নিউজ ডেস্ক :
বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে হিমশিম খাওয়া ভোক্তাদের কিছুটা স্বস্তি দিতে ২৮টি প্রয়োজনীয় পণ্য ও খাদ্যশস্য সরবরাহের ওপর উৎসে কর অর্ধেক করে ১ শতাংশ করতে যাচ্ছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছন, চাল, গম, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, মটর, ছোলা, মসুর, আদা, হলুদ, শুকনা মরিচ, ডাল, ভুট্টা, ময়দা, আটা, লবণ, ভোজ্যতেল, চিনি, গোলমরিচ, এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, খেজুর, তেজপাতা, পাট, তুলা, সুতা এবং সব ধরনের ফলের সরবরাহের ওপর বর্তমান ২ শতাংশের পরিবর্তে উৎসে ১ শতাংশ কর কাটা হবে বলে জানান তারা। অন্যদিকে আড়াই কেজি পর্যন্ত ওজনের প্যাকেটজাত গুঁড়াদুধ আমদানিতে মোট করহার ৮৯ দশমিক ৩২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫৮ দশমিক ৬০ শতাংশ করার পরিকল্পনা করছে। বর্তমানে গুঁড়াদুধের বাল্ক আমদানিকারকদের জন্য মোট করহার ৩৭ শতাংশ। এ ছাড়া সরকার গুঁডাদুধের বাল্ক পরিমাণ আমদানিকারকদের জন্য আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম আয়কর হিসাব করার পরিকল্পনা করছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আসন্ন বাজেটে ভোক্তাদের ওপর চাপ কমাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এসব পদক্ষেপ নিয়েছে। আগামী ৬ জুন জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বাজেট প্রস্তাব করবেন। এর আগে ১৪ মে প্রধানমন্ত্রী দেশের উচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতির পরিপ্রেক্ষিতে আসন্ন বাজেটে খাদ্য, কৃষি-সংক্রান্ত জিনিসপত্র এবং সারের ওপর কর না বাড়ানোর নির্দেশনা দেন। এনবিআরসূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত নীতিগত পরিবর্তন সম্পর্কে অবগত করতে এনবিআরের রাজস্ব-নীতি বিষয়ক কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত সূত্র জানায়, খাদ্য মূল্যস্ফীতি ইতোমধ্যেই বেশি হওয়ায় খাদ্য ও খাদ্য-সংশ্লিষ্ট পণ্যের ওপর কোনো শুল্ক বা কর না বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী এনবিআরকে নির্দেশ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে অগ্রিম আয়করের বিরোধিতা করে আসছি। তবে কর কমানোর যে কোনো পদক্ষেপ সবসময়ই স্বাগত। সরকার যদি কোনো কর ১ শতাংশ হারে কমায়, তাহলে তা স্থানীয় ব্যবসা ও ব্যবসায়ীদের জন্য খুবই সহায়ক হবে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন স্বাগত জানিয়ে বলেন, সিপিডি উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে এ ধরনের কর হ্রাসের পক্ষে অনেক আগে থেকেই কথা বলছে। এটি ভোক্তাদের জন্য একটি সুবিধা, আমদানিকারকদের জন্য নয়। আর সরকারকে অবশ্যই এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরো বলেন, কর কর্তনের ব্যবস্থা প্রায়শই বাজারে পুরোপুরি প্রতিফলিত হয় না। সুতরাং এখানে বাজার ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহে কর কমানো খুবই ইতিবাচক পদক্ষেপ। আমরা দীর্ঘদিন ধরে করহার কমানোর জন্য অনুরোধ করছি। এ উদ্যোগ খাদ্য মূল্যস্ফীতি রোধে সহায়ক হবে বলেন তিনি। প্যাকেটজাত গুঁড়াদুধের আমদানিতে শুল্ক কমানোর ফলে ফিনিশড পণ্য আমদানিতে আগ্রহ বাড়বে উল্লেখ করে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, আমদানি বা ক্রয় মূল্য কমে গেলে তা খুচরা মূল্যে প্রতিফলিত হওয়া উচিত। তিনি আরো বলেন, যখন আপনার খরচ কমবে, তখন ভোক্তাদের তা থেকে উপকৃত হওয়া উচিত। মাহবুবুল আলম আরো বলেন, সরকার গুঁড়াদুধ আমদানিকারকদের জন্য অগ্রিম আয়করের হার না বাড়ালে এবং এটিকে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হিসেবে বিবেচনা করলে ব্যবসায়িক সুবিধা হবে।