নয় মাস যুদ্ধের ফসল ঘরে তুলতে পুরো ডিসেম্বর জুড়ে বাঙালি হৃদয়ে একদিকে যেমন বিজয়োল্লাস চলছিলো তেমনি স্বজন হারানোর বেদনায় কাতরাচ্ছিলো বাঙালি হৃদয়।
১৯৭১ সালের ১৯শে ডিসেম্বরও দেশের কয়েকটি স্থানে পাকিস্তানী হানাদার ও রাজাকারদের সাথে মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধ হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না থাকায় তখনো পাকিস্তানীদের আত্মসমর্পণের খবর না পৌঁছানোর ফলে যুদ্ধ হয়েছিলো। এদিকে পরাজয়ের বড় ধাক্কা লাগে পশ্চিম পাকিস্তানেও। ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দেন সামরিক সরকার ইয়াহিয়া খান। এদিন পাকিস্তান রেডিওতে প্রচার হয় ইয়াহিয়া খান পদত্যাগ করবেন। সরকার গঠন করবেন জুলফিকার আলী ভুট্টো। এদিন ব্রিটিশ এমপি জন স্টোনহাউজ বাংলাদেশ সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জানান পাকিস্তানীরা বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছে।
রাতে পাকিস্তান বেতারে প্রেসিডেন্ট পদে ইয়াহিয়া খানের ইস্তাফাদানের বার্তা ঘোষিত হয়। বার্তায় বলা হয়, আগামীকাল প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠনের সাথে সাথে তিনি ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো নিউইয়র্ক থেকে এখন দেশের পথে রয়েছেন এবং তিনি নতুন সরকার গঠন করবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
পাকিস্তান বিমান বাহিনীর প্রাক্তন প্রধান এয়ার মার্শাল আসগর খান রাওয়ালপিন্ডিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে আহাম্মক হিসেবে অভিযুক্ত করেন। তিনি ইয়াহিয়া খান ও তার দোসর জেনারেলদের প্রকাশ্য বিচার দাবি করেন।
ঢাকা থেকে ফিরে ব্রিটিশ এমপি জন স্টোনহাউস বলেন যে, তিনি পাকবাহিনীর নৃশংসতার ঘৃণ্য দৃশ্য দেখতে পেয়েছেন। এখনো রাজপথে শবদেহ পড়ে আছে। তিনি আরো জানান, একজন মেজর জেনারেলসহ ছয়জন পাকিস্তানি অফিসার হত্যার জন্য ২০০০ বাঙালি বুদ্ধিজীবীর তালিকা তৈরি করেছিল।