রবিবার , ডিসেম্বর ২৯ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / ১৬ বছরে মাছ উৎপাদন দ্বিগুণ

১৬ বছরে মাছ উৎপাদন দ্বিগুণ

নিউজ ডেস্ক:
স্বাধীনতার ৫০ বছরে মাছ উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে মাছ উৎপাদন হয় ৩৬ লাখ ৮৪ হাজার টন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩৮ লাখ ৭৮ হাজার টন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪১ লাখ ৩৪ হাজার টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪২ লাখ ৭৭ হাজার টন এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪৩ লাখ ৮১ হাজার টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশের মৎস্য উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৫ দশমিক ৫২ লাখ টন। সব মিলিয়ে বলা যায়, দেশে চলছে মাছের সুদিন।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত মাছ সবার কাছে পৌঁছে দিতে কাজ করছে সরকার। গত ১৬ বছরের ব্যবধানে মাছের উৎপাদন দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। দেশের মোট জিডিপির ৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং কৃষিজ জিডিপির ২৬ দশমিক ৫০ শতাংশ মৎস্য খাতের অবদান। বিশ্বে অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মৎস্য আহরণে বাংলাদেশ ৩য়, বদ্ধ জলাশয়ে চাষকৃত মাছ উৎপাদনে ৫ম, ইলিশ উৎপাদনে ১ম ও তেলাপিয়া উৎপাদনে ৪র্থ স্থানে রয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, ‘নিরাপদ মাছে ভরবো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ এই প্রতিপাদ্যে এবছর পালিত হচ্ছে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ – ২০২২। শনিবার (২৩ জুলাই) থেকে শুরু হওয়া এই সপ্তাহ চলবে আগামী ২৯ জুলাই (শুক্রবার) পর্যন্ত। দিবসটি উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। এ উপলক্ষে, শনিবার সকালে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২২ এর কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শোভাযাত্রায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম অংশগ্রহণ করেন।

মৎস্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশের প্রায় ১৪ লাখ নারীসহ মোট জনসংখ্যার ১২ শতাংশেরও বেশি অর্থাৎ প্রায় ২ কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মৎস্য খাতের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করছে। বর্তমানে দেশের মানুষ গড়ে জনপ্রতি প্রতিদিন ৬০ গ্রাম চাহিদার বিপরীতে ৬২ দশমিক ৫৮ গ্রাম মাছ গ্রহণ করছে। প্রাণিজ আমিষের প্রধান উৎস এই মাছের উৎপাদন বাড়াতে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা তৈরির জন্যই প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ পালন করছে সরকার।

কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মৎস্য উপ খাতের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভাবনাময় বলে মনে করে মৎস্য সম্পদ অধিদফতর। গত ২০০৮ সালে মৎস্য উপখাতে গড় প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ শতাংশ। বর্তমানে প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশ। দেশের রফতানি আয়ের প্রায় ৪ দশমিক ৪ শতাংশ আসে মৎস্য উপখাত থেকে। ময়মনসিংহে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে ৩৬ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় মাছ ফিরিয়ে আনা হয়েছে। কোনও মাছ যাতে হারিয়ে না যায় সেজন্য ময়মনসিংহে লাইভ জিন ব্যাংক করা হয়েছে, যেখানে শতাধিক প্রকারের মাছ রাখার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।

জানা গেছে, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৯৯ হাজার মেট্রিক টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন। ইলিশের উৎপাদন আরও বাড়াতে সরকার কাজ করছে। দেশের জিডিপিতে ইলিশের একক অবদান এক শতাংশেরও বেশি। বাংলাদেশ এখন ইলিশ উৎপাদনে বিশ্বে রোল মডেল। বিশ্বে ইলিশ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশেই ইলিশ উৎপাদন বেড়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের ১২৫টি উপজেলার নদ-নদীতে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণালব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে গত ১২ বছরে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৮৩ শতাংশ। এ ছাড়া গত ২০১৬ সালে ইলিশ বাংলাদেশের ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ইলিশের স্বত্ব এখন শুধুই বাংলাদেশের। এটি জাতির জন্য গৌরবের।

মৎস্য অধিদফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ৩ দশমিক ৫ লাখ হেক্টর আয়তনের প্রায় ১৩ লাখ পুকুর-দিঘি রয়েছে। দেশের ২৪ হাজার কিমি. দীর্ঘ নদ-নদীর আয়তন প্রায় ১০ দশমিক ৩২ লাখ হেক্টর। এ ছাড়া রয়েছে ১ দশমিক ১৪ লাখ হেক্টর জলায়তনের প্রায় ১১ হাজার বিল, ৫ হাজার ৪৮৮ হেক্টর আয়তনের বাঁওড়, ৬৮ হাজার ৮০০ হেক্টর কাপ্তাই হ্রদ, প্রায় ২.০০ লাখ হেক্টর সুন্দরবন খাড়ি অঞ্চল এবং ২৮ দশমিক ৩০ লাখ হেক্টরের বিশাল প্লাবন-ভূমি।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত তিন দশকে বাংলাদেশে মাছের উৎপাদন বেড়ে হয়েছে প্রায় ২৫ গুণ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা মাছ নিয়ে তাদের ‘দ্য স্টেট অব ওয়ার্ল্ড ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকুয়াকালচার-২০২০’ শিরোনামে প্রকাশিত বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বলেছে, স্বাদু পানির উন্মুক্ত জলাশয় থেকে মাছ আহরণে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে তৃতীয়। দেশে উৎপাদিত মাছের ৭৫ শতাংশ এখন বাজারজাত করছেন মৎস্য চাষিরা। এ ছাড়া কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন ও চাষাবাদ পদ্ধতি উদ্ভাবন করে ফিরিয়ে আনা হয়েছে ২৪ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় দেশি মাছ।

সূত্র জানায়, ২০১০ সালের সর্বশেষ খানা জরিপে জানা গেছে, বছরে বাংলাদেশে একেকজন মানুষ প্রায় ১২ কেজি মাছ খেতো। এখন সেটা ৩০ কেজিতে পৌঁছেছে। দেশের জিডিপিতে কৃষির অবদান ১৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। জিডিপিতে কৃষির অবদান কমলেও মৎস্য উপখাতের অবদান কিছুটা বেড়েছে। মোট জিডিপিতে মৎস্য উপখাতের অবদান ২০১৬-১৭ সালে ছিল ৩ দশমিক ৬১ শতাংশ। তা কিছুটা কমে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৪৯ শতাংশে দাঁড়ায়। তবে তা গত অর্থবছরে মৎস্য উপখাতের অবদান বেড়ে ৩ দশমিক ৫২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে টাকার অঙ্কে মৎস্য উপখাত থেকে জিডিপিতে যুক্ত হয়েছে ৮২ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা, যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ৭৪ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। এ খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ১০ শতাংশ।

বাংলাদেশে সামুদ্রিক মৎস্য উৎপাদন মূলত আহরণ নির্ভর। উপকূলব্যাপী ৭১০ কিমি. দীর্ঘ তটরেখা থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত ১ দশমিক ৬৬ লাখ বর্গ কিলোমিটার। বিস্তৃত বিশাল সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসম্পদে ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি এবং ৪৭৫ প্রজাতির মাছ রয়েছে। বর্তমানে বঙ্গোপসাগর থেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রল ফিশিং এবং আর্টিসেনাল মৎস্য আহরণের মাধ্যমে মোট ৪ দশমিক ৩৯ লাখ টন মৎস্য আহরণ করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম জানিয়েছেন, এখন আমাদের লক্ষ্য নিরাপদ মাছ উৎপাদন। শুধু মাছের উৎপাদন বাড়লেই হবে না, নিরাপদ ও পুষ্টিকর মাছ উৎপাদনে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে। ভোক্তার কাছে আমরা নিরাপদ মাছ পৌঁছে দিতে চাই। মাছে- ভাতে বাঙালির সে ঐতিহ্য আমরা ফিরিয়ে আনতে চাই। মাছ রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে চাই। মাছ চাষের মাধ্যমে বেকারত্ব দূর হবে, উদ্যোক্তা তৈরি হবে এবং গ্রামীণ অর্থনীতি সচল হবে।

উল্লেখ্য, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে গণভবন লেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মাছের পোনা অবমুক্ত করে মৎস্য চাষকে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দেওয়ার শুভ সূচনা করেছিলেন। ওই সময় বঙ্গবন্ধু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন- ‘মাছ হবে এ দেশের দ্বিতীয় প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী সম্পদ।’

আরও দেখুন

পাখি ও বন্যপ্রাণি শিকারের তথ্য দিলেই উপহার! ১১ টি শালিক অবমুক্ত, পাখি রক্ষায় লিফলেট বিতরণ 

নিজস্ব প্রতিবেদক ,,,,,,,,,,,,,,,,,,চলনবিলে পাখি শিকার রোধ ও সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে ব্যতিক্রম উদ্যোগ নিয়েছে পরিবেশবাদী সংগঠন …