢাকা- বেইজিংয়ের সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো নিয়ে আলোচনা হবে।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রী যখন ঢাকায় পৌঁছাবেন, তখন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন কম্বোডিয়া থেকে ঢাকার পথে থাকবেন। সে কারণে তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাবেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফর প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অনেক গভীর এবং বিস্তৃত। সে জায়গা থেকে আসন্ন সফরে একাধিক সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এর মধ্যে নবায়ন, নতুন সহযোগিতা, বিশেষ করে দুর্যোগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে। কোন কোন বিষয়ে চুক্তি বা সমঝোতা সই হতে পারে- জানতে চাইলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ তালিকা এখনও চ‚ড়ান্ত হয়নি, অপেক্ষা করতে হবে। তবে বেশ কয়েকটি চুক্তি বা সমঝোতা সই হতে পারে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত, বাংলাদেশের অব্যাহত সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে জড়িত, বাংলাদেশের নীতির সঙ্গে জড়িত। সংখ্যাটি পাঁচ বা সাত- এমন হতে পারে। তিনি বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় চুক্তি হতে পারে, যার মধ্যে হার্ডওয়ার ও সফটওয়ার দুটিই থাকবে। এর বাইরে সংস্কৃতি বিনিময় নিয়ে একটি চুক্তি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একটি শিক্ষা সংক্রান্ত বিনিময় চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দুর্যোগ সংক্রান্ত চুক্তিটি একটি প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করা হবে, যেখানে চীনের অর্থায়ন থাকবে। সেই হিসেবে দুর্যোগ প্রকল্পে চীনের ঋণ নেওয়া হতে পারে, তবে বৃহৎ কোনো প্রকল্পে চীনের ঋণ নিচ্ছি না।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই থাকবে। রোহিঙ্গা ইস্যু আমাদের টপ প্রায়োরিটিতে থাকা এজেন্ডা। এ সফরে এ ইস্যু গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। স¤প্রতি আসিয়ানের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে চীনের প্রতি শক্ত বার্তা দেওয়া হয়েছে এবং একইসঙ্গে চীনের স্টেট কাউন্সিলর যখন ভিজিট করছেন তার মাত্র দুই-আড়াই সপ্তাহ আগে আইসিজে রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাদের প্রাথমিক রায় দিয়েছে। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে যখন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সফরে আসছেন আমরা নিশ্চয়ই বার্তাটি দেব এবং তাদের আরও জোরালো ভ‚মিকা আহŸান করব। প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে রাজনৈতিক সমাধানের জন্য চীনের সহযোগিতা আমরা অবশ্যই চাইব। আমরা এই বার্তা পেয়েছি যে মিয়ানমার যে পথে যাচ্ছে, তা নিয়ে চীনেরও অসন্তোষ (রিজারভেশন) রয়েছে।
পররাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা সবসময়ই ‘এক চীন’ নীতিতে বিশ্বাস করি। আমরা চাই যে, এ ইস্যুতে পরিস্থিতির যাতে অবনতি না হয়। কেননা বিশ্ব যথেষ্ট সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের আহŸান হচ্ছে যে, সব পক্ষ যাতে এ ইস্যুতে সংযত আচরণ করে এবং জাতিসংঘের এ সংক্রান্ত নিয়ম মেনে চলে। আমরা আশা করি যে, এই পরিস্থিতির আর অবনতি হবে না। কেননা বিশ্ব এখন নতুন সঙ্কট বইতে পারবে না। অন্য বলয়গুলোর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কী হবে তা আমাদের ইস্যু। আমরা চাই না আমাদের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে কেউ পরামর্শ বা নির্দেশনা দিক। এ বিষয়ে বাংলাদেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে। তবে চীন বাংলাদেশের একটি বন্ধু রাষ্ট্র এবং তাদের অনেক পরিকল্পনার সঙ্গে আমাদের সম্মতি আছে।