শুরুতে উত্তরা প্রান্ত থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অনেকগুলো স্টেশন থাকলেও কোথাও দাঁড়াবে না ঢাকার শহরের নতুন এই পরিবহনটি। সেই হিসেবে উত্তরা থেকে আগারগাঁও বা আগারগাঁও থেকে উত্তরা পর্যন্ত বিরতিহীন যাত্রী সেবা পেতে গুণতে হবে ৬০ টাকা।
শেষ হতে যাচ্ছে নগরবাসীর দীর্ঘ প্রতীক্ষা। ঢাকার যানজট নিরসনে বুধবার খুলে দেয়া হচ্ছে স্বপ্নের মেট্রোরেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ দিন মেট্রোরেলে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। সাধারণ মানুষের চলাচল শুরু হবে বৃহস্পতিবার থেকে।
শুরুতে উত্তরা প্রান্ত থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অনেকগুলো স্টেশন থাকলেও কোথাও দাঁড়াবে না ঢাকার শহরের নতুন এই পরিবহনটি। সেই হিসেবে উত্তরা থেকে আগারগাঁও বা আগারগাঁও থেকে উত্তরা পর্যন্ত বিরতিহীন যাত্রী সেবা পেতে গুণতে হবে ৬০ টাকা। ১০ মিনিট পর পর ট্রেন আসবে এবং শুরুতে এক সঙ্গে ২০০ জন যাত্রী এই ট্রেনে উঠার সুযোগ পাবেন।
তবে আগামী স্বাধীনতা দিবস অর্থাৎ ২০২৩ সালের ২৬ মার্চ থেকে পূর্ণাঙ্গরূপে শুরু হবে এই মেট্রোরেল সেবা। তখন প্রতিটি স্টেশনে নিয়ম করে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানামার মধ্য দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়া হবে। তখন যাত্রীদের গন্তব্য অনুযায়ী নির্ধারিত হারে আদায় করা হবে ভাড়া।
ম্যাস ট্রানজটি কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক বলেন, ‘প্রথমে উত্তরা উত্তর (শুরুর স্টেশন) থেকে একটি ট্রেন ছাড়বে। আর একটি আগারগাঁও থেকে ছাড়বে। ১০ মিনিট পর পর এই ট্রেন ছাড়া হবে। এই পুরো লাইনে আর কোনো স্টেশনে ট্রেন থামবে না।’
কেন এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন ডিএমটিসিএল-এর এমডি। তিনি বলেন, ‘মানুষদের অভ্যস্ততার জন্য প্রথমে আমরা এভাবেই চালাব। তবে যাত্রী না হলে ট্রেন কম চলবে। মানুষ অভ্যস্ত হলে পরে ধীরে ধীরে আমরা অন্য স্টেশনে ট্রেন থামাব।’
তিনি বলেন, ‘আপাতত ২৯ তারিখ থেকে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৪ ঘন্টা মেট্রোরেল চলাচল করবে। বিকেলে কোনো ট্রেন চলবে না।’
তবে যাত্রীদের আশানুরূপ সাড়া না পেলেও সেখানে পরিবর্তন আসবে বলে জানিয়েছেন এমএএন ছিদ্দিক।
তিনি বলেন, ‘তবে মানুষ যদি কম থাকে বা মানুষকে যদি অভ্যস্ত করতে না পারি তাহলে এর চেয়েও কম সময় চলবে ট্রেন। তারপর ৭ দিন দেখে আমরা রিভিউ করব। তখন যদি মনে হয় এই সময় আরও বাড়ানোও দরকার বা বিকেলে ট্রেন চালানো দরকার, তাহলে তখন আমরা নতুন করে আবার সিদ্ধান্ত নেব।’
রক্ষণাবেক্ষণ ও যত্নআত্তির কথা ভেবে সপ্তাহে একদিন মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ প্রসঙ্গে ডিএমটিসিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘কারণ একদিন যদি আমরা মেইনটেইন্যান্স না করি তাহলে যে কোনো চ্যালঞ্জে উদ্ভব হতে পারে।’
যাত্রীদের কেমন সাড়া মিলছে তার ভিত্তিতে এসব সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনারও বিষয়টিও মাথায় রেখেছে কর্তৃপক্ষ। ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিদ্দিক বলেন, ‘১০ মিনিট পর পর ট্রেন আসবে এবং ২০০ মানুষ এই ট্রেনে উঠার সুযোগ পাবে।’
১০ মিনিটের মধ্যে যদি যাত্রীরা ট্রেনে উঠতে না পারেন সেক্ষেত্রে মধ্যবর্তী সময় আরও বাড়ানোর পরিকল্পনার কথাও জানালেন এমএএন ছিদ্দিক।
তিনি বলেন, ‘এই ১০ মিনিটে উঠতে না পারে তাহলে আমরা আস্তে আস্তে ১০ মিনিটের জায়গায় ১৫ মিনিট অথবা ২০ করে দেব। আমরা চেষ্টা করছি ২০০ মানুষকে অভ্যস্ত করতে।’
যাত্রী পরিবহনের প্রথম দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হবে বলেও জানান এমএএন ছিদ্দিক। তিনি বলেন, ‘২৯ তারিখ থেকেই স্টেশনে যাত্রীরা সিঙ্গেল টিকিট, র্যাপিড পাস, এমআরটি পাস কিনতে পারবে।’
যাত্রীদের টিকিট কেনার কাজটি সহজ করেতে স্টেশনগুলোতে প্রশিক্ষিত জনবল থাকবে বলে জানান এমএএন ছিদ্দিক। বলেন, ‘স্টেশনের প্রতিটা টিকিট মেশিনের সামনেই স্কাউটের সদস্যরা থাকবে। আমরা তাদের ট্রেনিং দিয়েছি। তারা যাত্রীদের মেশিনে টিকিট কাটতে সাহায্য করবে।’
সাধারণ মানুষকে মেট্রোরেলে অভ্যস্ত করা এবং নিয়মকানুন শেখাতেও বিশেষ ব্যবস্থা রাখার কথা জানালেন তিনি। বলেন, ‘এখানে আমাদরে স্কাউট থাকবে, আমাদের কর্মীরা থাকবে। এরা মানুষকে দিক-নির্দেশনা দেবে।’
যাত্রী উঠানামায় ৯টি স্টেশনের সিঁড়ি তৈরির কাজ শেষ হলেও বাকি রয়ে গেছে শেওড়া পাড়া স্টেশনের কাজ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শেওড়া পাড়ায় একটা বাদ আছে। কারণ সেখানে একটা ব্যাংক আছে। আর ব্যাংক চাইলইে সরানো যায় না। তবে ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া ডিসি অফিস করছে।’
সব দেখে শুনে, সব চ্যালেঞ্জ জয় করেই মেট্রোরেল পূর্ণরূপে চালু করার কথা জানালেন এমএএন ছিদ্দিক। তিনি বলেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত হলো আগামী ৩ মাস বা আগামী ২৬ মার্চ আমরা মেট্রোরেলকে পূর্ণ অপারশেনে নিয়ে যাব। এর মধ্যইে সাধারণ মানুষ মেট্রোরেলে অভ্যস্ত হয়ে যাবে এটা আমাদের বিশ্বাস।’