নিজস্ব প্রতিবেদক, হিলি:
জীবন জিবিকার তাগিদে অনেকেই বেছে নেয় হরেক রকম পেশা। তেমনি হিলিতে বাজারের বিভিন্ন বস্তার আড়ৎ গুলোতে বস্তা সেলাইয়ের কাজ করছেন শতাধিক নারী-পুরুষ শ্রমিক। যে যত দ্রুত কাজ করতে পারবে তার উপার্যন তত বেশি। আর এই বস্তা সেলাইয়ের কাজ করেই চলে তাদের সংসার।
হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে প্রতিদিন আমদানি হয় বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী। প্রত্যেক আমদানি কারকদের রয়েছে পণ্য রাখার গুদাম। এই সব গুদামে প্রয়োজন হয় নতুন-পুরাতন বস্তার। আর এই সব বস্তার যোগান দিতেই হিলিতে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু বস্তার আড়ত।
বন্দরের বস্তার আড়ত গুলো ঘুরে দেখা গেছে, ছেড়াফাটা ও পুরনো বস্তা সেলাই করছে নারী-পুরুষ শ্রমিকরা। আড়তের বারান্দায় অথবা ঘরে বসেই সুই, সুতলি দিয়ে সেলাই করছেন নানা প্রকার বস্তা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে তাদের এই কর্ম ব্যস্ততা। দ্রুত হাত চালিয়ে যে যত সেলাই করবে তার উপার্জন হবে তত বেশি। বেশি ছেড়াফাটা বস্তা সেলাইয়ে মজুরি আড়াই থেকে তিন টাকা, অল্প ছেড়াফাটা বস্তা দেড় থেকে দুই টাকা আর সামান্য ছেড়াফাটা এক থেকে দেড় টাকা মজুরি পায় তারা।
কথা হয় বস্তা সেলাই শ্রমিক মিলন সরকারের সাথে সে বলেন, আমি সাত বছর যাবৎ এই বস্তা সেলাইয়ের কাজ করে আসছি। সংসারে দুই ছেলে, মা-বাবা, ছোট ভাই-বোন ও স্ত্রীসহ ৯ জন খানেয়ালা (সদস্য)। বোনের এখনও বিয়ে দিতে পারিনি। আমার উপর পুরো সংসারের দায়িত্ব। একদিন বসে থাকলে সংসার চলে না। তাই সংসারের এতোগুলো মানুষের চাহিদা মেটাতে আমাকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। আমি নিজেকে একটা যান্ত্রিক মানুষ মনে করি। প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ পিচ ছেড়াফাটা বস্তা সেলাই করি। তা থেকে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা প্রতিদিন উপর্জন হয়। কষ্ট হলেও চলছি কোন রকমে।
রেহেনা বেওয়া নামের একজন নারী শ্রমিকের সাথে কথা হলো তিনি বলেন, প্রায় চার বছর হলো আমার স্বামী মারা গেছে। বস্তা সেলাইয়ের কাজ করেই দুই মেয়েকে নিয়ে চলছি। পুরুষদের মতো আমি ওতো জোরেসরে হাত চালাইতে পারি না। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করি। প্রতিদিন ১০০ থেকে ১২০ টি বস্তা সেলাই করি। তাতে রোজগার হয় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। একটা নাতি আমার কাছে থাকে। ছোট মেয়ে এইবার এইচএসসি পরীক্ষা দেবে। মানুষের বাড়িতে ভাড়া থাকি।
কথা হয় বস্তা আড়ৎদার আব্দুল মালেকের সাথে। তিনি বলেন, আমার আড়তে বর্তমান চার জন শ্রমিক কাজ করছেন। তারা প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা মজুরি পেয়ে থাকে। সারাদিন পরিশ্রম শেষে তাদের ন্যায মজুরি প্রতিদিন দিতে হয়। তাদের সব সময় ভালমন্দ আমি দেখি। কোন সমস্যা হলে সমাধানের চেষ্টা করে আসছি।