মুক্তিযোদ্ধা হত্যা উৎসব, সিপাহি হত্যা উৎসব, নাকি সিপাহি-জনতা বিপ্লব? আসলে কোনটা ছিলো ১৯৭৫ সালের এই ঘটনা? ১৯৭৫ সাল, বাঙালি জাতির ইতিহাসে রক্তের সাগরে ভাসা চরম শোকগাঁথা একটা বছর। যেসময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ব্যাপক পরিবর্তন আসে সমুদ্রের অথই স্রোতের মতো। পাল্টে যায় দেশের রাজনৈতিক-সামজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট।
৭ নভেম্বর, ১৯৭৫। সেদিন থেকেই বাঙালি জাতির গৌরবময় ইতিহাস প্রবেশ করতে থাকে ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন এবং ঘোলাটে অধ্যায়ের সুড়ঙ্গে। সেই সময়কালের ইতিহাসকে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করা হয়েছে সবসময়; বিকৃত করা হয়েছে নির্দ্বিধায়। আসল সত্যিটা মানুষের কাছ থেকে আড়াল করার প্রয়াস হয়েছে। অনেকে অনেকভাবে এই দিনটিকে ব্যাখ্যা করেন।
বিএনপি এটাকে বলে ‘জাতীয় বিপ্লব এবং সংহতি দিবস’, প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের জাসদের মূল অংশ এটাকে বলে “সিপাহী জনতার অভ্যূত্থান”, আওয়ামী লীগ মনে করে “বিদ্রোহের নামে মুক্তিযোদ্ধা হত্যা দিবস’, আবার অনেকেই এটাকে ব্যাখ্যা করেন “ভয়াবহ কলঙ্কিত অধ্যায়’ হিসেবে। ৭ নভেম্বরকে ‘বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ বলাটা কতটা যুক্তিসংযত?
ক্ষমতা দখলের জন্যে তৎকালীন সেনাবাহিনীর উচ্চাভিলাষী, বিপথগামী কিছু অফিসারদের পারস্পরিক হানাহানি এবং নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডকে ‘বিপ্লব’ বলা চরম মূর্খতা ছাড়া আর কিছু নয়। ৭ নভেম্বরের ঘটনা ‘বিদ্রোহ’ ছিল, কোনোমতেই ‘বিপ্লব’ নয়। সেনাবাহিনীর মধ্যে এই বিপ্লব সৃষ্টি করে মূলত জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানীদের সরিয়ে দিয়ে চেয়েছিলেন নিজের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে। সিপাহী বিপ্লবের নামে এদিন থেকে শুরু হয় মুক্তিযোদ্ধা সেনা সদস্যদের হত্যা প্রক্রিয়া। ১৯৭৫ সালের এদিনে সিপাহী বিপ্লবের নামে প্রথমে হত্যা করা হয় তিন খ্যাতনামা মুক্তিযোদ্ধাকে। এরা হলেন, খালেদ মোশাররফ বীর উত্তম, কে এন হুদা বীর উত্তম এবং এটি এম হায়দার বীর বিক্রম। দশম বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদর দপ্তরে অবস্থানকালে সকালে তাদের একেবারে কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে কোম্পানি কমান্ডার আসাদ এবং জলিল।
ক্ষমতার লড়াইয়ে বিএনপি এটিকে দলীয় বিল্পব ভাবে। এই ন্যাক্কারজনক ঘটনাকে সিপাহী-জনতা-অভ্যুত্থান বলে এটিকে “বিপ্লব ও সংহতি দিবস” হিসেবে প্রচার করে থাকে। ক্ষমতায় থাকাকালীন এই ঘৃণিত দিনকে উদযাপন করেছে বিএনপি- স্বাধীন দেশে দেশমাতৃকার বীর সন্তানদের হত্যার উদযাপন, এর থেকে লজ্জার ঘটনা আর কি হতে পারে!