নিউজ ডেস্ক:
কোরবানির ঈদের মাস জুনে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ঢল নেমেছে। এ মাসে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রায় ২২০ কোটি ডলার, যা গত ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এটি তার আগের মাসে চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ এবং গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে সাড়ে ১৯ শতাংশ বেশি। সব মিলে সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে সাড়ে ২১ বিলিয়ন ডলারের (২ হাজার ১৫০ কোটি) বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই আয় তার আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় পৌনে ৩ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, প্রতিবছর দুই ঈদের আগে পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি অর্থ পাঠান প্রবাসীরা। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বরং এবার ঈদের আগে রেমিট্যান্সে এক প্রকার ঢল নেমেছে। হুন্ডি প্রতিরোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া নানা পদক্ষেপ এবং খোলাবাজারের সঙ্গে ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের দামের পার্থক্য কমে আসাও রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে বলে জানান তারা।
ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণ উৎসাহিত করতে ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে ২ শতাংশ হারে
নগদ প্রণোদনা দিয়ে আসছিল সরকার। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে তা বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করা হয়েছে। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী এতদিন ১০০ টাকা দেশে পাঠালে ১০২ টাকা পেতেন। এখন পাচ্ছেন ১০২ টাকা ৫০ পয়সা। গত বছরের ২৩ মে যত খুশি তত রেমিট্যান্স পাঠানোর পথ সহজ করে দিয়ে সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে অনুযায়ী এখন পাঁচ হাজার ডলারের ওপরে বা ৫ লাখ টাকার বেশি রেমিট্যান্স এলেও কোনো ধরনের কাগজপত্র ছাড়াই প্রণোদনা পাচ্ছেন প্রবাসীরা। এ ছাড়া খোলাবাজারের সঙ্গে ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের দামের ব্যবধান কমিয়ে আনতেও নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপও বৈধ পথে প্রবাসী আয় বাড়াতে সহায়ক হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, সর্বশেষ গত জুন মাসে প্র্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এটি গত মাসের চেয়ে ৫০ কোটি ৭৩ লাখ এবং গত বছরের একই মাসের চেয়ে ৩৬ কোটি ১৭ লাখ ডলার বেশি। গত বছরের জুনে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৮৩ কোটি ৭২ লাখ ডলার। এর আগে সর্বোচ্চ ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স আসে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে। তখনও কোরবানির ঈদের আগেই রেমিট্যান্সে এমন ঢল নেমেছিল। তবে এরপর কোনো মাসেই এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত জুনের আগে টানা দুই মাস রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল ২০০ কোটি ডলারেরও নিচে। এর মধ্যে গত মে মাসে রেমিট্যান্স আসে ১৬৯ কোটি ১৬ লাখ ডলার। আর এপ্রিলে এসেছিল আরও কম, ১৬৮ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। তবে রোজার ঈদের কারণে মার্চ মাসেও রেমিট্যান্স ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছিল। ওই মাসে রেমিট্যান্স আসে ২০২ কোটি ২৪ লাখ ডলার। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিমাণও বেড়েছে। যেমন- জুনে আসা প্রায় ২২০ কোটি ডলার রেমিট্যান্সের মধ্যে প্রথম ৯ দিনে আসে ৫৭ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। ১০ থেকে ১৬ জুন পর্যন্ত আসে ৫৫ কোটি ডলার। ১৭ থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত আসে ৬৭ কোটি ডলার। আর ২৪ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত এসেছে ৪০ কোটি ২২ লাখ ডলার।
এদিকে, শেষ মাসে প্রবাসী আয়ে ঢল নামার কারণে পুরো অর্থবছরের প্রবৃদ্ধিতে তা বড় ভূমিকা রেখেছে। প্রতিবেদন বলছে, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ২ হাজার ১৬১ কোটি (২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন) কোটি ডলার। এটি তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ের গতি ছিল নিম্নমুখী। ওই অর্থবছরে প্রবাসীরা ২ হাজার ১০৩ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠান, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ কম ছিল। অথচ করোনার মধ্যেই ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে বড় রেকর্ড হয়েছিল। ওই অর্থবছরে প্রবাসীরা প্রায় ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠান, যা কোনো এক অর্থবছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। এটি ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে ৩৬ শতাংশ বেশি ছিল।
প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, গত অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৩৩৯ কোটি ৯১ লাখ ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৫২ কোটি ২২ লাখ ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১ হাজার ৭৬১ কোটি ২০ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৭ লাখ ৭১ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। বরাবরের মতো এবারও সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের মাধ্যমে। এ ব্যাংকের মাধ্যমে পুরো অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছে ৪৭১ কোটি ডলার।
এদিকে দাতা সংস্থারগুলোর বাজেট সহায়তা ও প্রবাসী আয়ের ওপর ভর করে গত মাসেই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করেছে। গত ২৬ জুন দিনশেষে রিজার্ভের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৩১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারে।