করোনা ভাইরাস রোধে হ্যান্ড স্যানিটাইজার উত্পাদন করে বিনামূল্যে বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টার ও ফার্মেসি অনুষদ। প্রাথমিকভাবে ঝুঁকিতে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি আবাসিক হল, অনুষদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে তা বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। প্রাথমিকভাবে ৫০০ বোতল হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু এটি বেড়ে গিয়ে গত কয়েক দিনে প্রায় ১ হাজারের মতো বোতল উত্পাদন করতে সক্ষম হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ রিসার্চ সেন্টারটি। এসব হ্যান্ড স্যানিটাইজার শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণও করা হচ্ছে।
ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, বিভাগের নিজস্ব অর্থায়নে প্রাথমিকভাবে ৫০০ বোতল হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। পরবর্তীতে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কথা চিন্তা করে এর পরিমাণ বাড়ানো হয়। এখন পর্যন্ত ১ হাজার বোতল প্রস্তুত করা হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা মজুত থাকা কেমিক্যাল দিয়ে আড়াই হাজার বোতল পর্যন্ত আমরা তৈরি করতে পারব। এ উদ্যোগে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিভাগের শিক্ষক মো. আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ ও হলগুলোতে আমরা বিতরণ শুরু করব। হল প্রশাসন ও হল সংসদের মাধ্যমে এটি বিতরণ করা হবে। বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য ব্যাপকভাবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির দরকার হলে আমরা তা করতে রাজি আছি। আবদুল মুহিত বলেন, বায়োমেডিক্যাল রিসার্স সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক এবং ফার্মেসি অনুষদের ডিন অধ্যাপক এস এম আব্দুর রহমানের পরামর্শ এবং সহযোগিতায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে এসব হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করেছি। উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে সব ধরনের গবেষণার জন্য প্রস্তুত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এ ধরনের প্রকল্পে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যে কোনো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন।
বিসিএসআইআর: অন্যদিকে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর)-এর প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রস্তুত করছে হ্যান্ড সেনিটাইজার। গতকাল বিসিএসআইআরের কনফারেন্স কক্ষে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ১ লাখ টাকা অনুদানের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরু করেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং অধীনস্থ সংস্থাসমূহ এ কাজে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করবে। মন্ত্রী বলেন, প্রাথমিকভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল এবং স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে এ কার্যক্রম শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, জয়পুরহাটে আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে এ কার্যক্রম শুরু হবে। বিসিএসআইআরের চেয়ারম্যান মো. ফারুক আহমেদ বলেন, বিসিএসআইআরের সব ইউনিট ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও জয়পুরহাট একসঙ্গে হ্যান্ড সেনিটাইজার প্রস্তুতের কাজ করবে।
ইইডা: এছাড়াও ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ (ইউডা)-এর ফার্মেসি বিভাগ বিনামূল্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এ লক্ষ্যে গতকাল ফার্মেসি বিভাগের ল্যাবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি প্রফেসর মুজিব খান। এ সময় তিনি বলেন, বাজারে হ্যান্ড সেনিটাইজারের স্বল্পতা এবং মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় বিনামূল্যে হ্যান্ড সেনিটাইজার বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। লাইফ সাইন্স অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ বলেন, হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দর, মসজিদ এবং গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে বিনা মূল্যে বিতরণ করার উদ্যোগ নিয়েছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো যোগাযোগ করলে আমরা তা সরবরাহ করব। গতকাল ক্যাম্পাস সংলগ্ন সাতমসজিদ রোডে বিভিন্ন শ্রেণির লোকের মধ্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করা হয় এবং আগামীকাল শনিবার অনুরূপ কর্মসূচি পালন করা হবে।