নিজস্ব প্রতিবেদক, হিলিঃ
দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার হাতিশোঁও আদিবাসী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি এমপিও নীতিমালার শর্ত পূরণ করলেও এমপিওভূক্তির তালিকাতে প্রতিষ্ঠানটির নাম নেই। অথচ শর্ত পূরণ না করেও এমপিওভূক্তির তালিকাতে নাম উঠেছে একই উপজেলার অন্য একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের।
হাতিশোঁও আদিবাসী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর ১৯৯৬ সালে প্রথম পাঠদান অনুমতি এবং ২০০৪ সালে প্রথম একাডেমিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হয়। ২০১৮ সালের এমপিও নীতিমালার আলোকে কাম্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা, কাম্য পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ও কাম্য ফলাফলের হার থাকার পরও ২৩ অক্টোবর নির্বাচিত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের এমপিওভূক্তির তালিকাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির নাম না থাকায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-কর্মচারীসহ এলাকার সুধীজন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক আফতাবুজ্জামান তাজ জানান, আমরা শিক্ষক-কর্মচারীগণ দীর্ঘদিন যাবত বিনা বেতনে, অনাহারে-অর্ধাহারে, শত সমস্যা ও বিভিন্ন প্রতিকুলতার মধ্যে থেকেও কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করে আসছি।
তিনি আরো জানান, শিক্ষকগণ অর্থাভাবে ২০১০ সালে এমপিওভূক্তির তালিকাতে প্রতিষ্ঠানটির নাম উঠাতে ব্যর্থ হওয়ার পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংস না করে ফি বছর এমপিও হবে ভেবে হাল না ছেড়ে, বিদ্ধস্ত মন নিয়ে পূনরায় আশায় বুক বাঁধেন। টানা ৯ টি বছর অতিবাহিত হওয়ার পর ২০১৮ সালের আগষ্ট মাসে প্রতিষ্ঠানটি আবারো এমপিওভূক্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করে। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী দৃঢ় চিত্তে জানান দেন যে, একমাত্র যোগ্যতার ভিত্তিতেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভূক্ত করা হবে।
শিক্ষক-কর্মচারীরা হালে পানি পান এবং নিশ্চিত হন কোন প্রকার অর্থ বিয়োগ ছাড়াই এ প্রতিষ্ঠানটি এবার এমপিওভূক্ত হতে পারে। কারণ ২০১৮ সালের পাবলিক পরীক্ষায় (জেএসসি) পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৬১ জন উত্তীর্ণ ৫১ জন (আবেদনের সময় এ ফলাফল যুক্ত হয়নি), ২০১৭ সালে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৫৩ জন উত্তীর্ণ ৪৭ জন, ২০১৬ সালে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৮ জন উত্তীর্ণ ৪৫ জন, ২০১৫ সালে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৬ জন উত্তীর্ণ ১৫ জন, ২০১৪ সালে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২৩ জন উত্তীর্ণ ২২ জন।
এমন ফলাফলের ভিত্তিতেও এমপিওভূক্তির তালিকাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির নাম নেই অথচ এমপিওভূক্তির শর্ত পূরণ না করেও তালিকাতে স্থান পেয়েছে একই উপজেলার অন্য একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তালিকাতে ঐ প্রতিষ্ঠানের স্থান পাওয়াতে কোন সমস্যা নেই, হয়তো এমপিও নীতিমালার ২২ নম্বর ধারা অনুযায়ী (শিক্ষায় অনগ্রসর, সামাজিকভাবে অনগ্রসর গোষ্ঠী, নারী শিক্ষা, পাহাড়ি, হাওর-বাওর, চরাঞ্চল, ভৌগোলিকভাবে অসুবিধাজনক, প্রতিবন্ধী ও বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনায় শর্ত শিথিল করা যেতে পারে) তালিকাতে প্রতিষ্ঠানটি স্থান পেয়েছে।
মূল কথা, একটি আদিবাসী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও নীতিমালার শর্ত পূরণ করার পরও এমপিওভূক্তির তালিকাতে স্থান না পাওয়া। কারণ একই উপজেলায় কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও নীতিমালার শর্ত পূরণ না করে এমপিও নীতিমালার ২২ ধারা অনুযায়ী শর্ত শিথিল করে এমপিওভূক্তির তালিকাতে স্থান পেল অথচ একটি আদিবাসী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও নীতিমালার শর্ত পূরণ করল কিন্তু এমপিওভূক্তির তালিকাতে স্থান পেলনা।
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জানান, হাকিমপুর উপজেলার নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীর সংখ্যা, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ও ফলাফলের হার খুব ভালো।