নিউজ ডেস্ক:
করোনার ক্ষতি থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে অগ্রাধিকারভিত্তিক বড় বা মেগা প্রকল্প বড় ধরনের সহায়ক হতে পারে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি বাড়লে কর্মসংস্থানে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ প্রত্যাশা থেকে ১০টি মেগা প্রকল্পের নির্মাণকাজ দ্রুততম সময়ে শেষ করতে চায় সরকার। এ উদ্দেশ্যে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে এসব প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। বার্ষিক উন্নম্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) এক হাজার ৫১৫টি প্রকল্পের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ বরাদ্দই দেওয়া হয়েছে এই ১০ প্রকল্পে।
উন্নয়ন বিশ্নেষকরা মনে করেন, বড় প্রকল্প দ্রুত শেষ করতে পারলে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগও উৎসাহিত হবে। অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চার হবে। নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তবে বাস্তবায়নের গুণগত মানের দিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ ২০২১-২২ অর্থবছরের এডিপি অনুমোদন করেছে। নতুন এডিপির আকার ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পেই বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৮ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা।
১০টি মেগা প্রকল্পের ৫টি প্রকল্প তদারক করছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ। এ বিভাগের সদস্য সরকারের সচিব মামুন-আল-রশীদ গতকাল সমকালকে বলেন, মেগা প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন পরিস্থিতি করোনার বাস্তবতা বিবেচনায় একেবারে খারাপ নয়। এগুলোর কাজ শেষ করে সেবা দ্রুত জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে চায় সরকার। এ জন্য আগামী অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আগামী অর্থবছরের জন্য সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
দশ মেগার অন্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬ হাজার ১৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে। প্রাথমিক শিক্ষা ও উন্নয়ন কর্মসূচিতে (পিইডিপি-৪) দেওয়া হয়েছে ৫ হাজার ৫৪ কোটি টাকা। বড় বরাদ্দের দিক থেকে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ। অন্যান্য প্রকল্পের মধ্যে ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট বা মেট্রোরেল প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে ৩ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পে দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। আলোচিত পদ্মা সেতু প্রকল্পে দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প পেয়েছে ৩ হাজার ২২৭ কোটি টাকা। এক্সপানশন অ্যান্ড স্ট্রেনদেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক প্রকল্পে ৩ হাজার ৫১ কোটি টাকা এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পে ২ হাজার ৮২৯ কেটি টাকা।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, মেগা প্রকল্প দ্রুত শেষ করা গেলে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়বে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে মূল্য সংযোজন হবে। নতুন নতুন কর্মসংস্থান হবে। করোনার ক্ষয়ক্ষতি থেকে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া সহজ করবে। আবার এসব মেগা প্রকল্প দ্রুত শেষ করা না গেলে মেগা হারেই ব্যয় বাড়বে। উদাহরণ হিসেবে পদ্মা সেতুর কথা বলেন তিনি। ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটিতে এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় দাঁড়িয়ে গেছে। বাস্তবায়নে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতায় মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
সর্বশেষ বাস্তবায়ন অগ্রগতি : অগ্রাধিকার প্রকল্পের অগ্রগতি থামিয়ে দিয়েছে করোনার ঢেউ। এসব প্রকল্পের ঠিকাদার, পরামর্শক, প্রকৗশলীসহ শীর্ষপর্যায়ে কাজ করে অনেক বিদেশি। এক পদ্মা সেতুতেই কাজ করেন ১৮টি দেশের নাগরিক। বিভিন্ন প্রকল্পের নির্মাণ সামগ্রীরও একটা বড় অংশ আসে চীনসহ অন্যান্য দেশ থেকে। গত এক বছরে বিভিন্ন সময়ে দেশে এবং বিভিন্ন দেশে লকডাউনের কারণে এসব সামগ্রী আটকা পড়ে। লকডাউনের কারণে সাধারণ ছুটির মধ্যে স্থানীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ঠিকমতো কাজ করতে পারেননি। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, করোনার এই প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ প্রভাবে গেল মার্চ পর্যন্ত অগ্রাধিকার ১০ প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৩০ শতাংশ কম হয়েছে। অবশ্য, পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সমকালকে বলেন, দ্বিগুণ গতিতে কাজ করে সময়মতোই এসব প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে। রাত-দিন কাজ করে সময়মতো কাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো এ ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে।