নিউজ ডেস্ক:
দীর্ঘ ১৮ বছর পর সক্রিয় করা হচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মশক নিয়ন্ত্রণ শাখা। এ লক্ষ্যে ‘ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা’ পদে একজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এর আগে ২০০৪ সাল থেকে শূন্য ছিল পদটি। এতদিন মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালিত হত পরিচ্ছন্ন শাখার মাধ্যমে। অথচ এ শাখার মূল কাজ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।
এদিকে নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা এবং গতি বাড়াতে পরিচ্ছন্ন বিভাগের আওতায় পুরো নগরকে পৃথক ছয়টি জোনে ভাগ করা হয়েছে। গত সপ্তাহে প্রতিটি জোনে একজন করে মোট ৬ জন জোন প্রধান (পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা) নিয়োগ দেয়া হয়েছে। একইসাথে প্রতিটি জোনে দুইজন করে ১২ জন পরিচ্ছন্ন তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের অধীনে দুইজন করে পরিদর্শক কাজ করবেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, শহরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ‘স্পেসিফিক’ (নির্দিষ্ট) দায়িত্ব দিয়ে কাজ আদায় করতে চাই। আগে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও মশক নিধন সব কাজ পরিচ্ছন্ন বিভাগ পরিচালনা করত। একসঙ্গে সব কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় সমস্যা হত। এখন মশার জন্য স্পেসিফিক দায়িত্ব দেয়ায় কাজে গতি বাড়বে। ছয় জোন প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, আগে তিনটা জোন ছিল। তখন সুপারভাইজাররা দায়িত্ব অবহেলা করত। এখন জোন করায় জোন প্রধান সবকিছু দেখভাল করবেন। দায়িত্ব ‘ডিসেন্ট্রালাইজড’ (বিকেন্দ্রীকরণ) করেছি যাতে সবকিছু সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়। জোন করায় তাদের কাজের এরিয়াও কমেছে। ফলে সবকিছু সহজে কন্ট্রোল করতে পারবে।
মশক নিয়ন্ত্রণ শাখা : অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগের আওতায় দুটো শাখা। একটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বা পরিচ্ছন্ন শাখা। অপরটি মশক নিয়ন্ত্রণ শাখা। ছয়টি কীট সংগ্রহকারী এবং একটি ‘ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা’ পদ আছে মশক নিয়ন্ত্রণ শাখার অধীনে। ‘ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা’ পদে কর্মরত একজন চিকিৎসক ২০০৪ সালের চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগে যোগ দেন। এরপর থেকে পদটি শূন্য হয়ে পড়ে। একই সময় থেকে শূন্য আছে কীট সংগ্রহকারীর পদগুলোও।
এ অবস্থায় নগরে মশক নিধন কার্যক্রম জোরালো করতে মশক নিয়ন্ত্রণ শাখাকে কার্যকর করার সিদ্ধান্ত দেন সিটি মেয়র। সর্বশেষ গত রোববার মিজানুর রহমান নামে একজন পরিচ্ছন্ন সুপারভাইজারকে (অস্থায়ী) ‘ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা’ পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ১৮ বছর পর বিভাগটি সক্রিয় হচ্ছে।
ছয় জোনে পরিচ্ছন্ন বিভাগ : গত বুধবার পরিচ্ছন্ন বিভাগকে ছয় জোনে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে এক নম্বর জোনের আওতায় ১, ২, ৩, ৪, ৫ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড, দুই নম্বর জোনের আওতায় ৬, ৮, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ড, তিন নম্বর জোনের আওতায় ৯, ১০, ১১, ১২, ২৪, ২৫ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ড, চার নম্বর জোনের আওতায় ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ৩৩, ৩৪ ও ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড, পাঁচ নম্বর জোনের আওতায় ২১, ২৩, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১ ও ৩২ নম্বর ওয়ার্ড এবং ছয় নম্বর জোনের আওতায় ২৭, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯,, ৪০ ও ৪১ নম্বর ওয়ার্ডকে অর্ন্তভুক্ত করা হয়।
জোনগুলোতে পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা পদে দায়িত্বপ্রাপ্তরা হচ্ছেন- আবু তাহের সিদ্দিক, হাছান রশিদ, আলী আকবর, শেখ হাসান রেজা, প্রণব কুমার শর্মা ও কল্লোল দাশ।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৯ আগস্ট অনুষ্ঠিত চসিকের বর্তমান পর্ষদের সপ্তম সাধারণ সভায় সিটি মেয়র বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি প্রতিবেদন ও রূপরেখা তৈরির দায়িত্ব দেন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোবারক আলীকে। তখন অবশ্য পুরো নগরীকে চারটি জোনে ভাগ করতে নির্দেশনা দেন মেয়র। পরবর্তীতে চসিকের সচিব খালেদ মাহমুদ ও উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরীসহ কাউন্সিলর মোবারক আলী একটি পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা প্রণয়নে কাজ শুরু করেন। এর একটি খসড়াও প্রস্তুত হয়েছে। এতে ছয়টি জোনের বিষয়টি ওঠে আসে।
চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ৭নং পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোবারক আলী দৈনিক আজাদীকে বলেন, কঠিন বর্জ্য বিধিমালা-২০২১, জাতীয় নির্দেশিকা এবং ১৯৮৮ সালের অর্গানোগ্রামের আলোকে পরিচ্ছন্ন বিভাগকে সাজানো হল। প্রতিটি ওয়ার্ডে আমাদের চারজন স্পেশাল স্প্রে ম্যান আছে। তাদের কার্যক্রম মনিটরিং করবে মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা। ওষুধ সংগ্রহ ও বণ্টন ইত্যাদি কাজও তিনি করবেন। পরিচ্ছন্ন বিভাগে জোন হওয়ায় কাজে গতি আসবে। মনিটরিং বাড়বে। সকলকে নিয়ে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি একটি কর্মশালা হবে। সেখানে কীটতত্ত্ববিদগণকেও আমন্ত্রণ জানানো হবে।
চসিকের উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলে, দুটো বিভাগ সক্রিয় হলে নগরবাসী উপকৃত হবেন। পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমে যেমন গতি আসবে তেমনি মশক নিধনও কার্যক্রমও জোরালো হবে। তার মানে এই না বর্তমানে কাজ হচ্ছে না। বর্তমানেও দুটো কাজ হচ্ছে। তারপরও নতুন কাঠামো হওয়ায় মনিটরিং করতে সহজ হবে।