নিউজ ডেস্ক:
নির্বাচনের বছরে নেই নির্বাচন কর্মকর্তা। তাহলে কারা নির্বাচন পরিচালনা করবেন। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিল। তাদের দুশ্চিন্তা দূর করে দিচ্ছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। ৪০০ নির্বাচন কর্মকর্তা বাছাইয়ের কাজ শেষ করেছে সাংবিধানিক সংস্থাটি। তাদের নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করা হবে এ মাসেই। এসব কর্মকর্তার মধ্যে ৯০ জন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং ৩১০ জন সহকারী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচন অফিসারদের সুপারিশ করতে সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহ লাগবে। এর বেশি সময় লাগার কোনো কারণ নেই।’
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার পদ শূন্য থাকায় ভোটার তালিকা হালনাগাদ থেকে শুরু করে নির্বাচনসংক্রান্ত নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালনায় সমস্যা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে পাশের উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে শূন্য জায়গায় অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। ফলে দুই উপজেলায় কাজ করতে গিয়ে ওই কর্মকর্তা কোনো অফিসেই সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। নির্বাচনে জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) রিটার্নিং অফিসার এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) সহকারী রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন। নির্বাচন কর্মকর্তারা তাদের দাপ্তরিক কাজে সহায়তা করেন। কয়েক বছর ধরে, বিশেষ করে উপনির্বাচনে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদেরই সহকারী রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন ফোরাম বা গোষ্ঠী নির্বাচন কর্মকর্তাদের দিয়েই নির্বাচন পরিচালনার জন্য চাপ দিয়ে আসছে।
সংশোধিত আরপিওতে বলা হয়েছে, একজন জেলা প্রশাসককে একটি আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হবে। এ অবস্থায় উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব আরও বেড়ে যাবে।
নির্বাচন কমিশনের সুপারিশে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর ৫১৭ জন সহকারী উপজেলা নির্বাচন অফিসারের পদের অনুমোদন দেয়। এরপর নানা জটিলতায় এই পদে নিয়োগ দিতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। আগে এই পদের নিয়োগবিধি ছিল না। নির্বাচন কমিশন নিয়োগবিধি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সেখান থেকে প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটিতে অনুমোদন হয়। এরপর পিএসসিকে নিয়োগের জন্য চাহিদাপত্র পাঠায় নির্বাচন কমিশন।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা পদ দুটি নন-ক্যাডার শ্রেণির। এর মধ্যে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নবম গ্রেডের এবং সহকারী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা দশম গ্রেডের। এই দুটি পদে ৪০০ কর্মকর্তার চাহিদা পেয়ে পিএসসি লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার কথা চিন্তা করেছিল। কিন্তু নির্বাচন কমিশন পিএসসিকে জানায়, এসব পদে জরুরিভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। কারণ তারা আগামী সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করবেন। নিয়োগ দেওয়ার পর তাদের কয়েক মাসের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এ অবস্থায় পিএসসি লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার চিন্তা থেকে সরে আসে। তারা ৪০তম বিসিএস থেকে এসব কর্মকর্তাকে সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
বিসিএস পাস কিন্তু পদ স্বল্পতার কারণে যাদের ক্যাডার পদে সুপারিশ করা যায় না, তাদের বিভিন্ন দপ্তরের নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এতে করে একদিকে সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন মেধাবী কর্মকর্তা পায়, তেমনি পিএসসি অল্প সময়ের মধ্যে তাদের নিয়োগের সুপারিশ করতে পারে। আর চাকরিপ্রার্থীদের দিক থেকে সুবিধা হলো তারা একই পরীক্ষায় ক্যাডার পদ না পেলেও নন-ক্যাডার পদে চাকরি পাচ্ছেন।
কিন্তু ৪০তম বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করার পরও পিএসসি নন-ক্যাডারের সুপারিশ চূড়ান্ত করতে পারছিল না। নিয়ম অনুযায়ী ক্যাডার বঞ্চিতদের নন-ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রার্থীদের আবেদন চাওয়া হয়। তাদের আবেদন পাওয়ার পর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী (পুর) / উপজেলা সহকারী প্রকৌশলীর ১৫৬টি পদে নিয়োগ জটিলতা দেখা দেয়। বিষয়টি আদালতে গেলে ১৫৬ পদ রেখে অবশিষ্ট পদে নিয়োগ সুপারিশ করার অনুমতি পায় পিএসসি। মামলার কারণে এই নিয়োগ-প্রক্রিয়া আটকে যায়। কিন্তু এখন আর কোনো বাধা না থাকায় সুপারিশের কাজ শুরু করেছে পিএসসি। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ৪০০ নির্বাচন কর্মকর্তাসহ ৪ হাজার ৩২২ জনকে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এ মাসেই চূড়ান্ত সুপারিশ করবে পিএসসি।