নিউজ ডেস্ক:
চলতি বছর ১৬ ডিসেম্বর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চালুর জোর প্রস্তুতি চলছে। করোনা মহামারীর কারণে কাজের গতি কিছুটা শ্লথ হলেও দিন রাত কাজ করে তা পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের কাজ হয়েছে ৮৫ শতাংশের বেশি। আগামী সাড়ে ছয় মাসে বাকি কাজ শেষ করে ১৬ ডিসেম্বর চালু করার প্রত্যাশা করছেন মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। গত ১১ এপ্রিল মেট্রোরেলের প্রথম সেটের পরীক্ষামূলকভাবে চালানোর পর দ্বিতীয় সেটের চালান এসে পৌঁছেছে মংলা বন্দরে।
ঢাকার যানজট নিরসনে হাতে নেয়া আলোচিত এই প্রকল্পের এপ্রিল পর্যন্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন বলছে, প্রথম মেট্রোরেল এমআরটি-৬ এর কাজের সার্বিক অগ্রগতি প্রায় ৬৪ শতাংশ। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের পূর্ত কাজ হয়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ। এর মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের কাজ হয়েছে ৮৫ শতাংশ। পাশাপাশি ইলেক্ট্রিক্যাল মেকানিক্যাল সিস্টেম ও রোলিং স্টক ও ডিপোর ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহ কাজের সমন্বিত অগ্রগতি প্রায় ৫৫ শতাংশ। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক সাংবাদিকদের বলেছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার মেট্রোরেল উদ্বোধন করার কথা। করোনার কারণে কিছুটা অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হলেও নির্ধারিত সময় এটি চালু করতে জোর চেষ্টা চলছে। সাধ্যমতো কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে।
মেট্রোরেলের কাজে গতি কিছুটা শ্লথ করেছে করোনা। কর্মীদের করোনামুক্ত রাখতে সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করেছে কর্তৃপক্ষ। মেট্রোরেলে নিয়োজিত কর্মীদের রাখা হয়েছে আলাদা করে। কেউ ছুটিতে গেলে তাদের এক সপ্তাহ কোয়ারেন্টাইনে রেখে টেস্ট করে কাজে যোগদানে অনুমতি দেয়া হচ্ছে। কর্মীদের খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। থাকা এবং কাজের জায়গা ছাড়া তাদের বাইরে যাওয়ার অনুমতি নেই। এত কিছুর পরও অনেক কর্মী আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে নানাভাবে। তাদের নিজস্ব আইসোলেশন সেন্টারে রেখে চিকিৎসা করানো হচ্ছে। কারও স্বাস্থ্যের অবস্থা বেশি খারাপ হলে তাকে স্থানান্তর করা হচ্ছে হাসপাতালে। গত ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত মেট্রোরেলে কাজে নিয়োজিত দেশী-বিদেশী জনবলের মধ্যে ৬৬১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তবে কেউ মারা যাননি। গাবতলী ও উত্তরায় কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ফিল্ড হাসপাতাল চালুর পাশাপাশি কর্মীদের টিকাও দেয়া হচ্ছে।
মেট্রোরেলের উন্নয়ন প্রতিবেদনে দেখা যায়, উত্তরার ডিপোর ভূমি উন্নয়ন কাজ নয় মাস আগে শেষ হওয়ায় সরকারের ৭০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা সাশ্রয় হয়েছে। ডিপোর পূর্ত কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৮৮ শতাংশ। প্রকল্পের ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার ‘ভায়াডাক্টের’ মধ্যে ১৪ দশমিক ৪৯ কিলোমিটার ভায়াডাক্টের ইরেকশন সম্পন্ন হয়েছে। ডিপোর অভ্যন্তরে রেললাইন নির্মাণের কাজ যেমন হয়েছে, তেমনি উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের সাড়ে ১০ কিলোমিটার ভায়াডাক্টের ওপর বসানো হয়েছে রেললাইন। উত্তরা থেকে ৩ ও ৪ নম্বর প্যাকেজের মাধ্যমে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত উভয় প্যাকেজের কাজ ২০১৭ সালের আগস্টে শুরু হয়ে গত এপ্রিল পর্যন্ত সব পাইলক্যাপ, আই গার্ডার, প্রি-কাস্ট সেগমেন্ট কাস্টিং পিয়ার হেড, ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, পাঁচটি ব্যালান্স কেন্টিলিভার নির্মাণ এবং ১৪ হাজার ৭৪৮টি প্যারাপ্যাট ওয়াল ভায়াডাক্টের ওপর স্থাপন করা হয়েছে। প্যাকেজ দুটির আওতায় শেষ হয়েছে মোট নয়টি স্টেশনের সাবস্ট্রাকচার নির্মাণ। উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ ও পল্লবী স্টেশনের কনকোর্স ছাদ এবং প্লাটফর্ম নির্মাণের কাজ শেষ। বাকি পাঁচ স্টেশন মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও স্টেশনের কনকোর্স ছাদ ও প্লাটফর্ম নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। উত্তরা উত্তর, উত্তরা দক্ষিণ ও পল্লবী স্টেশনগুলোর স্টিলের ছাদ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। উত্তরা সেন্টার স্টেশনের স্টিলের ছাদ নির্মাণ কাজ চলছে। সব মিলে এই নয় স্টেশনের সার্বিক অগ্রগতি ৮০ দশমিক ১৪ শতাংশ। আগারগাঁও থেকে কাওরান বাজার পর্যন্ত ৩ দশমিক ১৯ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও তিনটি স্টেশন নির্মাণ কাজের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৬৪ দশমিক ০২ শতাংশ। কাওরান বাজার থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৪ দশমিক ৯২ কিলোমিটার ভায়াডাক্টে চারটি স্টেশন নির্মাণ কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৬৫ দশমিক ০৭ শতাংশ। প্যকেজ ৬-এর আওতায় আবার ৭ নম্বর প্যাকেজের আওতায় ইলেক্ট্রিক্যাল এ্যান্ড মেকানিক্যাল সিস্টেমের অগ্রগতি হয়েছে ৬৯ দশমিক ২৩ শতাংশ।
পরীক্ষামূলকভাবে চালানোর পর উত্তরার ডিপোতে প্রথম সেটের ট্রেনগুলো চালানোর উপযোগী করা হচ্ছে। এগিয়ে চলছে ফাংশনাল কার্যক্রম। এরপর ভায়াডাক্টের ওপরে মেন লাইনে পরীক্ষা করা হবে। পর্যায়ক্রমে সমন্বিত পরীক্ষার পর ট্রেনের ট্রায়াল রান শুরু হবে। তিন মাস পর অর্থাৎ চলতি বছরের আগস্ট মাসে ভায়াডাক্টের ওপরে মেন লাইনে পারফর্মেন্স টেস্ট শুরু করা হবে। ভায়াডাক্টের টেস্ট সম্পন্ন হওয়ার পর করা হবে সমন্বিত পরীক্ষা। অন্যদিকে দ্বিতীয় সেটের ছয়টি রেল কোচ শীঘ্রই ঢাকায় এসে পৌঁছাবে। এভাবে জাপান থেকে মোট ২৪ সেট কোচ আসবে।