নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশে জাইকার প্রধান প্রতিনিধি ইচিগুচি তোমোহিদে বলেছেন, আগামী ৬ ডিসেম্বর জাপানের সহযোগিতায় ‘আড়াইহাজার বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের’ প্রথম ধাপের উদ্বোধন হবে। আশা করা হচ্ছে—ঢাকার অদূরে আড়াইহাজারে শুধু জাপানের নয়, অন্যান্য দেশসহ স্থানীয়রাও বিনিয়োগ করবে। বিনিয়োগকারীদের জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন, ওয়ান-স্টপ সার্ভিস, এমনকি ঋণ সুবিধা দেওয়ার বিষয়েও কাজ করছে জাপানের উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান জাইকা। তিনি বলেন, ‘আরও জাপানি কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবে।’
বাংলাদেশে জাইকার প্রধান প্রতিনিধি ইচিগুচি তোমোহিদে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘জাইকাকে এ কাজে সহায়তা দিচ্ছে জাপানের সবচেয়ে বড় ট্রেডিং হাউজ সুমিটোমো। ওই কোম্পানিটির উন্নয়ন বিষয়ে দক্ষতা রয়েছে। ইতোমধ্যে সুমিটোমো ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ায় এ ধরনের প্রকল্প সফলতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করেছে। বাংলাদেশে ৩৫০টিরও বেশি জাপানি কোম্পানি কাজ করছে। আরও জাপানি কোম্পানি আসবে এবং এর জন্য জাইকা এবং জাপানি কোম্পানি সুমিটোমো কাজ করছে।’
আড়াইহাজার প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পাঁচটি সহযোগী প্রকল্প নিয়ে জাইকা কাজ করছে। এরমধ্যে রয়েছে—ভূমি উন্নয়ন এবং প্রকল্প এলাকায় ওয়ান-স্টপ সার্ভিস প্রতিষ্ঠা করা।
শুধু তাই না, ওই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় শেয়ারহোল্ডার হচ্ছে জাইকা (৫১ শতাংশ) এবং সরকারের প্রতিষ্ঠান বেজা’র যে শেয়ার রয়েছে সেটির অর্থও জাইকা দিয়েছে। এগুলো ছাড়াও স্থানীয় ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে জাইকা স্বল্প সুদে ঋণ দেবে, যারা এখানে বিনিয়োগ করবে বলে জানান ইচিগুচি তোমোহিদে।
উল্লেখ্য, আড়াইহাজারে প্রথম ধাপে ২৫০ একর জমি উন্নয়ন করা হয়েছে এবং দ্বিতীয় ধাপে আরও ২৫০ একর উন্নয়ন করা হবে।
ইচিগুচি তোমোহিদেমানবসম্পদ উন্নয়ন
মানবসম্পদ উন্নয়ন জাইকার একটি বড় লক্ষ্য। প্রধানত সরকারি কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য অনেক দিন ধরে কাজ করছে সংস্থাটি। কিন্তু এখন বেসরকারি খাতেও দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছে জাইকা, বিশেষ করে তথ্য-প্রযুক্তি খাতে। এর অন্যতম কারণ—এই খাতটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এবং জাপানে এই পেশার চাহিদা রয়েছে।
ইচিগুচি তোমোহিদে বলেন, ‘২০১৭ সালে আমরা একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিলাম, যার অধীনে বাংলাদেশিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরে জাপানে পাঠানো হয়, সেখানে কিছু প্রশিক্ষণের পরে তাদের চাকরি দেওয়া হয়। তিন বছর পর এটি বন্ধ হয়ে গেলেও বেসরকারি নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় জাপানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তায় সেই প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এবং জাপানে বাংলাদেশিদের এখনও পাঠানো হচ্ছে।’
‘গত পাঁচ বছরে ২০০-এর বেশি বাংলাদেশি জাপানে স্থায়ী চাকরি পেয়েছে। আশা করা হচ্ছে আরও বাংলাদেশি সেখানে যাবে’, বলেন তিনি।
এটি অত্যন্ত বিস্ময়কর যে এখন বেসরকারি খাত জাইকার সমর্থন ছাড়াই এটি সম্পন্ন করতে পারছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এটি শুরু করেছিলাম এবং যখন শেষ করলাম, তখন বেসরকারি খাত এ বিষয়ে আগ্রহ দেখালো। এর বড় কারণ হচ্ছে—জাপানে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে এবং বাংলাদেশে এই পেশার লোকের সংখ্যা অনেক। এটি সবার জন্য লাভজনক।’
এছাড়া গোটা তথ্য-প্রযুক্তি খাতের মানবসম্পদ উন্নয়নেও পদক্ষেপ নিচ্ছে জাইকা। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান বেসিস এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলকে সঙ্গে নিয়ে আগামী বছর এটির কাজ শুরু হবে বলে তিনি জানান।
জাইকার বাংলাদেশ প্রধানের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন বাংলা ট্রিবিউনের বিশেষ প্রতিনিধি শেখ শাহরিয়ার জামান
মাতারবাড়ি প্রকল্প
মাতারবাড়ি অঞ্চলকে ঘিরে অনেক বড় পরিকল্পনা রয়েছে জাপানের। এজন্য বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে মহেশখালী-মাতারবাড়ি ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (মিডি) মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে একটি স্টাডি করার কাজ আগামী বছর শুরু হবে। এই মাস্টারপ্ল্যানের উদ্দেশ্য হচ্ছে—ওই অঞ্চলে কোন ধরনের শিল্প গড়ে উঠবে এবং কোন ধরনের অবকাঠামো প্রয়োজন, সেটির একটি সমন্বিত পরিকল্পনা তৈরি করা।
ইচিগুচি তোমোহিদে বলেন, ‘এই স্টাডিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি করতে কয়েক বছর লাগবে। স্টাডির উদ্দেশ্য হচ্ছে—কোন ধরনের শিল্প ওই অঞ্চলে গড়ে তোলা সম্ভব, সেটি যাচাই করা। জ্বালানি এক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু একই সঙ্গে ভারী শিল্পের সম্ভাবনাও পর্যালোচনা করা হবে। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হচ্ছে—ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বিবেচনা করে ওই অঞ্চলকে ঘিরে কোন ধরনের অবকাঠামো প্রয়োজন, সেটির বিষয়ে একটি ধারণা পাওয়া।’
মাতারবাড়ি প্রকল্প শুরু হয়েছিল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প দিয়ে। এরপরে গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরির চিন্তা করা হয় এবং এখন এটির কাজ চলছে বলে তিনি জানান।
মাতারবাড়ি অঞ্চলকে ঘিরে আঞ্চলিক সহযোগিতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি ভবিষ্যতের বিষয়। এটি নির্ভর করবে আঞ্চলিক দেশগুলোর আলোচনার ওপর।’
ছবি: নাসিরুল ইসলাম