নিউজ ডেস্ক : ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। আওয়ামী লীগ শূন্য করার একটি মহাপরিকল্পনা হাতে নেয় তত্কালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। বিএনপির তত্ত্বাবধায়নে ঢাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালায় হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী-হুজির জঙ্গিরা। মুফতি হান্নানের নির্দেশনায় ওই আক্রমণে সরাসরি অংশ নেয় প্রশিক্ষিত ১২ জঙ্গি। হামলায় মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আইভি রহমানসহ ২২ জন নিহত হন। আহত হন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ প্রায় তিন’শ নেতা-কর্মী-সমর্থক।
নারকীয় ওই হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তত্কালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শীর্ষ নেতারা। পরিকল্পনা বাস্তবায়ক হিসেবে কাজ করছিলেন তৎকালীন উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু। পিন্টুর ভাই হুজি নেতা মাওলানা তাজউদ্দিন এই আক্রমণের জন্য আর্জেস গ্রেনেড সরবরাহ করেছেন বলে তদন্তে বেরিয়ে আসে।
মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট সিআইডি সূত্রগুলো জানায়, শেখ হাসিনাসহ শীর্ষস্থানীয় নেতাদের হত্যা করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করাই ছিল ওই আক্রমণের মূল লক্ষ্য। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর এটা ছিল আওয়ামী লীগের ওপর সবচেয়ে পরিকল্পিত ও বড় আঘাত।
মুফতি হান্নানসহ জঙ্গিদের দেওয়া তথ্য ও গোয়েন্দা সূত্রমতে, ২০০০ সালে হুজির মজলিশে শুরার সভায় বিএনপির পরিকল্পনায় শেখ হাসিনাকে হত্যার সিদ্ধান্ত হয়। হামলা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে পরদিন ২০ আগস্ট সকালে মুফতি হান্নান, আবু সাইদসহ দোসররা বৈঠকে বসেন। কারা কারা হামলায় অংশ নেবে, সেখানে তার তালিকা তৈরি করা হয়।
আদালতে মুফতি হান্নান বলেছেন, এর আগে ওই দিনই তিনি তখনকার উপমন্ত্রী পিন্টুর ধানমন্ডির বাসায় বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজি ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা আবু তাহেরও উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে মাওলানা তাজউদ্দিন আক্রমণের জন্য তার কাছে গ্রেনেড হস্তান্তর করেন এবং পিন্টু ২০ হাজার টাকা দেন মুফতি আহসান উল্লাহ কাজলের হাতে।
হামলার আগের দিন ২০ আগস্ট কাজল ও আবু জান্দাল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে গিয়ে এলাকা পর্যবেক্ষণ (রেকি) করে আসেন। ২১ আগস্ট সকালে একই বাসায় উল্লিখিত সবাই এবং হামলায় অংশ নেওয়ার জন্য নির্বাচিতরা একত্র হন। সিদ্ধান্ত হয়, মোট ১২ জন হামলায় অংশ নেবে। এতে কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন কাজল ও আবু জান্দাল। এরপর বাড্ডার ওই বাসায় তাঁরা সবাই একসঙ্গে জোহরের নামাজ পড়ে দুপুরের খাবার খান। সেখানে তাঁরা সর্বশেষ বৈঠক করেন। মাওলানা সাইদ জিহাদবিষয়ক বয়ান করেন। তারপর মুফতি হান্নান হামলার জন্য নির্বাচিত ১২ জনের হাতে ১৫টি গ্রেনেড তুলে দেন।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আসরের নামাজের সময়ে সবাই যার যার মতো গিয়ে গোলাপ শাহ মাজারের কাছে মসজিদে মিলিত হয়। সেখান থেকে তারা সমাবেশে মঞ্চ হিসেবে ব্যবহৃত ট্রাকটির চারপাশে অবস্থান নেয়। শেখ হাসিনার বক্তব্য শেষ হওয়ার পর পর আবু জান্দাল প্রথম গ্রেনেড ছুড়ে মারেন। তারপর অন্যরা একে একে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে যার যার মতো এলাকা ছেড়ে চলে যায়।
এই মামলায় পরে আরও সাত জঙ্গি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক যে জবানবন্দি দেয়, তাতেও হামলা সম্পর্কে এ রকম তথ্য-বক্তব্য উঠে আসে।
এ ছাড়া সিলেটে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর গ্রেনেড হামলা মামলার
অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি শরিফ শহিদুল ইসলাম ওরফে বিপুলও গোয়েন্দাদের
জিজ্ঞাসাবাদে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসংক্রান্ত কিছু তথ্য দেন।