শনিবার , নভেম্বর ১৬ ২০২৪
নীড় পাতা / উন্নয়ন বার্তা / ৬৫ হাজার প্রাথমিক স্কুলে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ হচ্ছে

৬৫ হাজার প্রাথমিক স্কুলে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সারাদেশের ৬৫ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ করার কর্মসূচি নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই কর্নারে বঙ্গবন্ধুর ওপর লেখা বিভিন্ন বই রাখা হবে, যাতে শিশুরা শৈশব থেকেই বঙ্গবন্ধুর জীবন, রাজনৈতিক সংগ্রাম, জেল-কারাবরণ সম্পর্কে জানতে পারে। প্রথম দফায় ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’সহ আরও ৭টি বই কর্নারে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা’ বইয়ের মেধাস্বত্ব নিয়ে বিতর্ক ওঠায় পুরো বই কেনার প্রক্রিয়া আটকে যায়। এরপর পুরো বিষয়টি তদন্ত করতে গত ২৬ আগস্ট প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের একটি উপকমিটি গঠন করে। কমিটি একাধিক বৈঠক করে বই কেনায় কোনো অনিয়ম পায়নি- এই মর্মে জার্নি মাল্টিমিডিয়াকে দায়মুক্তি দিয়েছে। ফলে বঙ্গবন্ধু কর্নারে বই কেনায় আর কোনো বাধা রইল না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

এ ব্যাপারে উপকমিটির আহ্বায়ক ভারপ্রাপ্ত ও নারায়ণগঞ্জ ২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু বলেন, বঙ্গবন্ধু কর্নারের বই কেনা ও মেধাস্বত্ব প্রক্রিয়ায় আমরা নিয়মের কোনো ব্যত্যয় হয়েছে এমনটি খুঁজে পাইনি। বই নির্বাচন এবং জার্নি মাল্টিমিডিয়াকে কাজ দেওয়ার প্রক্রিয়াটি যথাযথ ছিল। ‘বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা’ এবং ‘৩০৫৩ দিন’ বই দুটির কপিরাইট সংক্রান্ত কাগজপত্র কমিটির কাছে সঠিক বলে প্রতীয়মান হওয়ায় তাদের দায়মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বই জালিয়াতির সংক্রান্ত যে অভিযোগ এসেছে সে ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। সেখানে কোনো সমস্যা আমরা দেখিনি । 

উপকমিটির সদস্যরা জানান, উপকমিটির তদন্ত রিপোর্টটি এখন সংসদীয় মূল কমিটির কাছে উপস্থাপন করা হবে। সেখানে আগামী বছরের ১৭ মার্চের আগে বঙ্গবন্ধু বুক কর্নারের নির্বাচিত ৬৬টি বই দ্রম্নত স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে। একই সঙ্গে অনিয়ম খুঁজে না পাওয়ায় কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠানের বিল ছাড় করার সুপারিশ করা হবে।

এদিকে মিরপুরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নিচতলায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’সহ আরও সাতটি বইয়ের কয়েক হাজার বান্ডেল স্তূপ পড়ে আছে। গত জুনে বই কেনা হলেও মেধাস্বত্ব নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় বইগুলো স্কুলে পাঠানো যাচ্ছে না। বিতর্কের অবসান হওয়ায় অবশিষ্ট বই কেনার প্রক্রিয়া শুরু করবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

জানা গেছে, সংসদীয় কমিটির সদস্যরা গত ২৯ সেপ্টেম্বর প্রথম বৈঠক করে মন্ত্রণালয়ের কাছে বই কেনার প্রক্রিয়ার নথিপত্র তলব করে তা যাচাই-বাছাই করেন। একই সঙ্গে বই কেনার প্রক্রিয়া চালু রাখার সুপারিশ করা হয়। পরে ২ নভেম্বর দ্বিতীয় বৈঠকে নির্বাচিত বই ক্রয়ের নথিপত্র পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করা হয়। মুজিববর্ষে ৬৫ হাজার সরকারি প্রাথমিক স্কুলে বঙ্গবন্ধু বুক কর্নার স্থাপনকে প্রশংসা করে সংসদীয় উপকমিটি। একই সঙ্গে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তালিকার অবশিষ্ট বই কেনা এবং চলতি বছরের মধ্যে স্কুলগুলোতে বই পৌঁছে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

এ ব্যাপারে কমিটি সদস্য এবং ভোলা ২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা’ বইয়ের গ্রন্থস্বত্ব ও মেধাস্বত্ব চুরির যে অভিযোগ এসেছিল, কমিটির পর্যালোচনায় সেগুলো প্রমাণিত হয়নি। একটি মহল ঈর্ষান্বিত হয়ে বঙ্গবন্ধু বুক কর্নারের জন্য নির্বাচিত বই ‘বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা’ এবং বঙ্গবন্ধুর কারাজীবন নিয়ে অহেতুক বিতর্ক তুলেছেন।

জানা গেছে, মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রাথমিক স্কুলে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ কর্মসূচির জন্য ৫ বছরে প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকার বই কেনার পরিকল্পনা করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এর মধ্যে চলতি বছর ২৮ কোটি বই কেনার অনুমতি দিয়েছে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। বাকি বই পরের বছরগুলোতে কেনা হবে। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত- একজন লেখকের একটি করে বই ৬৫ হাজার কপি করে কিনে স্কুলে বিতরণ করা হবে। চলতি বছর শিশু একাডেমি ও বঙ্গবন্ধুর ওপর লেখা ৩৮টি বই কেনার অনুমতি দেয় গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেই তালিকায় মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের বই ‘বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা’ বইটি নির্বাচিত হয়। কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠানটি সেই বইয়ের মেধাস্বত্ব অন্যের নামে চালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জার্নি মাল্টিমিডিয়া লিমিটেডের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটি বঙ্গবন্ধু কর্নারের জন্য ৬৫ হাজার বই সরবরাহ করে ১২ কোটি ৯৭ লাখ টাকার বিল ইতোমধ্যে অধিদপ্তরে জমা দিয়েছে। বিতর্কের কারণে সেই বিল আটকে দেওয়া হয়।

মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা’ বইয়ে শতভাগ মেধাস্বত্ব জার্নি মাল্টিমিডিয়া নিশ্চিত হওয়ার পর গত ১৬ জুন গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি করে। চুক্তির আগে বইয়ের স্বত্ব যাচাই করতে দুই দফা মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের এনওসি পাওয়ার পর চুক্তি কার্যকর করে। জার্নি মাল্টিমিডিয়া এবং মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ‘বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা’ বইয়ে ২৩ শতাংশ রয়েলিটির মোট ২ কোটি ৫৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকা মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়কে অগ্রিম পরিশোধ করে জার্নি মাল্টিমিডিয়া। এরপর প্রতিষ্ঠানটিকে গত ৩ জুন বই বিক্রির এনওসি দেয় মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়। এরপর ১ জুলাই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়কে চুক্তিটি সঠিক কি না জানতে চেয়ে চিঠি দেন। ২৩ শতাংশ রয়েলিটি হিসেবে আড়াই কোটি টাকার বেশি বুঝে পেয়েছেন এমন সত্যতা নিশ্চিত করে এরপর ৮ আগস্ট চিঠির জবাব দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় বই কিনতে প্রাথমিক অধিদপ্তরকে অনুমতি দেয়। এরপর গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়কে ফের চিঠি দেয় বইয়ের মালিকানা স্বত্ব সঠিক আছে কি না জানার জন্য। সেই চিঠির সত্যতা নিশ্চিত করে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়। এরপর জার্নি মাল্টিমিডিয়াকে কাজ দেওয়া হয়।

আরও দেখুন

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ‘রক্তের খোঁজে আমরা’র ২য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

নিজস্ব প্রতিবেদক চাঁপাইনবাবগঞ্জ ………..চাঁপাইনবাবগঞ্জে রক্তদান সামাজিক সেবামূলক সংগঠন ‘রক্তের খোঁজে আমরা’র ২য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। শুক্রবার …