সংগীত সাগর। যার সংগীতের প্রতিটি শাখায় বিচরণ ছিল। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় আজ থেকে একশ বছর আগে আজেকর দিনে ভারতের বারানসীতে জম্মগ্রহণ করেছিলেন। সুর সংগীতের জগতে ধ্রুবলোকের ধ্রুবতারার জম্মশতবর্ষে নারদ বার্তার পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে একজন সংগীত শ্রোতা ও হেমন্তভক্ত চন্দন ঘোষ শুভ লিখেছেন আজকের আয়োজনে।
চন্দন ঘোষ শুভ
একজন মানুষের শিল্পী হয়ে বাঁচতে হলে দুই-তিনটা গানই সম্ভবত যথেষ্ট। অথচ বাংলা সঙ্গীত জগতে তিনি দিয়ে গেছেন দু-হাত ভরে। প্রযোজক, পরিচালক, শিল্পী। কি ছিল না তাঁর মধ্যে?
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ পেলেও তাঁর ইচ্ছা তিনি সঙ্গীতেই ফিরে যাবেন। ১৯৩৭সালে যখন সংগীত জগতে প্রবেশ করেন তখন সংগীতের আরেক নক্ষত্র পঙ্কজ মল্লিকের রাস চলছে যেন। তার কিছুদিন পর হেমন্ত বাবুকেই অনেকেই ছোটা পঙ্কজ বা ছোট পঙ্কজ বলে ডাকতেন। মিউজিকের ট্রু ব্যারিটোন বলে যদি কোন শব্দ থেকে থাকে তবে সেই শব্দের রুপকার, নায়ক বা রচিয়তা হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। কখনও উনাকে মিউজিক নিয়ে স্ট্রাগল করতে হয়নি।
সেসময় দক্ষিণে সিনেমার প্রচলন এতোটা ছিল না। হিন্দি আর বাংলা। সেখানে যেন শচীন দেবের পাশাপাশি নিজেকে উজার করে দিয়ে গেছেন। উনার শীর্ষ ১০টা গান সিলেক্ট করতে আমি বিগত ১৬বছর সময় নষ্ট করার পর বুঝেছি নদীর ঢেউ গুনা আর হেমন্ত বাবুর গানের লিস্ট করা দুটোই সমান কথা। রবীন্দ্র সঙ্গীত, মেলোডি বা কীর্তন যাই হোক হেমন্ত বাবু হিন্দি বা বাংলা দুই সিনেমাতেই সমানভাবে সবার কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। উনি একটা কথা প্রায়ই বলতেন “গানকে বেশি প্যাঁচিওনা, যত সহজ করবে ততই শ্রুতিমধুর হবে”। হ্যাঁ সেই কথার প্রতিফলন প্রতিটা গানেই রেখেছিলেন।
সিনেমার ডিরেকশন দিচ্ছেন পরিচালক সেখানে পরিচালকের যেমন কৃতিত্ব তেমনই সংগীত পরিচালকেরও কৃতিত্ব থাকে।
“দ্বীপ জ্বেলে যাই” ছায়াছবির প্রধান চরিত্র মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছেন তখনই কি দারুণ অভিব্যক্তি নিয়ে টিউন হলো ” এই রাত তোমার আমার..
অথবা স্বীদ্ধার্থ মুভিতে গৌতম ছুটে চলেছেন কি সুন্দর গ্রামের পথ দিয়ে এসময় টিউন হচ্ছে “পথের ক্লান্তি ভুলে…
অনেকেই বলে থাকেন উত্তম-সূচিত্রা আর হেমন্ত বাবুর ত্রয়ী জুটির বাংলা সিনেমা কখনও ভুলবেনা।
সমগ্র ভারতের বা বাংলা সংগীতে যেকজন সঙ্গীত শিল্পী বা পরিচালক আসুক না কেন। হেমন্ত বাবুই সর্বকালের সেরা পরিচালক।
৫০এর দশকে যে নক্ষত্র এসেছিলেন তিনি এখনও সতেজ, তরুণ। তবে এখানে অবশ্যই সলীল চৌধুরী বা গৌরী প্রসন্ন মজুমদারের অবদান কখনোই ভুলে গেলে চলবেনা।
হেমন্ত বাবু রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কয়েক লাইন কোন এক সাক্ষাতকারে লিখে গিয়েছিলেন সেখান এক লাইন কেটে নিয়েছি যেটি হয়ত হেমন্ত বাবুর জন্যও সমান কার্যকর।
“এই বুড়ো পৃথিবীকে ইচ্ছে হয় জিজ্ঞাসা করি, বয়েস অনেক হল। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মতো এমন সর্বতোমুখী প্রতিভা আর দেখেছে একটা!”
শুভ জন্মদিন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।
আপনার জন্মদিনে ক্ষুদে এই সংগীত স্রোতার সামান্য নৈবেদ্য।
লেখক: সঙ্গীত অনুরাগী