নিজস্ব প্রতিবেদক:
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে ৩৫ হাজার বিও অ্যাকাউন্টের বিপরীতে অবণ্টিত লভ্যাংশের ২০ হাজার কোটি টাকা পড়ে আছে। এর মধ্যে নগদ লভ্যাংশ তিন হাজার কোটি টাকা এবং বোনাস শেয়ার ১৭ হাজার কোটি টাকা। দীর্ঘদিন পর্যন্ত এসব টাকার দাবি করছে না কেউ।
ফলে সম্প্রতি এ টাকা দিয়ে একটি বিশেষ তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ তহবিলের নাম ‘ইনভেস্টর প্রটেকশন অ্যান্ড মার্কেট স্ট্যাবিলাইজ ফান্ড’ দেয়া হয়েছে।
কমিশন মনে করে, এ তহবিল বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা ও বাজার স্থিতিশীল করতে সহায়ক হবে। এর কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ছয় মাসের মধ্যে এ তহবিল বাজারে আসবে।
জানতে চাইলে বিএসইসির চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, কোম্পানিগুলো প্রতিবছর যে লভ্যাংশ দেয় তা অনেক বিনিয়োগকারী নিতে আসে না। এভাবে দীর্ঘদিন পর্যন্ত কোম্পানিগুলোয় এ তহবিল পড়ে আছে।
এর মালিক সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তিনি বলেন, এ তহবিল আমরা বাজারে আনার উদ্যোগ নিয়েছি। তবে নির্দিষ্ট কোনো মেয়াদ নেই। যারা দাবি করবেন সবকিছু যাচাই করে কমিশন তাদের অর্থ পরিশোধ করবে।
তিনি বলেন, বাজার স্থিতিশীল করতে প্রধানমন্ত্রী সব ধরনের উদ্যোগ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ কারণে আমরা সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করছি। আমরা সরকারের কাছেও তহবিল চেয়েছি।
জানা গেছে, মিউচুয়াল ফান্ডসহ বতর্মানে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৭৩টি কোম্পানি রয়েছে। প্রতিবছর এসব কোম্পানি দুইভাবে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়। এগুলো হল-নগদ ও বোনাস শেয়ার।
কিন্তু অনেক বিনিয়োগকারী রয়েছেন যারা এসব লভ্যাংশ নিতে আসেন না। এর মধ্যে কাগজের শেয়ারও রয়েছে। বিএসইসির হিসাবে দেখা গেছে, বোনাস শেয়ারের বর্তমান বাজারমূল্য ১৭ থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা।
এছাড়া নগদ লভ্যাংশের পরিমাণ ৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বোনাস ও নগদ মিলিয়ে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর কাছে ৭ হাজার কোটি টাকা রয়েছে। স্কয়ার ফার্মা, রেনেটাসহ বড় সব কোম্পানির কাছে তহবিল রয়েছে।
প্রয়োজনে এগুলো বাজারে নিয়ে আসা হবে। এটি পরিচালনায় আলাদা বোর্ড ও সচিবালয় করা হবে। ৯ সদস্যবিশিষ্ট বোর্ডে বিএসইসির নিয়োগ করা একজন চেয়ারম্যান থাকবেন।
এছাড়া এখানে স্টক এক্সচেঞ্জসহ বাজার সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি থাকবেন। তবে আর্থিক বিষয়টি আইসিবি দেখবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ তহবিল নিয়ে বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংককে ঋণ দেয়া হবে। এছাড়া কোনো কোম্পানির শেয়ারের মূল্য খুব বেশি কমে গেলে, শেয়ার কিনে তা স্থিতিশীল করা হবে।
আবার কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম অতিরিক্ত বাড়লে সেখানে শেয়ার সরবরাহ দাম নিয়ন্ত্রণে আনা হবে। রেগুলেটর সংস্থা হিসেবে বিএসইসির এর অপারেশনে থাকবে না। স্বতন্ত্র বোর্ডই সবকিছু দেখবে।
তবে অপর একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল থাকলেও শেষ পর্যন্ত এর আকার কমবে। কারণ অনেক দাবিদার চলে আসবে। এছাড়া কোম্পানির উদ্যোক্তারা বিভিন্ন কৌশলে দাবিদার দেখানোর চেষ্টা করবে।
সূত্রটি জানায়, শেষ পর্যন্ত ৫ হাজার কোটি টাকা টিকলেও এটি বাজারে অনেক বড় নাড়া দেবে। অন্যদিকে তহবিলের ক্ষেত্রে কৌশলের আশ্রয় নেবে বিএসইসি। সংস্থাটি এখানে সরাসরি তহবিল পরিচালনায় না গিয়ে কাস্টডিয়ান হিসেব কাজ করবে।
যেহেতু তহবিল কোনোদিনই বাজেয়াপ্ত হবে না, সেক্ষেত্রে আদালতে গিয়েও কোম্পানির উদ্যোক্তারা তেমন লাভবান হতে পারবে না। উল্টো দাবিদার কোম্পানির চেয়ে বিএসইসির কাছে এলেই লভ্যাংশ সহজে বুঝে পাবে