ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ছাত্রীকে ‘দুশ্চিরত্র’ বলেছেন মামলার অন্যমত আসামি ডাকসুর সদ্য সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর ৷ এই মন্তব্যের জন্য নুরুলকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ৷
মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক সমাবেশে তুরিন আফরোজ এই দাবি জানান৷ ধর্ষণ ও ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগে গত ২০ ও ২১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর লালবাগ ও কোতোয়ালি থানায় নুরুল ও ছাত্র অধিকার পরিষদের সাময়িক অব্যাহতি পাওয়া আহ্বায়ক হাসান আল মামুনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেন এই ছাত্রী৷ সেই মামলায় নিজের সংগঠনের দুই নেতাকে গ্রেপ্তারের প্রতিক্রিয়ায় গত সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের পেইজ থেকে লাইভে এসে নুরুল ওই মন্তব্য করেন৷
নবেন্দু নির্মল সাহা নামের এক ব্যক্তির উদ্যোগে ‘ফাতেমার পাশে আমরা’ শিরোনামে আয়োজিত এই সমাবেশে সংহতি জানিয়ে তুরিন আফরোজ বলেন, আমরা ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের আইন পেতে যাচ্ছি৷ কিন্তু শুধু আইন করেই সবকিছু হয় না৷ আইনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন দরকার৷ যেখানে আমরা একজন নির্যাতিত নারীর পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছি, সেখানে একজন নির্লজ্জ কুলাঙ্গার তাঁকে চরিত্রহীন বলছে৷ এই যে ধৃষ্টতা সে দেখাচ্ছে, সেই নুরুলের সাহস আসলে কোথায়? আমি জানি, আইন তার নিজের গতিতে চলবে৷ একজন নির্যাতিত নারীকে দুশ্চরিত্রা বলার দায়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে আটক করা না হলে আমরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব, ঘরে ঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেব৷
করোনা মহামারির মধ্যে অভিবাসীদের প্রতি মালয়েশিয়া সরকারের আচরণ নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলায় গত আগস্টে গ্রেফতার হওয়া রায়হান কবির বলেন, ধর্ষকদের কোনো দল বা সংগঠন নেই৷ ধর্ষকের বিকারগ্রস্ত মানসিকতাই ধর্ষণের জন্য দায়ী৷ আমি মালয়েশিয়ায় বাংলার মেহনতি মানুষের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে কারাভোগ করেছি, জেল-জুলুমের শিকার হয়েছি৷ আজকে সেই আমাকেই নিজের দেশে ব্যানার হাতে প্রতিবাদ করতে হচ্ছে৷ দেশে ধর্ষণের পরিসংখ্যান দেখে হতভম্ব ও লজ্জিত হই৷ আমিও পুরুষ, লজ্জায় মাথা নত হয়ে আসে৷ সাধারণ মানুষ হিসেবে আমি সব ধরনের ধর্ষকদের বিরুদ্ধে৷ যখন যৌক্তিক আন্দোলনকে রাজনৈতিক মোড়ক দেওয়া হয়, তখন আমার কষ্ট হয়৷ ধিক্কার জানাই, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুলকে, যিনি লাইভে এসে নির্যাতিত ছাত্রীকে নিয়ে খারাপ কথা বলেছেন৷ এটা পটেনশিয়াল ধর্ষকের লক্ষণ৷
২০০১ সালে ধর্ষণের শিকার হওয়া পূর্ণিমা রাণী শীল সমাবেশে বলেন, নিপীড়িত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধর্ষককে জুতাপেটা করে শাস্তি দেওয়া উচিত৷ এখনও মামলার জন্য মাঝেমধ্যে আমাকে আদালতে গিয়ে দাঁড়াতে হয়৷ আমি ফাতেমার পাশে আছি৷ নুরুলসহ সব আসামিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে৷
যৌন নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীজোটের আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুলের কড়া সমালোচনা করে বলেন, ‘নুরুল সেই সমাজের প্রতিনিধি, যে সমাজ নারীকে ঘরে বন্দি করতে চায়৷ সরকার ঠিক কিসের ভয়ে নুরুলসহ ধর্ষকদের কেন গ্রেফতার করছে না? ধর্ষণের বিচার-প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা কাটাতে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল করতে হবে, প্রত্যেক থানায় নারী সেল গঠন করতে হবে, আইন সংশোধন করতে হবে৷
অপরাজেয় বাংলার সদস্যসচিব এইচ রহমান মিলু বলেন, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল ক্ষমতাশালী হওয়ায় তাঁর ক্ষেত্রে আইন কাজ করছে না৷ অন্যান্য ঘটনায় আসামিরা গ্রেফতার হলে নুরুলের ক্ষেত্রে কেন কালক্ষেপণ করা হচ্ছে? এই ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে অপরাজনীতি করার চেষ্টা হচ্ছে৷ ধর্ষণের ঘটনায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার হয়ে থাকলে নুরুল কেন নয়? নুরুলের ক্ষেত্রে কেন আইনের শাসন কাজ করে না? সে কি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী নাকি প্রধান বিচারপতি? নুরুলের পক্ষে এখন জামায়াত ও বিএনপি কাজ করছে৷ সব ধর্ষক গ্রেফতার হয়, নুরুল কেন গ্রেফতার নয়?