নিউজ ডেস্ক:
দেশে একটা সময় টিবি রোগ নিয়ে কিছু অপবাদ প্রচলিত ছিলো। যার কারণে অনেক রোগীই লক্ষণ থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতো না। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে পরিস্থিতির। এখন চিকিৎসার মাধ্যমে প্রায় ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ টিবি রোগীই সুস্থ হয়ে উঠছেন। আর তা সম্ভব হচ্ছে দেশীয় উৎপাদিত ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা দিয়েই। এসব ওষুধে ইতিমধ্যে চাহিদা মিটছে দেশের। আর তাই এসব ওষুধ ভবিষ্যতে বিদেশেও রপ্তানির করার আশা প্রকাশ করেছেন খোদ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেছেন, এসব ওষুধ উৎপাদনে প্রয়োজনে আমাদের বাজেটে যে বরাদ্দ রয়েছে তা বাড়ানো হবে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে টিবিমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যবিভাগ কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
এসময় বলা হয়, দেশে ২০১২ সালে জিন এক্সপার্ট নামে একটি উন্নত স্বয়ংক্রিয় যক্ষ্মা শনাক্তকারী পরীক্ষা চালু করেছিল, যা এখন ৫১০টি স্থানে স্থাপন করা হয়েছে এবং ২০২৫ সালের মধ্যে সব যক্ষ্মা অনুমানকারীর জন্য এ পরীক্ষাটি নিশ্চিত করার পরিকল্পনা করেছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সর্বপ্রথম স্বল্পমেয়াদি ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মার চিকিৎসা পদ্ধতি চালু করেছে।
কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, যক্ষ্মা পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে আছে, এখনো তার প্রাদুর্ভাব রয়েছে। যক্ষ্মায় প্রতি বছর ৩ লাখের অধিক মানুষ আক্রান্ত হয়। অসংখ্য মারা যায়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মৃত্যুর হার কমেছে। ২০১৫ সালে যেখানে ৭০ হাজারের অধিক মৃত্যু ছিল, এখন তা ৪০ হাজারে নেমে এসেছে। আমাদের মৃত্যু বেশি, কারণ জনসংখ্যা বেশি।
এসময় স্বাস্থ্য বিভাগ করোনার চাপ শেষে ঘুরে দাঁড়িয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, করোনার কারণে আমাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। এসময় আমাদের স্বাস্থ্যখাত চাপে পড়েছিল। হাসপাতালের বেশিরভাগ শয্যা করোনা রোগীদের জন্য দিয়ে দিতে হয়েছিল। তখন সরকারকে নতুন নতুন হাসপাতাল করতে হয়েছে। নতুন নতুন শয্যা ও সুযোগ সুবিধা যুক্ত করতে হয়েছে। এসময় টিবিসহ অন্যান্য সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। তবে করোনা নিয়ন্ত্রণ করে খুব দ্রুতই আমরা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছি। দেশের ৯০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। যেখানে সারাবিশ্বে ৭০ শতাংশ মানুষ টিকার আওতায় এসেছে।
এসময় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, এ ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে জিরো টিবি লক্ষ্য বাস্তবায়ন সম্ভব। ডায়াবেটিস, তামাকজাত দ্রব্যের সেবন টিবি নির্মূলে বড় অন্তরায়। তামাকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলে টিবি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।
সভাপতির বক্তব্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, আমাদের সম্মিলিতভাবে টিবি নির্মূলে কাজ করতে হবে। তাহলেই ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ টিবিমুক্ত হবে। সরকারের এই উদ্যোগের সঙ্গে অবশ্যই বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জন করলেও বড় চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। এখনো ধারণা করা হচ্ছে যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৩৬ শতাংশ শনাক্তকরণ সম্ভব হয়নি। এই লক্ষ্যে নবম জেএমএমে যক্ষ্মা কর্মসূচির অগ্রগতি পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন প্রস্তাবিত হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে টিবি মহামারির একটি টেকসই সমাপ্তির জন্য যক্ষ্মা কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে অর্জনযোগ্য সমাধানগুলো চিহ্নিত করা জরুরি।