নিউজ ডেস্ক:
ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনতার উদ্দেশে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ দেওয়া শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তৃতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালিত হল এ বার। ইতিমধ্যেই এই বক্তৃতাকে ইতিহাসের ঐতিহ্যশালী বক্তৃতার মর্যাদা দিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জের শাখা ইউনেস্কো। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অধিনায়ক শেখ মুজিব এই বক্তৃতাতেই প্রথম পাকিস্তানের কবল থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। যার যা-কিছু আছে, তা নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়ে সেই বক্তৃতায় তাঁর ঐতিহাসিক ঘোষণা ছিল— ‘এ বারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এ বারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
বস্তুত এই ঘোষণার কৃতিত্ব নিয়েই সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত বিএনপি-র সঙ্গে শাসক আওয়ামি লিগের বিবাদ। ৭ মার্চ শেখ মুজিবের এই ঘোষণার পরে স্বাধীনতাকামীরা বারে বারে সেই ঘোষণা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে থাকেন। প্রমাণ হয়েছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী ছেড়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া জিয়াউর রহমানও শেখ মুজিবের এই ঘোষণা পাঠ করেছিলেন বেতারে প্রচারের উদ্দেশ্যে। কিন্তু পরবর্তী কালে জন্ম নেওয়া বিএনপি-র নেতারা দাবি করেন, জেনারেল জিয়াই প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা করেন।
১৯৭৫-এ সেনা বাহিনীর একটি অংশ শেখ মুজিবকে হত্যা করে বাংলাদেশের ক্ষমতা দখল করার পর থেকে এই ঘোষণা প্রকাশ্যে বাজানো নিষিদ্ধ ছিল। এমনকি জিয়াউর রহমানের আমলেও সেই নিষেধাজ্ঞা তোলা হয়নি। এ বার স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপনের মধ্যে ৭ মার্চ পালনের কথাও বলেছে বিএনপি। গোটা মার্চ জুড়ে চলা এই অনুষ্ঠানের সূচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু তাদের ৭ মার্চ পালনকে ‘ভন্ডামি’ আখ্যা দিয়ে আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “হঠাৎ ৪৬ বছর পরে তাদের বোধোদয় হয়েছে। ৭ মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণ তারা শুধু নিষিদ্ধই করেনি, এ ভাষণ যারা বাজাত তাদের নির্যাতন করত, জেলে দিত এবং অনেককে নির্যাতন করে পঙ্গু পর্যন্ত করে দিয়েছে। সেই ৭ মার্চ তারা পালন করছে!”
কাদেরের কথায়— পালনও করছে, আবার দাবি করছে ‘জিয়াই স্বাধীনতার ঘোষক!’ এ দিন সকালে ধানমন্ডিতে শেখ মুজিবের স্মারকে ফুল দিয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে ওই বক্তৃতার ৫০ বছর উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নেন তিনি। হাসিনা বলেন, “স্বাধীনতার ঘোষণা তো ছিলই, সেই সঙ্গে স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের দিগ্নির্দেশনাও তিনি দিয়ে গিয়েছিলেন ওই বক্তৃতায়।” শেখ মুজিবের কন্যা হাসিনা জানান, অনেকে অনেক কথা বলার জন্য পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু শেখ মুজিব স্থির করেন, কোনও লিখিত বক্তৃতা তিনি পড়বেন না। তাঁর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেসা তাঁকে পরামর্শ দেন, এত দিনের রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি যা ভাল বুঝবেন, সেটাই যেন দেশবাসীর উদ্দেশে খোলা মনে বলেন। হাসিনা জানান, “অনেকে অনেক রকম কৃতিত্ব দাবি করেন। আমি জানি, আসল কৃতিত্বটা আমার মায়ের।”