- নিয়ন্ত্রণ করবে ২২ কোম্পানি
- রাজধানীর ভেতরে বাইরের কোন বাস প্রবেশ করতে পারবে না
- এক এপ্রিল থেকে পাইলট প্রকল্প শুরু
- শহরের বাইরে হচ্ছে নতুন ১০ টার্মিনাল
- নির্দিষ্ট স্টপেজে থামবে, থাকবে টিকেট কাউন্টার
রাজন ভট্টাচার্য ॥ নয় ক্লাস্টারে বিভক্ত গোটা রাজধানী থাকবে ২২ কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে। এর আওতায় বর্তমানের ২৯১টি রুট বিন্যাস করা হয়েছে। নতুন বিন্যাসে ৪২টি রুটে রাজধানীর বাস চলাচলের জন্য চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে সিটি কর্পোরেশন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নয় ক্লাস্টার মানে নয় রঙের বাস চলবে। নতুন বছরের এপ্রিল মাস থেকেই শুরু হচ্ছে পাইলট প্রকল্প। প্রথম রুট ঘাটারচর থেকে মতিঝিল চূড়ান্ত করা হয়েছে। রাজধানীর যানজট নিরসনে নতুন এই প্রকল্প বাস্তবায়নে শহরের ভেতরে-বাইরের কোন বাস প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। এজন্য নগরীর আশপাশে নির্মাণ করা হবে ১০টি আধুনিক বাস টার্মিনাল। সেইসঙ্গে আধুনিক যানবাহন পরিচালনার জন্য পরিবহন মালিকদের চার ভাগ সুদে সরকারের পক্ষ থেকে ঋণ দেয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোন রকম শৃঙ্খলা ছাড়াই রাজধানীতে যানবাহন চলছে। দিন দিন বাড়ছে যানবাহনের সংখ্যা। যে কেউ ইচ্ছা করলেই নতুন নতুন বাস কোম্পানি করছেন। ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। যানজটের কারণে এখন বাসের গতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ চার কিলোমিটার। আগামী চার বছর পর বাসের গতি আর মানুষের হাঁটার গতি সমান হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার জরিপে। এরই ধারাবাহিকতায় বাস চলাচল শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসতে রেশনালাইজেশন প্রক্রিয়ার বাস্তবায়নের পথে হাঁটতে শুরু করে সরকার। যা ইতোমধ্যে আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছে।
অর্থাৎ আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ঢাকার বাস চলাচলের চিত্র একেবারেই পাল্টে যাবে। প্রকল্প শুরুর পর নির্দিষ্ট স্টপেজে বাস থামবে। যাত্রীদের টিকেটের জন্য থাকবে কাউন্টার। বাসগুলো নিয়মমতো চলছে কিনা তা পর্যবেক্ষণের জন্য থাকবে বিশেষ ব্যবস্থা। সব গাড়ি হবে আধুনিক। ইচ্ছা করলেই যে কেউ ইচ্ছেমতো নামতে ওঠতে পারবেন না। জানা গেছে, ক্লাস্টার প্রক্রিয়ার জন্য ইতোমধ্যে নয় রং নির্ধারণ করা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ কমলা, নীল, মেরুন, গোলাপি, বেগুনি, সবুজসহ আরও কয়েকটি। সবচেয়ে বড় কথা হলো নতুন এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ঢাকার সবকটি আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল সরিয়ে নেয়া হবে।
আলোর মুখ দেখছে নতুন উদ্যোগ ॥
অবশেষে আলোর মুখ দেখছে বাস-রুট রেশনালাইজেশন প্রক্রিয়া। মঙ্গলবার বৈঠক শেষে ঢাকার দুই মেয়র জানান, এপ্রিলের প্রথম দিন থেকে পরীক্ষামূলকভাবে চলবে এই প্রক্রিয়ায় বাস। প্রথম রুট ঘাটারচর থেকে মতিঝিল। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিজেদের মধ্যে সমন্বয় হয়েছে বলছেন বাস মালিক কর্তৃপক্ষ।
বাসরুট পুনর্বিন্যাস নিয়ে ১৪তম সভা শুরু হয় মঙ্গলবার ঢাকা দক্ষিণ সিটির নগর ভবনে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা চলে দুই মেয়র, বাস মালিক প্রতিনিধি আর সংশ্লিষ্টদের এই বৈঠক। গত বৈঠকের সুপারিশ মতে পুরো প্রক্রিয়ায় ৯টি ক্লাস্টারে ২২টি কোম্পানি, ৪২টি রুট চূড়ান্ত করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে পাইলটিং হিসেবে পহেলা এপ্রিল থেকে চলবে বাস। এ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস বলেন, আমরা দায়িত্ব বণ্টন করে দিয়েছি। এখন থেকে যে যার দায়িত্ব পালন করবে। সব কিছুই ৩১ মার্চের মধ্যে শেষ করা হবে। উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, সবাই কাজ করলে সমাধান সম্ভব। প্রয়োজনে দেয়া হবে আর্থিক সহায়তা। এদিকে এপ্রিলে পরীক্ষামূলকভাবে এই প্রক্রিয়ায় বাস চালুর প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন মালিকপক্ষ। আগামী ১৯ জানুয়ারি পরবর্তী বৈঠক হবে।
অন্য পরিবহনগুলোর কি হবে ॥ বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটিÑবিআরটিএর হিসাব অনুযায়ী রাজধানীর ২৯১টি রুটে বাস চলাচল করছে। চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত নগরীতে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ১৬ লাখ নয় হাজারের বেশি। এরমধ্যে বাস ও মিনিবাসের সংখ্যা ৪৬ হাজারের বেশি। ২০ রকমের নিবন্ধিত যানবাহনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মোটরসাইকেলের সংখ্যা সাত লাখ ৮২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়ক অনুপাতে রাজধানীতে তিন লাখের বেশি যানবাহন চলতে পারে না। যদিও নিবন্ধিত যানবাহনের পাশাপাশি প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীতে প্রবেশ করে কমপক্ষে তিন লাখ যানবাহন। অযান্ত্রিক ও নিষিদ্ধ যানবাহন চলছে ১০ লাখের বেশি। এই প্রেক্ষাপটে নগরীতে যানজট সমস্যারও সমাধান হচ্ছে না। তেমনি সড়কে শৃঙ্খলা ফিরছে না। একের পর এক উড়াল সড়ক নির্মাণেও চলাচলের গতি বাড়ছে না সড়কে।
তাই যানজট নিরসন এবং গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে রাজধানীর ৪২ রুটে ২২ কোম্পানির মাধ্যমে বাস চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। প্রশ্ন হলো যানজট নিরসনে বাসের শৃঙ্খলা এলেও অন্যান্য পরিবহনের বিষয়ে সরকারের চিন্তা আসলে কি?
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, বৈঠকে শুধুমাত্র বাস নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অন্য পরিবহনগুলো কিভাবে চলাচল করবে তা নিয়ে সুস্পষ্ট কিছু বলা হয়নি।
এর আগে আনিসুল হক যখন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ছিলেন, সে সময় তিনি ঢাকার গণপরিবহন সঙ্কট লাঘবে বিদেশ থেকে চার হাজার বাস এনে সেগুলো সাতটি আলাদা কোম্পানির হাতে ছেড়ে দেয়ার পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন। তবে তার মৃত্যুর পর বিষয়টি আর এগোয়নি।
সম্প্রতি এ সংক্রান্ত বৈঠকে তাপস বলেন, নতুন ব্যবস্থা চালু হলে ঢাকার বাইরে থেকে কোন গণপরিবহনকে রাজধানীতে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। এখন যেমন অন্যান্য শহর থেকে বাসগুলো ঢাকায় ঢুকছে। গাজীপুর থেকে বাসগুলো মতিঝিল পর্যন্ত আসছে অথবা নারায়ণগঞ্জ থেকে বাসগুলো চলে যাচ্ছে গাবতলী পর্যন্ত। এই পুরো বিষয়টাকে আমরা সমন্বয় করব, যাতে বাইরে থেকে যে বাসে করে যাত্রীরা ঢাকায় আসছেন, তারা ঢাকার সীমানা সংলগ্ন কোন একটি বাস টার্মিনালে নামেন। সেখান থেকে অন্য বাসে করে গন্তব্যে পৌঁছাবেন। মেয়র বলছেন, এ ব্যবস্থা করা হলে ঢাকার ওপর চাপ ‘অনেক কমে যাবে’।
তাপস বলেন, এখন রাজধানীতে মাত্র তিনটি বাস টার্মিনাল আছে। এর মধ্যে দুটি উত্তরে, একটি দক্ষিণে। বাকি বাসগুলো রাস্তায় রাখা হয়। তাতে যানজট হয়। এসব বিষয় অলোচনায় ঢাকায় বাস রাখার জন্য প্রাথমিকভাবে দশটি টার্মিনাল করার প্রস্তাব এসেছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে গত পাঁচ নবেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকা মহানগরীর পরিবহন ব্যবস্থা সুশৃঙ্খল করতে হলে বাস রুট সংস্কারের কোন বিকল্প নেই। ‘ঢাকা মহানগরীর সড়ক নিরাপত্তা : ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের ভূমিকা ও উদ্যোগ’ শীর্ষক এক আলোচনায় তিনি আরও বলেন, সড়কের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় সরকার এখন যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা আরও ৩০ বছর আগে করার দরকার ছিল। তিনি বলে, বিগত কয়েক বছরে সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে ইর্ষণীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়ন যতই হোক, সড়কে এবং পরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে না পারলে, নিরাপদ করতে না পারলে আমাদের সব উন্নয়ন ম্লান হয়ে যাবে।
রাজধানীর যানজট নিরসনে সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের সঙ্গে একমত মালিক সমিতির নেতারাও। বাস মালিক সমিতির নেতা খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ঢাকায় যানজট দিন দিন বাড়ছে। এজন্য অনেক পরিবহন কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে। ঘণ্টায় চার কিলোমিটার গতিতে যানবাহন চলতে পারে না। আগামী চার বছর এ অবস্থা থাকলে হাঁটার গড়ি আর গাড়ির গতি হবে সমান। এই প্রেক্ষাপটে যানজট নিরসনে যানবাহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও নির্দিষ্ট কোম্পানির মাধ্যমে বাস পরিচালনার উদ্যোগ অনেক আগে থেকেই নেয়া হয়েছিল। এর সফল বাস্তবায়ন হলে আমরাও মনে করি যানজট কমবে। মালিকরা লাভবান হবে। যাত্রীরাও নিরাপদে চলাচলের সুযোগ পাবে।
পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীতে যানজটের অন্যতম কারণ হচ্ছে, মাত্রাতিরিক্ত ব্যক্তিগত গাড়ি ও রিক্সা। এছাড়া রাস্তার স্বল্পতা, সমন্বয়হীন রুট পারমিট, মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি চলাচল, অপ্রশস্ত সড়ক, বেপরোয়া বাস-মিনিবাস, যত্রতত্র ট্রাকস্ট্যান্ড, রেলগেট, মিনিবাস ও মাত্রাতিরিক্ত হিউম্যান হলার যানজটকে স্থায়ী রূপ দিয়েছে।
অপরদিকে বছরজুড়ে সেবা সংস্থাগুলোর খোঁড়াখুঁড়ি, জলাবদ্ধতা, অপরিকল্পিত পার্কিং, ফুটওভারব্রিজ ব্যবহারে অনীহা ও রাস্তাজুড়ে আবর্জনার কনটেনার দুঃসহ যানজট সৃষ্টির অন্যতম কারণ। পাশাপাশি পার্কিংবিহীন বহুতল ভবন, অটো সিগন্যালের অভাব, রাস্তার ওপর বাস টার্মিনাল, একমুখী রাস্তায় ডিভাইডার, যত্রতত্র হকার্স মার্কেট-কাঁচাবাজার গড়ে তোলাসহ ভাঙাচোরা রাস্তা যানজটকে দীর্ঘায়িত করছে।
এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, যানজট নিরসনে রাজধানীর সড়ক পরিবহন সেক্টর নিয়ে ২০০৫ সালে তৈরি করা স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানে (এসটিপি) বাস রুট রেশনালাইজেশনের বিষয় রয়েছে। সেই এসটিপি বাস্তবায়ন করলেই তো হয়ে যায়।
নৌ সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে বলেন, নগরীর যানজট একটি পুরনো সমস্যা। এসটিপি তৈরি থেকে শুরু করে নগর নিয়ে যত রকমের উন্নয়ন পরিকল্পনা হয়েছে এর প্রত্যেকটিতে যানজট নিরসনে সঠিক গাইড লাইন রয়েছে। কিন্তু কোন গাইড লাইনের কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন হয় না। এজন্য আমরা বারবার পরিকল্পনা নিয়ে পিছিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, অনেক পরে হলেও এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তা দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নের তাগিদ দেন তিনি। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা।
রাজধানীর আশপাশে ১০ টার্মিনাল ॥ যানজট নিরসনের লক্ষ্যে রাজধানীতে আর বাস প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। এজন্য শহরের আশপাশের এলাকায় ১০টি আধুনিক টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে শহরে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী এই প্রধান তিনটি টার্মিনালে বর্তমানে দেড় হাজার বাসের ধারণক্ষমতা রয়েছে। অথচ এসব স্থানে বাস রয়েছে প্রায় ১২ হাজারের অধিক।
এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের ওপর পার্কিং করে রাখা হয় কয়েক হাজার বাস। যার ফলে সরু হয়ে যাচ্ছে যানবাহন চলাচলের সড়ক। এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে গাজীপুর (১১ দশমিক ৭০ একর), নবীনগর-চন্দ্রা রোডের বাইপাইল (৪০ দশমিক ৪০ একর), কাঁচপুর উত্তর (১৫ দশমিক ৪৬ একর), কাঁচপুর দক্ষিণ (২৭ দশমিক ৭১ একর), কেরানীগঞ্জের বাঘৈর (৩৩ দশমিক ৬৩ একর), সাভারের হেমায়েতপুর (৩৬ দশমিক ৫০ একর), বিরুলিয়া (১৪ দশমিক ৫৩ একর), কাঞ্চন এলাকা (২৪ দশমিক ২৪ একর), আটিবাজারের ভাওয়াল (২৫ দশমিক ৭৮ একর) এবং ভুলতা (২৪ দশমিক ২২ একর) এলাকায় টার্মিনাল করার প্রস্তাব করেছে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি।
সব স্থানে টার্মিনাল নির্মাণ হলে আন্তঃজেলার বাসগুলো রাজধানীর মধ্যে ঢুকতে পারবে না। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা গণপরিবহনগুলো টার্মিনালেই যাত্রীদের নামিয়ে দেবে। যাত্রীরা সেখানে থেকে রাজধানীতে প্রবেশ করবে নগরীর ভেতরে চলমান গাড়িতে করে।
জানা যায়, ডিএনসিসির তৎকালীন মেয়র আনিসুল হক ২০১৫ সালে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব গ্রহণের পর রাজধানীর যানজট কমাতে উদ্যোগী হন। গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে মাঠে নামেন। একাধিক সভা করেন গণপরিবহন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে। বাস রুট রেশনালাইজেশন ও কোম্পানির মাধ্যমে বাস পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন। তবে তার মৃত্যুতে এ উদ্যোগ থেমে যায়। পরে রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানো ও যানজট নিরসনে ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর এক আদেশে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমদ খান ১০ সদস্যের একটি কমিটি করে প্রজ্ঞাপন জারি করেন। এ কমিটির আহ্বায়ক করা হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনকে। কমিটিতে রাখা হয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) তখনকার প্যানেল মেয়র, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন (বিআরটিসি) চেয়ারম্যান, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) চেয়ারম্যান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এসএম সালেহ উদ্দিন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সভাপতি ও ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালকে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলেছে নানা সমীক্ষা। এই সময় কমিটির সভা হয় ১২টি। বর্তমানে ওই কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। গত ১০ নবেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনে বসে ১৩তম সভা। জমা দেয়া হয় সমীক্ষার প্রতিবেদন।
গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এসএম সালেহ উদ্দিন বলেন, স্বাধীনতার পর গণপরিবহনের উপর তেমন একটা নজর দেয়া হয়নি। টার্মিনাল নিয়ে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। যার ফলে ধীরে ধীরে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। তবে সরকার বর্তমানে আন্তরিক। আমরা রাজধানীর যানজট কমাতে ১০টি টার্মিনাল করার প্রস্তাব করেছি। আমরা চাচ্ছি সরকারী জায়গা। সেখানে এসব টার্মিনাল নির্মাণ হবে।
বাস মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, মঙ্গলবারের বৈঠকে প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। প্রতিটি ক্লাস্টার জোনের বাসের রং হবে ভিন্ন ভিন্ন। অর্থাৎ একেক ক্লাস্টারে একেক রঙের বাস চলবে। যে কেউ দেখলেই বুঝতে পারবেন এই বাসটি কোন এলাকার। তিনি বলেন, বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিটি রুটে আধুনিক বাস পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে চারভাগ সুদে মালিকরা ঋণ পাবেন। এখন একটি রুটে ২০০ গাড়ি চলাচল করলে নতুন প্রকল্পের আওতায় সাধারণ মানুষ এত বাসের সুবিধা পাবেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কোন রুটে বাস কমবে না। পর্যাপ্ত বাস থাকবে সব রুটেই। বাসগুলো আধুনিক করে যানজট কমিয়ে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে পরিচালনা সম্ভব হলে সবাই এক সময় বাস ব্যবহার করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।